ভ্যাট প্রত্যাহারের সুফল ভোক্তারা পাবে কি?-চিনি ও সয়াবিন তেল

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটি চিনি ও সয়াবিন তেলের দাম কমানোর লক্ষ্যে এই দুটি পণ্যের ওপর আরোপিত পাঁচ শতাংশ ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। গত রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত বাজার তদারকির ওপর জোর দিয়ে


বলা হয়েছে, এই কার্যক্রম কেবল রমজান মাসে নয়, সারা বছর করতে হবে। ভ্যাট প্রত্যাহার-সংক্রান্ত সুপারিশ ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো হয়েছে বলেও বৈঠকে জানানো হয়।
সংসদীয় কমিটির এ সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের কোনো সুযোগ নেই। আশা করা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাদের সুপারিশ অনুযায়ী চিনি ও সয়াবিন তেলের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেবে। প্রশ্ন হলো, এর সুবিধা সাধারণ ক্রেতা বা ভোক্তারা পাবে কি না? অতীতে দেখা গেছে, বাজারে কোনো পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বা কর কমালে তাতে ব্যবসায়ীদেরই পোয়াবারো। সাধারণ ক্রেতা বা ভোক্তারা এর সুবিধা পায় না। চিনি ও সয়াবিনের ভ্যাট প্রত্যাহারের পরও যে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, এর নিশ্চয়তা কী? এ দুটি পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের পর ব্যবসায়ীদের যে অর্থের সাশ্রয় হবে, তার পুরো সুবিধাই ক্রেতা বা ভোক্তাদের পেতে হবে।
চিনি ও সয়াবিন তেলের বাজার নিয়ে বহুদিন ধরেই তেলেসমাতি কাণ্ড চলে আসছে। আমদানিকারকেরা সুযোগ পেলেই এই দুটি পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে, পণ্যের দাম বেঁধে দেয় এবং যথারীতি ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানান। এই বাগিবতণ্ডার মধ্যে আরেক দফা পণ্যের দাম বাড়ে এবং শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের চাপে মন্ত্রণালয় বর্ধিত দামই মেনে নেয়। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের কানামাছি খেলা কত দিন চলবে? বাণিজ্যমন্ত্রী বহুবার টিসিবিকে জোরদার করার কথা বললেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই।
আমাদের সাফ কথা হলো, চিনি ও সয়াবিন বা যেকোনো পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বা ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে এর সুফল ভোক্তাদের পেতে হবে। লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাওয়ার মতো ব্যবসায়ী কিংবা মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে না নিয়ে যায়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.