যুক্তরাষ্ট্রের বোধোদয় শান্তির জরুরি শর্ত-জাতিসংঘের দরবারে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির পথে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছেন ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন জাতি হিসেবে স্বাধীনতার দাবি নিয়ে তাঁরা হাজির হতে যাচ্ছেন জাতিসংঘের দরবারে। ৬৩ বছর ধরে চলমান ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল এবং অব্যাহত আগ্রাসন ও হত্যাকাণ্ডের অবসানে একটি স্বাধীনতার স্বীকৃতি ছাড়া ফিলিস্তিনের জন্য শান্তিপূর্ণ কোনো


পথ খোলা নেই। তাই জাতিসংঘের ভোটাভুটির ওপরই অনেকটা নির্ভরশীল আরব-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব তথা মধ্যপ্রাচ্য শান্তির ভবিষ্যৎ ।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তথা পিএলওর (ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা) এ দাবিকে ‘বোধগম্য’ বলেছেন, অন্যদিকে ইসরায়েলি দখলদারির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায় এই দাবি ‘আপত্তিকর’। তাহলেও ফিলিস্তিনিরা তাদের পক্ষে কমপক্ষে ১৩০টি দেশের সমর্থন সংগ্রহ করেছে। এই অবস্থায় নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো না দিলে ফিলিস্তিনের আইনি স্বাধীনতার পথে সাধারণ পরিষদের কোনো সমস্যা থাকে না। কিন্তু ইসরায়েলি সরকার এবং আমেরিকার ইহুদি লবি প্রেসিডেন্ট ওবামার ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। কারণ, ইসরায়েলি আধিপত্য টিকিয়ে রাখায় যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোই তাদের শেষ অস্ত্র।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েলের দ্বারা আরব ও ফিলিস্তিনের ভূমি দখল হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ৪৩ বার ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ভেটো প্রয়োগ করেছে। এবারও তা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু এবার তা আগের মতো সহজ হবে না। ক্রমবর্ধমান ইউরোপীয় জনমত, তুরস্কের দৃঢ় অবস্থান এবং সাম্প্রতিক আরব মহাজাগরণ ইসরায়েল-মার্কিন গোঁয়ার্তুমিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ইসরায়েলের ভেতরেও দখলদারিবিরোধী জনমত শক্তিশালী হচ্ছে। ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে আরেকটি সাম্রাজ্যবাদী ভেটো দেওয়া মানে, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, যার মূল্য মোটেই কম নয়।
পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি দখলদারি এবং ফিলিস্তিনি জমিতে নতুন নতুন বসতি স্থাপন চলতে পারছে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ও সামরিক সহায়তায় এবং মার্কিন গণমাধ্যমের সমর্থনে। স্বাধীনতার স্বীকৃতি এলে দখলদারি ও বসতি স্থাপন থমকে যেতে পারে, উভয় রাষ্ট্রের সীমানা স্থায়ীভাবে চিহ্নিত করার বাস্তবতাও সৃষ্টি হতে পারে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখবেন এবং তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ প্রয়োগ করবেন। কেননা, শান্তির পথ বন্ধ হয়ে গেলে অস্ত্রের ভাষাই ফিলিস্তিন প্রশ্নকে ঘিরে থাকবে এবং তা বিশ্বকেও প্রভাবিত করবে।
প্রয়াত ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত বলেছিলেন, ‘এমনকি পাখিরাও ঘরে ফেরে, অথচ আমরা ঘরহীন।’ ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ঘরে ফেরা এবং দখলাধীন ফিলিস্তিনিদের অপমান-লাঞ্ছনা আর নিপীড়নের অবসানের দাবি বেশি দিন আর উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.