অনুমোদন-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করুন-রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক

ব্যাংক-বিমার বিষয়টি পুরোপুরি অর্থনৈতিক। একটি দেশে কতটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠা করা হবে, তা নির্ভর করে সে দেশের অর্থনীতির গতি-পরিধি তথা গ্রাহকদের চাহিদার ওপর। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক না থাকলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক বা বিমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তটি কোনোভাবেই সুবিবেচনাপ্রসূত নয়।


বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কতটি নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যাংকিং নীতিমালা সংশোধনের কথা বলা হয়েছে, জামানতের পরিমাণ আট লাখ থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে যাঁরা কর ও ঋণখেলাপি হয়েছেন, তাঁরা আবেদন করতে পারবেন না। অন্যদিকে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) আরও দু-তিনটি জীবনবিমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছে।
নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছে, এখনো বহু মানুষ ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত। ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিত অধিকাংশ মানুষ গ্রামাঞ্চলের। নতুন ব্যাংক যে গ্রামাঞ্চলেই তাদের শাখা খুলবে, এর নিশ্চয়তা কী? বিষয়টি সার্বিক অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। সরকার যদি গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো মজবুত না করতে পারে, গ্রামাঞ্চলে নতুন শিল্পকারখানা স্থাপিত না হয়, কর্মসংস্থান না বাড়ে, তাহলে সেখানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নতুন শাখা খুলতে আগ্রহ দেখাবে না। অন্যদিকে ব্যাংক না খোলার পক্ষে জোরালো যুক্তি ছিল, ব্যাংকিং খাতে অসম প্রতিযোগিতা চলছে। নতুন ব্যাংক খুললে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
সরকার এসব যুক্তি আমলে না নিয়ে নতুন ব্যাংক কোম্পানি খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশ্ন হলো, কারা এই সুযোগ পাবেন? এ ক্ষেত্রে কি বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে, না ওপর থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হবে? অনেকেই তো আবেদনপত্র জমা দিয়ে অফিস খুলে বসেছেন, যা কোনোভাবেই আইনসম্মত নয়। আমরা আশা করব নতুন ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির অনুমোদন-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে এবং রাজনৈতিক বিবেচনার চেয়ে পেশাদারি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাই অগ্রাধিকার পাবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৩১ ধারায় ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২-এ সরকার বিভিন্ন নির্দেশনার ভিত্তিতে নতুন নির্দেশনা দিতে পারবে বলে যে কথা বলা হয়েছিল, ২০০৩ সালে তা তুলে নেওয়া হয়। অতএব ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব বা হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয় নয়। অনুমোদন-প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে, যাতে কেউ পক্ষপাতের অভিযোগ না তুলতে পারে। এর আগে দুই সরকারের আমলেই দেখা গেছে, বেছে বেছে সরকার-সমর্থক নেতা ও সাংসদদের নামেই নতুন ব্যাংক ও বিমার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, সেই নিশ্চয়তা সরকারকেই দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.