ভাড়া নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড

সিএনজির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ সারা দেশের পরিবহন সেক্টরে শুরু হয়েছে তুঘলকি কাণ্ড। গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের কাছে যাত্রীরা হয়ে পড়েছেন জিম্মি। কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কাই তাঁরা করছেন না। সরকারের সঙ্গে কোনো রকম আলাপ-আলোচনা ছাড়াই গণপরিবহন মালিকরা বাস ভাড়া নিজেদের ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দিয়েছেন।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে ভাড়া বৃদ্ধির সম্পর্ক থাকে বটে, তবে জ্বালানির মূল্য কতটা বেড়েছে এর সঙ্গে ভাড়া বৃদ্ধির সামঞ্জস্যের বিষয়টি অবশ্যই জরুরি। কিন্তু দেখা গেছে, এসবের ধারই ধারছেন না গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তাঁদের এই খেয়ালখুশি মতো ভাড়া আদায় এবং এর জন্য যাত্রীদের নাজেহাল করার বিষয়টি নৈরাজ্য ছাড়া কিছুই নয়।
সরকারের দায়িত্ব ছিল সিএনজির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পাশাপাশি সিএনজিচালিত যাত্রী পরিবহনগুলোর ভাড়ার বিষয়টি আমলে নেওয়া এবং ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান গতকাল জানিয়েছেন, যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন কোন যুক্তিতে? তাঁরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো ভাড়া যে পরিমাণে বাড়িয়েছেন, তা কোনো বিবেচনায়ই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কিন্তু তিন দিন ধরে তাঁরা তা-ই আদায় করছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাত্রীদের দিকে রীতিমতো মারমুখো হয়ে উঠছেন। ১০ টাকার ভাড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। অসহায় যাত্রীরা প্রতিবাদ করতে গেলে পরিবহনের হেলপার এবং বাস কাউন্টারগুলোতে অবস্থানকারী মাস্তানদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশার ক্ষেত্রেও একই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাদের যাত্রী হয়রানি সীমাহীন পর্যায়ে পেঁৗছেছে। কিছুদিন আগে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্যাঙ্কি্যাবের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। তার পরও তারা মিটারে চলতে নারাজ। এই পরিস্থিতি সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার শামিল। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে সিএনজির মূল্যবৃদ্ধি এ ক্ষেত্রে আরো তাক লাগিয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা এমনিতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই স্বেচ্ছাচারীদের যে কাণ্ডকীর্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক এবং অশুভ লক্ষণ।
ভাড়া যদি বাড়াতে হয়, তাহলে অবশ্যই সরকারের সঙ্গে আলোচনাক্রমে যুক্তিযুক্তভাবেই তা করতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে কোনো রকম সময়ক্ষেপণ না করে পদক্ষেপ নিতে হবে। শৃঙ্খলা ও নিয়মনীতি ভঙ্গ করার রেওয়াজ যেভাবে ক্রমপুষ্ট হচ্ছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ট্যাঙ্ িও অটোরিকশার ভাড়া যদি আবারও পুনর্নির্ধারণ করতে হয় তাও হওয়া চাই সংগতিপূর্ণ। তারা যাতে মিটারে চলে এবং যাত্রীদের চাহিদা মতো গন্তব্যে যেতে বাধ্য থাকে সে ব্যবস্থাও পাকাপাকি করতে হবে এবং এ জন্য দরকার সার্বক্ষণিক মনিটরিং। সরকার প্রয়োজনে সিএনজির মূল্য বাড়াতেই পারে এবং এই মূল্যবৃদ্ধি কতটা যৌক্তিক-অযৌক্তিক, তা আলাদা বিষয়। যদিও কয়েক দিন আগে এর মূল্যবৃদ্ধি এখনই না করার ব্যাপারে নানা মহল থেকে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছিল, কিন্তু তা সরকারের কাছে উপেক্ষিত হয়েছে। সরকারের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে যে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে, তা একেবারেই অনভিপ্রেত এবং প্রশ্নবোধকও। যাত্রী ভাড়া নির্ধারণের ব্যাপারে অবিলম্বে সব পক্ষকে নিয়ে বসে একটি নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। একই সঙ্গে স্বেচ্ছাচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া দরকার। অনিয়ম যাতে কোনোভাবেই নিয়মে পরিণত না হয় এ ব্যাপারে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি চাই।

No comments

Powered by Blogger.