সাবাস by আনোয়ার হোসেন

সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমেছে_ এমন মূল্যায়ন একটি গোয়েন্দা সংস্থার। সাধারণত গোয়েন্দারা সরকারকে ক্লিন সার্টিফিকেট দেয়। তাদের ভাষ্য থাকে_ সবকিছু ঠিক আছে। বিরোধীরা সরকারকে হেয় করতে চায়। সংবাদপত্র ও টেলিভিশন সরকারের ভালো কিছু চোখে দেখে না। কিন্তু আলোচ্য প্রতিবেদনে তেমনটি করা হয়নি।


এ জন্য তাদের বলতে পারি_ সাবাস!
মহাজোট সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনটি জাতীয় দৈনিক দেশব্যাপী জরিপ পরিচালনা করেছিল। গোয়েন্দা রিপোর্টে যেসব কারণ সরকারের জনপ্রিয়তা কমার জন্য চিহ্নিত করা হয়, ওই সব জরিপেও তা উল্লেখ ছিল। কিন্তু দেখা গেল, সরকারের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জরিপের উদ্দেশ্য নিয়েই বেশি মাতামাতি ও অসংলগ্ন কথাবার্তা। কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেন, পাঁচ-দশ হাজার মানুষের কাছে গেলেই জরিপ হয়ে গেল? তারা এটাও বলতে থাকেন_ আওয়ামী লীগ বিরোধীদের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলে তারা তো সরকারের বিরুদ্ধেই বলবে। এখন গোয়েন্দা রিপোর্টের সূত্র ধরে জানতে ইচ্ছা হয়_ এ জন্য কি ১৬ কোটি মানুষের কাছে যেতে হয়েছিল? শিশুদের না হয় বাদ দিই। দেশে ভোটার রয়েছে ১০ কোটির কাছাকাছি। তাদের সবার মত কি রয়েছে এই প্রতিবেদনে? যারা দেশ পরিচালনা করেন, তাদের প্রকৃত খবর পেতে এতসংখ্যক মানুষের কাছে যেতে হয় না। সমকাল জরিপ পরিচালনা করে সাড়ে নয় হাজার মানুষের মধ্যে। এরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত_ শহর ও গ্রাম সর্বত্র তাদের বসবাস। দেশের মঙ্গল চান বলেই তারা খোলামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তুলে ধরেন প্রকৃত চিত্র। এর প্রতি মনোযোগ দেওয়াই সরকারের কাজ। অযথা প্রশ্ন তুলে রাগ মোচন করা যায়, কিন্তু তাতে দেশের সমস্যার সমাধান হয় না। শেয়ারবাজারে যে কেলেঙ্কারি ঘটে গেছে তা নিয়ে জনগণের উল্লেখযোগ্য অংশের ক্ষোভ স্বাভাবিক। এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। কেউ যদি বলেন, 'তিস্তা বা যমুনার চরের ৫০ জন এবং খুলনার পাটকলের ৫০ জন মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি যে তারা শেয়ারবাজারের নামই জানে না_ অতএব শেয়ারবাজার নিয়ে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে, এমন বলা ঠিক নয়।' প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের কথা বলার মতো অনেক লোক সরকারের চারপাশে রয়েছে। তারা ক্রমাগত সংবাদপত্রকে দোষ দিয়ে চলেছে। তাদের বক্তব্য_ এত ভালো কাজ করছে সরকার, সেটা দেখতে পায় না সংবাদপত্র ও টেলিভিশন। কেবল দোষ খুঁজে বেড়ায়।
বিএনপি যখন ক্ষমতায়, একই অভিযোগ তারা করত। তখন আওয়ামী লীগ বাহবা দিত সাহসী সাংবাদিকদের। এখন দু'পক্ষের উল্টো সুর। কবে যে এর অবসান ঘটবে, কে জানে।
পদ্মা সেতু নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ। সৈয়দ আবুল হোসেন দায়ী, নাকি বিশ্বব্যাংক_ এটা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তারা কেবল ২-৩ ঘণ্টায় বুড়িগঙ্গার তীর থেকে মাওয়া হয়ে বরিশাল শহরে যেতে চেয়েছিল। এখন লঞ্চে গেলে প্রায় সারারাত এবং গাড়িতে গেলে ২০০ কিলোমিটার পথ শেষে কখন পেঁৗছানো যাবে, সেটা একান্তই ফেরির ওপর নির্ভর করে। শীতকালে কুয়াশায় লঞ্চ ও ফেরি থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা। অথচ ঢাকা থেকে বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কাছের শহর বরিশাল। কেন এ বিশাল অঞ্চলের জনগণের অনুভূতি বিবেচনায় নিচ্ছে না সরকার? নতুন যোগাযোগমন্ত্রীও সমস্যার গভীরে যেতে চান বলে মনে হয় না।
ভারতও এখন সরকারের জন্য গলার কাঁটা হয়ে আছে। শেখ হাসিনা দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তি হবে, এমন আশা দেখা দেয়। কিন্তু এখন সবকিছুই যে বিশ বাও জলে!

No comments

Powered by Blogger.