ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও যৌক্তিকতা থাকতে হবে-জাতীয় বাজেটে প্রতিরক্ষা বরাদ্দ

২০১১-১২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। দরিদ্র দেশ হিসেবে এই বরাদ্দ বেশ বড়। এই বরাদ্দের অর্থ আসে গরিব জনগণের কষ্টার্জিত কর থেকে।


সুতরাং এ ক্ষেত্রে ব্যয়ের যৌক্তিকতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কর্তব্য।
কিন্তু ধারণা দেওয়া হয়, প্রতিরক্ষা বাজেট একটি স্পর্শকাতর বিষয়; এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন নেই। সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে খোলামেলা লেখালেখি ও আলোচনা কম হয়। প্রতিরক্ষার কৌশলগত দিকগুলোর গোপনীয়তা রক্ষা করা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জরুরি, এ কথা সবাই স্বীকার করেন। কিন্তু প্রতিরক্ষা খাতের অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয়ের বিষয়গুলো সম্পর্কে গোপনীয়তার কিছু নেই। রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এ ক্ষেত্রেও আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।
গত বুধবার রাজধানীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুল আয়োজিত প্রতিরক্ষা বাজেটসংক্রান্ত এক সংলাপে পঠিত মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, বাংলাদেশে গত ১১ বছরে প্রতিরক্ষা বাজেট বেড়েছে তিন গুণ। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘আমার মোট আয়ের ৬২ শতাংশ চলে যায় কর দিতে। সেই করের টাকার বাজেটের ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বরাদ্দ পায় সেনাবাহিনী, আর কৃষিতে বরাদ্দ পায় ৭ দশমিক ১ শতাংশ। কৃষির বরাদ্দ কীভাবে খরচ হচ্ছে, এর ফল কী আসছে, তার সবই দেখতে পাই। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীতে বরাদ্দ দেওয়ার কোনো ফল দেখতে পাই না।’ এ বক্তব্য থেকে এটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে প্রতিরক্ষা খাতের বরাদ্দ অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হয়, সে বিষয়ে জনসমক্ষে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব রয়েছে। এ কারণে মনে হতে পারে, প্রতিরক্ষা বাহিনীর অর্থ ব্যয়ের কোনো জবাবদিহি নেই। ইতিপূর্বে যুদ্ধাস্ত্র ক্রয়কে কেন্দ্র করে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়েছে, এমন অভিযোগও শোনা গেছে যে এমন কিছু যুদ্ধ-সরঞ্জাম বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে কেনা হয়েছে, যেগুলো কোনো কাজে লাগেনি। এগুলো বন্ধ হতে পারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে।
প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা ও সমীহ রয়েছে, জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের সদ্ব্যবহার এবং সে বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.