শোভাযাত্রায় যোগ দিলেন সরকারি কর্মচারীরা-এটা রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা : অর্থমন্ত্রী

সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সচিবালয়ের কর্মচারীরা গতকাল বুধবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ এবং বাংলাদেশ পোস্ট অফিস কর্মচারী সমিতির নেতারা ব্যানারসহ এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন।


রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশ নেওয়ার বিরোধিতা করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, 'এটা রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলারই বহিঃপ্রকাশ।'
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে গতকাল আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রার আগে অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন। রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নিচ্ছেন বলে সংবাদপত্রে খবর ছাপা হয়েছে। এটা উচিত কি না?
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া উচিত নয়। কিন্তু জিয়া পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ কে নিয়ন্ত্রণ করে? এটা রাষ্ট্রীয় ইনডিসিপ্লিনেরই (বিশৃঙ্খলা) একটি বহিঃপ্রকাশ।'
গতকাল কালের কণ্ঠসহ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সরকারি কর্মচারীদের শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার খবর প্রকাশিত হয়, যা সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল। বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা সকাল থেকেই শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য দুপুর সোয়া ২টায় সচিবালয় কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির কার্যালয় থেকে তাঁরা বের হন। হাইকোর্টের সামনে গিয়ে নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানার উত্তোলন করে মিছিলসহকারে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যান তাঁরা।
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মো. রুহুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা ব্যানার নিয়েই র‌্যালিতে অংশ নিলাম। লুকোচুরি করে কোনো লাভ নেই।' এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি হিরণ মিয়া। তিনি বলেন, 'বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠন করতে পারলে আমাদের চাকরি থাকবে না। এর আগেও বিএনপি সরকার আমাদের চাকরিচ্যুত করেছিল। তারা আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে একই কাণ্ড ঘটাবে। তাই আমাদের হারানোর কিছু নেই।'
আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেসব সরকারি কর্মচারী অংশ নিয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, 'বিষয়টি আমার অজানা। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।'
উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ সচিবালয় সমবায় সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-১ (উপসচিব) খাইরুল ইসলাম সচিবালয়ের কর্মচারীদের আওয়ামী লীগের ৭ মার্চের শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আগামী ১২ মার্চ বিএনপির মহাসমাবেশে সচিবালয়ের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে যোগ না দিতে পারেন সে জন্য মন্ত্রণালয়ভিত্তিক তালিকা করাসহ বিরোধী দল সমর্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর নজরদারির নির্দেশ দেন।
'সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধি, ১৯৭৯'-এর বিধি ২৫-এর উপবিধি-১-এ বলা হয়েছে, 'কোন সরকারি কর্মচারী বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক আন্দোলনে অথবা বাংলাদেশবিষয়ক কোন ব্যাপারে অংশগ্রহণ করিতে, সাহায্যার্থে কোন চাঁদা দিতে বা যে কোনভাবে সহযোগিতা করিতে পারিবেন না।'

No comments

Powered by Blogger.