আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস-চার বছরে ৪৯ লাখ নারী কর্মক্ষেত্রে যুক্ত by জাহাঙ্গীর শাহ

নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দেশের মূলধারার কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। চার বছরে প্রায় ৪৯ লাখ নারী নতুন শ্রমশক্তি হিসেবে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছেন। এতে নারীর বেকারত্বও কমেছে। কৃষি, শিল্প থেকে অফিস আদালতসহ সব ক্ষেত্রেই নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছেন। বর্তমানে দেশে এক কোটি ৬২ লাখ নারী কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ২০১০ সালের শ্রমশক্তি জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে এই চিত্র উঠে এসেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, ২০০৬ সালে এক কোটি ১৩ লাখ নারী কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। চার বছরের ব্যবধানে প্রায় ৪৯ লাখ নারী নতুন করে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছেন। জরিপে দেখানো হয়েছে, কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে কৃষিকাজে সবচেয়ে বেশি নারী সম্পৃক্ত রয়েছেন। সবচেয়ে কম নারী নিয়োজিত আছে গৃহকর্মী হিসেবে।
বেকারের হিসাব ধরলেও নারীর অবস্থানের উন্নতি হয়েছে। এই সময়কালে নারী বেকারত্বের হার ৭ শতাংশ থেকে নেমে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশে এসেছে। আর পুরুষদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে ২৬ লাখ বেকার রয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) স্বীকৃত পদ্ধতি অনুযায়ী সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করেন ও মজুরি পান এমন ব্যক্তিকে বেকার হিসেবে ধরা হয় না।
পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব রীতি ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। \
বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী হলেন নারী। নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার মানে হলো পরিবার ও সমাজ-জীবনে তাঁদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে। তবে কাঠামোগত সমস্যার কারণে গৃহস্থালির কর্মকাণ্ড এখনো শ্রমশক্তিতে আনা যাচ্ছে না।
জরিপ অনুযায়ী, গৃহস্থালি কর্মকাণ্ডে প্রায় ৯১ লাখ নারী জড়িত। আর পুরুষ রয়েছেন ২৭ লাখ। গ্রামাঞ্চলে প্রায় বিনা মজুরিতে ৭৪ লাখ নারী গৃহস্থালির কাজ করেন।
শ্রমের মজুরি না দেওয়ায় এ নারীদের শ্রমশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না। দেশে প্রতি পরিবারেই নারীরা মজুরি ছাড়াই গৃহস্থালির কাজ করে থাকেন। সামাজিক প্রেক্ষা-পটের কারণে তাঁদের শ্রমের মজুরি দেওয়া হয় না। তাঁদের আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতিও নেই।
আবার যুবশক্তিতে তরুণীদের অংশগ্রহণও বেড়েছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৪৬ লাখ তরুণী শ্রমবাজারে ছিলেন। আর ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ লাখে। এ সময়ে তরুণীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের হার প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে তরুণ-তরুণী মিলিয়ে যুবশক্তি হিসেবে কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন মোট দুই কোটি নয় লাখ। সাধারণত ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীরাই যুবশক্তি হিসেবে বিবেচিত হন।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমজীবী নারীর সংখ্যা ও হার যেভাবে বাড়ছে, তা ইতিবাচক। ২০০৬ সালে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ছিল ২৯ দশমিক ২০ শতাংশ যা ২০১০ সালে বেড়ে হয়েছে ৩৬ শতাংশ।’
শ্রমে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ার কারণ হিসেবে রুশিদান ইসলাম বলেন, ‘দেশে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। এতে করে কাজের সুযোগ বাড়ছে। নারীরাও এই সুযোগ নিয়ে এগিয়ে আসছেন। বিশেষ করে শিল্প খাতে তৈরি পোশাক শিল্পের যে অগ্রগতি তাতেও প্রচুর নারীশ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।’
এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী দিনগুলোয় শ্রমজীবী নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে কি না, জানতে চাইলে রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, ‘অবশ্যই নারীর কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে কমাতে হবে মজুরির বৈষম্য। বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীশ্রমিকেরা এখনো অনেক কম মজুরি পান। তাঁদের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.