ছবি কথা বলে, বলে কেবলই ব্যর্থতার কথা-শুভাঢ্যা খালের ত্রিকালদর্শন

ছবি যদি সত্যিই কথা বলতে পারত, তাহলে গত বুধবারের প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় শুভাঢ্যা খালের তিনটি ছবি বলত, ধিক! শত ধিক! কোন আমলে বাংলাদেশ কেমন থাকে, তারই প্রতিচ্ছবি যেন এই তিনটি ছবি। নির্বাচিত আমলে দখলজর্জর, তত্ত্বাবধায়ক আমলে কিছুটা মুক্ত এবং আবার নির্বাচিত আমলে দখলাধীন অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছে খালটি।


রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের প্রতিপত্তির মুখে আইনের হাত যে দুর্বল থাকে, এ সত্য তো অস্বীকার করা যাবে না। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টোটাই।
প্রথম ছবিটি ২০০৬ সালের, দেশে তখন চলছে বিএনপি জোট সরকারের শাসন। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ শুভাঢ্যা খালটি দখলদারদের টিনের স্থাপনার কারণে নালায় পরিণত হয়েছে এবং সেই নালা দিয়ে বইছে বারোয়ারি বর্জ্য পদার্থ। দ্বিতীয় ছবিটি ২০০৮ সালের, অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তখন দেশ শাসনের দায়িত্বে। সে সময় মহাসমারোহে ঢাকঢোল পিটিয়ে খালটির দুই পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। আবর্জনা পরিষ্কার করায় খালের পানিও কালো থেকে ক্রমশ স্বচ্ছ হয়ে উঠতে থাকে। কিন্তু ২০১১ সালে এসে, দেশে যখন চলছে বিপুল আসনে নির্বাচিত সরকার, তখন খালটির অবস্থা হয়েছে আরও খারাপ। ইতিমধ্যে টিনের স্থাপনার জায়গায় পাকা স্থাপনা উঠেছে, পানি হয়ে উঠেছে বিষাক্ত, কালো ও দুর্গন্ধময়। খাল ভরাট করে এমনকি রাস্তাও তৈরি হয়েছে।
দেশের অবস্থাই বলে দেয় সরকার কেমন, আইনের শাসন কেমন। তা যদি হয়, তাহলে বলতে হয়, বর্তমান নির্বাচিত সরকারের কাছে কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের থেকেও, এমনকি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের থেকেও ভালো আচরণ প্রত্যাশিত ছিল না? জরুরি অবস্থায় অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার যা করতে পারে, তার থেকে বেশি কিছু করার দায়িত্ব কি নয় বর্তমান সরকারের? এই লজ্জা সরকারের কর্তাব্যক্তিদের। খালটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ এবং ভূমি দপ্তর কী বোধ করছে?
ন্যায়ের থেকে অন্যায়ের গতি বেশি। নির্বাচিত সরকারের মাত্র আড়াই বছরে অস্বাভাবিক দ্রুততায় যেভাবে চারতলা মার্কেট, দোতলা ভবন, খাল ভরাট করে রাস্তাসহ বহু রকম স্থাপনা তৈরি হয়েছে, তাতে বোঝা যায়, দখলদারেরা একমুহূর্তও বসে নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতাদের আগ্রহ এবং সরকারি প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়া ছাড়া এভাবে দীর্ঘ খালটি তছনছ করা সম্ভব হতো কি?
শুভাঢ্যা খালের ত্রিকালদর্শন মানে অনির্বাচিত সরকার বেশি শ্রেয়, তা মোটেই নয়। বরং আমরা চাই, খালটি স্থায়ীভাবে পুনরুদ্ধার করে, দখলদারদের শাস্তি দিয়ে নির্বাচিত সরকার গণতন্ত্রের মহিমা বুঝিয়ে দিক। জনপ্রতিনিধিরা যেদিন জনস্বার্থের রক্ষক হতে পারবেন, সেদিনই গণতন্ত্রও বাঁচবে এবং মানুষ ও নিসর্গ রক্ষা পাবে। কেননা, গণতন্ত্রও তখনই সার্থক, যখন আইনের শাসন তার অপরিহার্য অঙ্গ হয়।

No comments

Powered by Blogger.