পবিত্র কোরআনের আলো-পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত মূলত অনিশ্চয়তা ও হতাশার

২৩. ফালাম্মা-আনজা-হুম ইযা-হুম ইয়াব্গূনা ফিল আরদ্বি বিগাইরিল হাক্কি; ইয়া-আইয়্যুহান্না-ছু ইন্নামা- বাগইউকুম আ'লা-আনফুছিকুম্ মাতা-আ'ল হাইয়া-তিদ্ দুনইয়া-ছুম্মা ইলাইনা-মারজিউ'কুম ফানুনাবি্বউকুম বিমা-কুনতুম তা'মালূন।


২৪. ইন্নামা-মাছালুল হাইয়া-তিদ্ দুনইয়া-কামা-য়িন আনযালনা-হু মিনাচ্ছামা-য়ি ফাখ্তালাত্বা বিহি নাবা-তুল আরদ্বি মিম্মা-ইয়া'কুলুন্না-ছু ওয়ালআনআ'-ম; হাত্তা-ইযা- আখাযাতিল আরদ্বু যুখ্রুফাহা- ওয়ায্যাইয়্যানাত্ ওয়াযান্না আহ্লুহা আন্নাহুম ক্বা-দিরূনা আ'লাইহা- আতা-হা- আমরুনা- লাইলান আও নাহা-রান ফাজাআ'লনা-হা- হাসীদান কাআল্লাম তাগ্না বিলআমছ্; কাযা-লিকা নুফাস্সিলুল আ-ইয়া-তি লিক্বাওমিইঁ ইয়্যাতাফাক্কারূন। [সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৩-২৪]
অনুবাদ : ২৩. তবে যখন আল্লাহ তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে দেন তখন তারা খুব দ্রুতই পৃথিবীতে অবাধ্য আচরণ শুরু করে দেয়। হে মানুষ, প্রকৃতপক্ষে তোমাদের এ অবাধ্যতা খোদ তোমাদেরই বিরুদ্ধে যাচ্ছে। পার্থিব জীবন ধারণের জন্য তোমাদের কিছু উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। এরপর আমার কাছেই তোমাদের ফিরতে হবে। তখন আমি তোমাদের জানিয়ে দেব তোমরা জীবনে যা কিছু করেছ।
২৪. পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো কিছুটা এরকম। যেমন, আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলাম, এর মাধ্যমে ভূমিতে ঘন সবুজ গাছ-গাছড়া অঙ্কুরিত হলো_যা মানুষ ও জীব-জন্তুর খাদ্য। অবশেষে ফসলের ক্ষেত যখন নিজ শোভা ধারণ করে ও সেজেগুজে নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং এর মালিকরা মনে করতে থাকে তাদের ক্ষেতের ফসল বুঝি তাদের হাতে এসেই গেছে, তখন কোনো একদিন বা এক রাতে আমার নির্দেশে এমন এক দুর্যোগ বয়ে গেল এবং এমনভাবে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল যেন গতকালও এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। যারা বুদ্ধি-বিবেক কাজে লাগায় তাদের জন্য আমি এভাবেই নিদর্শনগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দেই।
ব্যাখ্যা : ২৩ নম্বর আয়াতের সারমর্ম মূলত ২১ নম্বর আয়াতের মতই, এখানে মানুষের এই প্রবণতাকেই ধিক্কার জানানো হয়েছে যখন মানুষ বিপদ- আপদে নিপতিত হলে আল্লাহকে স্মরণ করে। তাঁর কাছে উদ্ধার পাওয়ার জন্য বিনীত প্রার্থনা জানায়। আবার যখন তারা উদ্ধার পেয়ে যায় তখন ফের অবাধ্যতা শুরু করে দেয় এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। এখানে একটা চিরন্তন সত্য উচ্চারিত হয়েছে, তাদের এই অবাধ্যতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা প্রকৃত অর্থে তাদের নিজেদেরই বিপক্ষে যাচ্ছে; অর্থাৎ তাদেরই অনিষ্টের কারণ সৃষ্টি করছে। এ আয়াতে আবারও মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে_এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে যে, সব মানুষকেই আল্লাহর কাছে ফিরতে হবে এবং সেদিন আল্লাহ তাদের সামনে তারা জীবনে যা কিছু করেছে সব তুলে ধরবেন। ২৪ নম্বর আয়াতে এ পৃথিবীর জীবনের আসল রূপটা একটা উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণটা কোনো অবাস্তব বা কাল্পনিক নয়। এটা পৃথিবীর প্রকৃতিরই অংশ। পৃথিবীতে মানুষের জীবনের অবস্থাও এ রকমই। এখানে ক্ষণস্থায়ী আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠতে পারলে এ পৃথিবীকে বড়ই মনোমুঙ্কর মনে হয়। কিন্তু এ সৌন্দর্য ও আনন্দের স্থায়িত্ব খুবই কম। যেমন, মানুষ জগতের সম্পদ, সৌন্দর্য ও আনন্দ লাভ করে ভাবে সে বোধ হয় সব কিছু পেয়ে গেছে। সব কিছুই বোধ হয় তার হাতের মুঠোতে এসে গেছে। তখন প্রায়ই সে দেখে হঠাৎ কোনো এক অপ্রত্যাশিত ঝড়ে সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। তার সব স্বপন ভঙ্গ হয়ে গেছে। তা ছড়া অনিবার্যভাবেই যখন মানুষের মৃত্যুক্ষণ উপস্থিত হয় তখনো তার চোখে গোটা পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসে। ক্ষণস্থায়ী আনন্দ-উল্লাসে লিপ্ত থেকে সে যদি জীবনের গুণার্জন কিছুই না করে থাকে তবে মৃত্যু তো তার জন্য শুধু হতাশাই নিয়ে আসে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.