জামায়াতকে নিয়েই ভয়, ঢাকায় জড়ো হচ্ছেন নেতারা-মতিঝিল-পল্টনে আবাসিক হোটেল বন্ধ রাখার নির্দেশ! by ওমর ফারুক

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশ সামনে রেখে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও কুমিল্লা থেকে জামায়াতের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী গতকাল বুধবার পর্যন্ত ঢাকায় পৌঁছেছেন। সমাবেশের আগের কয়েক দিন তাঁরা ঢাকায় সাধারণ কর্মীদের উৎসাহ জোগাবেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।


এ ছাড়া ঢাকার বাইরেও কর্মীদের মহাসমাবেশে যোগদানের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করছেন স্থানীয় নেতারা।
মহাসমাবেশ ঘিরে জঙ্গি হামলা ও নাশকতা হতে পারে- এমন আশঙ্কা রয়েছে সরকারি মহলের। নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, জামায়াতকে নিয়েই যত ভয়। নাশকতার তথ্য থাকার কারণ দেখিয়ে এর আগে ২৯ জানুয়ারি বিএনপির গণমিছিলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। গণমিছিলের আগে গত ১৮ ডিসেম্বর মতিঝিল এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছিল জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। তারা পুলিশের কাছ থেকে একটি অস্ত্রও ছিনিয়ে নিয়েছিল।
অন্যদিকে মতিঝিল ও পল্টন এলাকার আবাসিক হোটেলগুলো পুলিশ চার দিন বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকার হোটেলেও পরিচিত লোক ছাড়া নতুন কোনো লোককে কক্ষ ভাড়া দিতে নিষেধ করা হয়েছে। পুলিশ অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত ও শিবিরের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছেন। তাঁরা ঢাকায় থাকা জামায়াত-শিবিরকর্মীদের বাসায় উঠেছেন। মহাসমাবেশ সফল করতে ঢাকার কর্মীরা যাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় সে বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করছেন।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. শাহাবুদ্দিন গতকাল বিকেলে টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এখন জেলে। এ কারণে বিভিন্ন এলাকায় যাঁরা নেতৃস্থানীয় আছেন, তাঁরাই উদ্বুদ্ধ করছেন। সমাবেশের আগ পর্যন্ত উদ্বুদ্ধ করার কাজ চলবে। তিনি আরো বলেন, 'আমরা ১২ তারিখ চৌদ্দগ্রাম থেকে চার-পাঁচ হাজার কর্মী ঢাকায় যাব। এখন পর্যন্ত কেউ ঢাকায় যায়নি।'
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ডিবির উপকমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, সমাবেশের আরো কয়েক দিন বাকি আছে। এখন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হোটেল বন্ধ রাখার নির্দেশনা : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এড়াতে রাজধানীর পল্টন ও মতিঝিল এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোর মালিক পক্ষকে ৯ মার্চ থেকে চার দিন হোটেল বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। অন্য এলাকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে বোর্ডার পরিচয় দিয়ে মতিঝিল থানাধীন ফকিরাপুলের কালভার্ট রোডের ২০৩/২ নম্বর ভবনে হোটেল উপকূলে (আবাসিক) গিয়ে ৯ মার্চ দুটো কক্ষ ভাড়া চাইলে হোটেলের লোকজন প্রতিবেদকের গ্রামের বাড়ি ও রুম ভাড়া নেওয়ার কারণ জানতে চান। একপর্যায়ে তাঁরা জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে ৯ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত হোটেল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশেই ফকিরাপুলের ১৯৪ নম্বর ভবনে আবাসিক 'হোটেল নিউ মুন'-এ গিয়েও একই চিত্র পাওয়া যায়। ওই হোটেলের ম্যানেজার মোস্তাক অভিযোগ করলেন, মঙ্গলবার এক পুলিশ কর্মকর্তা গিয়ে তাঁদের বলেছেন ৯ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত হোটেল বন্ধ রাখতে। তিনি জানান, তাঁর জানা মতে, আশপাশের সব হোটেলকেই একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মোস্তাক বলেন, এক দিন হোটেল বন্ধ থাকলে অন্তত ১৫ হাজার টাকা ক্ষতি হবে।
রমনা থানার ৮২ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়কের ৮২ নম্বর ভবনে হোটেল আল আতিকের স্টাফ ইলিয়াস জানান, তাঁদের হোটেল মালিককে পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে, অপরিচিত কোনো লোককে এই ক'দিন কক্ষ ভাড়া না দিতে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমাদের হোটেলে বেশির ভাগ পরিচিত জনরাই আসেন।'
শিল্পাঞ্চল থানার ৬০ নম্বর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণির শাহীন হোটেলের ম্যানেজার মোস্তাফিজ জানান, ১২ তারিখের সমাবেশের কারণে পুলিশের তরফ থেকে সন্দেহভাজন লোকজনকে হোটেল ভাড়া দিতে নিষেধ করা হয়েছে। একই ধরনের কথা জানালেন গুলশান থানার মহাখালীর আল আমানত হোটেলের স্টাফ রাসেল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হোটেলের লোকজনের অভিযোগ সত্য নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মতিঝিল এলাকায় কাউকে নির্দেশ দিইনি হোটেল বন্ধ রাখার জন্য।'
নিরাপত্তা নিয়ে হিমশিম : বর্তমানে বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞের মামলার বিচারকাজ চলছে বকসীবাজারের উমেশ দত্ত রোডের অস্থায়ী আদালতে। পুরনো হাইকোর্ট ভবনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারও চলছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশের একটি ভবনে। তিনটি স্পর্শকাতর মামলা চলার সময় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আয়োজন করতে হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। এরই মধ্যে ১১ মার্চ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এশিয়াকাপ ক্রিকেট। এ খেলাকে কেন্দ্র করেও নিতে হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ অবস্থায় ১২ মার্চ বিরোধী দলের মহাসমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
মহাসমাবেশ ঘিরে নাশকতার আশঙ্কায় দেশব্যাপী গোয়েন্দারাও তৎপর। এ ছাড়া কতসংখ্যক লোক মহাসমাবেশে যোগ দেবে, তার সঠিক হিসাব নেই কারো কাছেই। ফলে নাশকতা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা প্রতিহত করতে পারবে কি না সে নিয়েও দুর্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে পুলিশ ঢাকায় আনা হতে পারে বলে এক পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা আভাস দেন, জঙ্গি হামলার সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে ২৯ জানুয়ারির গণমিছিলের মতো মহাসমাবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.