চারদিক-মোহাম্মদ সুলতানকে জানছে পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ে চলছে বইমেলা। মৃত্যুর ২৯ বছর পর ভাষাসংগ্রামী মোহাম্মদ সুলতানের নামে শুরু হয়েছে এই মেলা। সরকারি মিলনায়তন চত্বরে আয়োজিত এই মেলার উদ্বোধন করেন পঞ্চগড়-১ আসনের সাংসদ মো. মজাহারুল হক প্রধান। ২১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই মেলা ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।


মেলায় প্রতিদিন আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও চলছে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদ ও পঞ্চগড় পৌরসভা এ বইমেলার আয়োজন করে।
বইমেলা প্রথম দিনেই জমে উঠেছে। উদ্বোধনের আগেই বিপুল দর্শকসমাগম ঘটে মেলায়। দল বেঁধে নারী, পুরুষ, শিশু ও শিক্ষার্থীরা মেলায় আসেন। সন্ধ্যায় বইমেলা চত্বরে অসংখ্য পাঠক। মেলার ২০টি স্টলে বিভিন্ন ধরনের বই, দেয়ালপত্রিকা ও তথ্যপত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। মেলায় প্রথম আলো বন্ধুসভা একটি স্টল দিয়েছে। স্টলের দায়িত্বে থাকা মুহতাসিম শাহারিয়ার বলেন, ‘আমরা বই বিক্রির পাশাপাশি ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতান সম্পর্কে দর্শকদের নানা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পঞ্চগড়-১ আসনের সাংসদ মো. মজাহারুল হক প্রধান জানান, বইমেলা পঞ্চগড়ের কৃতী সন্তান ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতানের নামে হওয়ায় তিনি নিজেকে গর্বিত মনে করছেন। ‘প্রতিটি ঘটনার পেছনে একটা ইতিহাস থাকে, থাকে নেতৃত্ব এবং নায়ক। ভাষা আন্দোলনের নায়কদের অন্যতম মোহাম্মদ সুলতান। মোহাম্মদ সুলতান সম্পর্কে অনেক আগেই জেনেছি। কিন্তু আমরা তাঁর মূল্যায়ন করতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। ৬০ বছর পরে আমরা তাঁকে স্মরণ করছি। আমরা তাঁকে প্রাপ্য সম্মান দিতে চাই। ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই পঞ্চগড়ে শহীদ মিনারের পাশে তাঁর ম্যুরাল নির্মাণ করা হবে। সেখানে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী থাকবে।’ মোহাম্মদ সুলতান যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান পান এ জন্য তিনি চেষ্টা চালাবেন।
জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘মোহাম্মদ সুলতানকে আমরা সম্মান জানাই। তিনি ছিলেন বাতিঘর। ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পর তাঁকে সম্মান জানাতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমরা সবাই মিলে সুলতানকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ বের করতে পারি।’ তিনি মোহাম্মদ সুলতানকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠানোর ঘোষণা দেন। গত বছর জেলা প্রশাসন আয়োজিত বইমেলার অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতানকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার মো. শাহারিয়ার রহমান শরীয়তপুরে চাকরিসূত্রে অবস্থানকালে নড়িয়ার ভাষাসৈনিক ডা. মাওলার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘কীর্তনখোলা নদীর ওপর তৈরি ব্রিজ ডা. মাওলার নামে করা হয়েছে। সেখানে ভাষাসৈনিক ডা. মাওলার জীবনী লেখা রয়েছে।’ ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতান একজন আলোকিত মানুষ। তিনি তাঁকে স্মরণ করে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শারমিন আকতার বলল, ‘বইমেলায় এসে জানতে পেরেছি ভাষাসংগ্রামী মোহাম্মদ সুলতানের বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়।’ কলেজছাত্র সৌরভ বলল, ‘এই ভাষাসংগ্রামী সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। বইমেলার কারণে জানতে পারছি।’
১৯৮৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের করিডরে চিরতরে বিদায় নেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব রাজনীতিক, ভাষাসৈনিক
মোহাম্মদ সুলতান।
সবার প্রিয় ‘সুলতান ভাই’।
বইমেলায় আসা দর্শক-পাঠককে আমরা জানাই, প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে কয়েক বছর ধরে আলোচনা সভা করা হচ্ছে। একুশের এই ভাষাসংগ্রামী এখনো একুশে পদক পাননি, এটা খুবই অবাক করা ব্যাপার।
পঞ্চগড়ের এই বইমেলাটি জমে উঠেছে। ভাষার মাসে বাংলা বই কেনার এই সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় জেলার মানুষের মন ভরে গেছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আসছে মেলায়। আসছে বয়স্করাও। ঢাকার বাংলা একাডেমীর বইমেলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায়ও যে বইমেলা হচ্ছে, তা খুবই ইতিবাচক বলে মন্তব্য করলেন মেলায় আসা ক্রেতারা।
শহীদুল ইসলাম

No comments

Powered by Blogger.