ব্যাংকগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য-মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা

দেশের মুদ্রাবাজারে সম্প্রতি যে বড় ধরনের অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছিল, তা এখন ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। ইতিমধ্যে টাকা-ডলার বিনিময়হার খানিকটা সহনীয় হয়ে এসেছে। ডলারের বিপরীতে টাকা অতিমাত্রায় অবমূল্যায়িত হয়ে পড়েছিল, যা এখন অনেকটা সংশোধিত হয়েছে।


একইভাবে ব্যাংকঋণ ও আমানতের সুদের হারের ঊর্ধ্বগতিতেও খানিকটা লাগাম টেনে ধরা গেছে। তবে এ অবস্থা কত দিন বজায় থাকবে বা স্থিতিশীলতা যথাযথভাবে ফিরে আসবে কি না, তা বোঝা যাবে আরও কিছুদিন পর। আর তা বহুলাংশে নির্ভর করছে ব্যাংকগুলোর কর্মকাণ্ড ও আচরণের ওপর। প্রথম আলোর একটি খবর থেকে জানা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনায় অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে এই বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরির অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংক চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে চিহ্নিত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল। এর জবাবে ব্যাংকগুলো ভবিষ্যতে আর এমন হবে না বলে জানিয়েছে। অর্থাৎ তারা অনিয়মের কথা স্বীকার করেছে।
বস্তুত, মুদ্রাবাজারে যেহেতু ব্যাংকগুলোই লেনদেন করে, সেহেতু তাদের কোনো ত্রুটিপূর্ণ বা নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ড এখানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আর যখন বাজারে বিভিন্ন কারণে অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন বিধিবহির্ভূত কাজের মধ্যে এই অস্থিরতার সুযোগ নেওয়া প্রকারান্তরে আরেক দফা অস্থিরতাকে উসকে দেওয়া হয়। যে কারণে সম্প্রতি প্রতি ডলার ৮৬ টাকায় উঠে গিয়েছিল। একই সঙ্গে ডলার ধরে রেখে আর দাম বাড়ানোর এবং তা থেকে মুনাফা তোলার জন্য একধরনের ফাটকা কারবারের ক্ষেত্রও তৈরি করে। দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য যখন চাপের মুখে, তখন এ ধরনের ফাটকামূলক কর্মকাণ্ড বিনিময়হারের ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি জোরদার হওয়ায় সেই ঝুঁকি খানিকটা হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ব্যাংকগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়মিত ও কঠোর নজরদারির তাই কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে আরেক খবরে জানা গেছে, ব্যাংকগুলো দেশের অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে চড়া সুদ নিচ্ছে ঋণ দেওয়ার বিপরীতে। যেহেতু আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আমানত সংগ্রহের ক্ষমতা সীমিত, তাই তাদের নির্ভর করতে হয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর। বর্তমানে তারল্য-সংকটের এই সময়ে অনেক ব্যাংক সুযোগ বুঝে বাড়তি সুদারোপ করে বসেছে। এটা আর যা-ই হোক, কোনো সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক আচরণ হতে পারে না। তা ছাড়া ব্যাংকগুলো যেখানে নিজেরাই ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার সাড়ে ১৫ শতাংশে সীমিত রাখার কথা জানিয়েছে, সেখানে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদারোপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। অন্যথায় আর্থিক বাজারের সৃষ্ট ভারসাম্যহীনতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনিতেই পুঁজিবাজারের বিপর্যয়, তারল্য-সংকট ও বৈদেশিক লেনদেনের চাপের মুখে দেশের আর্থিক বাজার এখন এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে, যা গোটা সামষ্টিক অর্থনীতিতে ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.