মৈত্রীবন্ধন-গানে গানে বন্ধন by মেহেদী মাসুদ

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সম্প্রতি রুনা লায়লা, ফরিদা পারভীন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও ফেরদৌস আরা গান করেছেন মৈত্রীবন্ধন উত্সবে। ভারতের কলকাতায় এই উত্সব আয়োজন করে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তাঁদের সঙ্গে ছিল প্রথম আলো। আজ বাংলাদেশের চারজন বরেণ্য শিল্পীর সেই উত্সবের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে।
‘আমি তো কলকাতায় অনেক গান করেছি। কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতা একেবারেই অন্যরকম—গানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মৈত্রীর বন্ধন দৃঢ় করা। আমন্ত্রণটা পেয়েই মুগ্ধ হয়েছিলাম। দমদম বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে রাস্তার দুই পাশে বড় বড় বিলবোর্ড দেখে অবাক না হয়ে উপায় ছিল না। বাংলাদেশের সব শিল্পীর বড় বড় ছবি আর মৈত্রীবন্ধন উত্সবের কথা। ছিল ভারতীয় শিল্পীদের ছবিও। পত্রিকার পাতায় পাতায় উত্সব নিয়ে খবর আর বিজ্ঞাপন। সরকার এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় তো বটেই, উত্সব নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখেছি দারুণ আগ্রহ। শুধু গান নয়, এই উত্সবে ছিল আরও নানা কিছু।’ বললেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
২৩ ফেব্রুয়ারি। কলকাতার টালিগঞ্জ ক্লাব মাঠের উন্মুক্ত মঞ্চে সন্ধ্যায় উদ্বোধন হলো ‘মৈত্রীবন্ধন উত্সব’। আয়োজন করে ভারতের শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া। তাদের সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের প্রথম আলো। উত্সবের অন্য দুটি ভেন্যু কলকাতার ঐতিহাসিক প্রিন্সেপঘাট ও নজরুল মঞ্চ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শিল্পী ছিলেন বাংলাদেশের রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং ভারতের লোপামুদ্রা মিত্র। বন্যা বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে আমরা দুজনই গেয়েছি রবীন্দ্রনাথের গান। শুরুটা করেছিল লোপা। পরে ও আমাকে মঞ্চে নিয়ে আসে।’
কলকাতায় মৈত্রীবন্ধন উত্সব অনুষ্ঠিত হয় ছয় দিন। দ্বিতীয় দিন থেকে চতুর্থ দিন অনুষ্ঠান হয়েছে প্রিন্সেপঘাটে। এখানে গান করেছেন রুনা লায়লা ও ঊষা উত্থুপ, ফেরদৌস আরা ও পঙ্কজ উদাস এবং ফরিদা পারভীন ও পার্বতী বাউল। অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আসার পর সবার সঙ্গে কথা হলো মুঠোফোনে।
জানতে চেয়েছি তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা।
কলকাতা থেকে ফিরে বাসায় কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন রুনা লায়লা। এরপর চলে যান দুবাইয়ে, গান নিয়ে একটি রিয়ালিটি শোর বিচারক তিনি। ঢাকা ছাড়ার আগে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
এই আয়োজনে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন হলো? রুনা বললেন, ‘পুরোটা আমার ধারণার বাইরে। বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট করতে শুধু গান নিয়ে এমন একটি আয়োজন করা যায়, ভাবতেই পারিনি। আর উত্সবটি সফল করার জন্য, এই উত্সবের কথা সবাইকে জানানোর জন্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রচার ছিল চোখে পড়ার মতো। আমার তো মনে হয়, যিনি পত্রিকা পড়েন তিনিই এই উত্সবের কথা জেনেছেন।’
রুনা লায়লা গান করেছেন তৃতীয় দিন। একই মঞ্চে রুনার আগে গান করেন ঊষা উত্থুপ। রুনা জানান, নিজের খুব পরিচিত গানগুলোই সেখানে গেয়েছেন তিনি।
সব কটি অনুষ্ঠানই ছিল আলাদা আলাদা মেজাজের। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দ্বিতীয় দিন ফেরদৌস আরা গাইলেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতিও। গেয়েছেন ‘পরিবানুর গান’—‘ওই যে দেখা যায়রে, হিজলতলীর গাঁয়রে’। ফেরদৌস আরা বললেন, ‘এরপর চলে যাই নজরুলের গানে। নজরুলের নানান অঙ্গের গান করেছি। গানগুলোর মধ্যে বৈচিত্র্য রাখার চেষ্টা করেছি। সেদিন আমি গান করেছি প্রায় ঘণ্টা দেড়েক সময়।’
আর অভিজ্ঞতার কথা বললেন এভাবে, ‘আমি অনেক দেশে অনুষ্ঠান করেছি। গান করেছি, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। পুরস্কারও পেয়েছি। কিন্তু এবার মনে হলো, গানের মধ্য দিয়ে আমাদের এই দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হতে পারে, নিবিড় হবে, তৈরি হবে অটুট বন্ধন। মঞ্চে আমাকে নিয়ে যান পঙ্কজ উদাস। এরপর যতক্ষণ মঞ্চে ছিলাম, পুরোটা সময় ওই অনুভূতিটাই কাজ করেছে আমার মধ্যে।’
চতুর্থ দিন প্রিন্সেপঘাটের মঞ্চে ছিল লালন আর বাউল গান। শিল্পী বাংলাদেশের ফরিদা পারভীন আর ভারতের পার্বতী বাউল। ফরিদা পারভীন বললেন, ‘রুনা লায়লা, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা আর ফেরদৌস আরাকে তো কলকাতার দর্শকেরা চেনেন। তাঁরা আমার গানও শুনেছেন। এবার আমি গান শুনিয়ে যে তৃপ্তি পেয়েছি, তা মনে হয় আগে কখনো পাইনি। বন্ধুর জন্য গান করছি, তাও আবার লালনের গান—নিজের মধ্যে সে এক অন্য অনুভূতি। বলে বোঝানো যাবে না।’
ফরিদা পারভীনের গানের ফাঁকে ফাঁকে গাজী আবদুল হাকিমের বাঁশিও মুগ্ধ করেছে সবাইকে।
আয়োজকদের জন্য ফরিদা পারভীন বললেন, ‘এমন আয়োজন বেশি বেশি হওয়া প্রয়োজন। গানই পারে সব হিংসা-বিদ্বেষ-ক্ষোভ-অস্থিরতা দূর করে এক সুন্দর আগামী উপহার দিতে।’
উত্সবের পরের দুটি পরিবেশনা ছিল নজরুল মঞ্চে। আর এখানে গান করেন মাইলস এবং জেমস ও নগর বাউল।

No comments

Powered by Blogger.