জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি নয়-বিরোধী দলের সমাবেশ

প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ চারদলীয় জোট ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করবে; সেই সমাবেশ থেকে বিএনপির প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা। সমাবেশে সমমনা অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে; সেসব দলের মধ্যে থাকবে সেই দলগুলোও, যারা গড়ে উঠেছে বিএনপি থেকে বেরিয়ে যাওয়া


নেতাদের হাতে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের মধ্য মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রধান বিরোধী দল তার শরিক ও সমমনা দলগুলোকে নিয়ে একটি বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক দেশে এটাই স্বাভাবিক যে রাজনৈতিক দলগুলো অবাধে কর্মসূচি পালন করবে; সরকারের কোনো কাজে আপত্তি থাকলে তার প্রতিবাদ জানাবে। এ দেশে মিছিল ও হরতালের তুলনায় সমাবেশ অনেক শান্তিপূর্ণ একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি; যেখানে জনগণের ওপর জবরদস্তি করা হয় কম। হরতালে যেমন ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, জানমালের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সমাবেশে তেমনটি ঘটে না। তবে সমাবেশকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই সীমাবদ্ধ রাখার আন্তরিক প্রয়াস চালাতে হয় প্রথমত সমাবেশের আয়োজকদের, অতঃপর সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় যেন জনসাধারণের অসুবিধার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব সমাবেশের নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। এই ক্ষেত্রে সমাবেশের আয়োজকেরা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি শান্তিশৃঙ্খলার বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং মনে করে যে শান্তিরক্ষা উভয়েরই দায়িত্ব, কোনো এক পক্ষের নয়, তাহলে অনভিপ্রেত ঘটনা, যেমন—পুলিশের জবরদস্তি ও সমাবেশকারীদের পাল্টা বিক্ষোভ—এসব কিছুই ঘটে না। দেশের মানুষ সেটাই কামনা করে।
আর সমাবেশ থেকে যে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে, সেসব কর্মসূচিও যেন কোনোভাবেই জনজীবনের শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ না করে, অর্থনীতির পক্ষে ক্ষতিকর না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা একান্তই প্রয়োজন। এমনিতেই অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে; এর ওপর হরতাল বা ওই ধরনের কঠোর ও জবরদস্তিমূলক রাজনৈতিক কর্মসূচি হবে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা মারার শামিল। রোডমার্চ, লংমার্চ, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ইত্যাদি কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বলা হচ্ছে। এই কর্মসূচিগুলোর সবই শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা সম্ভব, যদি আন্তরিক সদিচ্ছা থাকে। সরকারের কাছেও সহিষ্ণু আচরণ কাম্য। বিরোধী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠবে, যার দায় শেষ পর্যন্ত সরকারের ওপরই বর্তাবে।
আমরা আশা করব, উভয় পক্ষ গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে; নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো পালিত হবে। সেই সঙ্গে এটাও তাদের মনে রাখা ভালো যে, জনগণের দাবিদাওয়া পেশ করার উপযুক্ত স্থান জাতীয় সংসদ। যেকোনো দায়িত্বশীল বিরোধী দলের উচিত সংসদেই কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখা।

No comments

Powered by Blogger.