রাজনৈতিক আলোচনা- 'বিষয় কাশ্মীর-ইনসাফ ও স্বাধীনতা by অরুন্ধতী রায়

লিখছি কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে। আজকের (২৬ অক্টোবর ২০১০ মঙ্গলবার) সকালের পত্রিকাগুলো বলছে, কাশ্মীর বিষয়ে সম্প্রতি আমি প্রকাশ্যে যা বলেছি, তার জন্য জনগণকে উসকে দেওয়ার অভিযোগে আমাকে হয়তো গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

আমি যা বলেছি, তা এখানকার লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিনই বলে যাচ্ছে। আমি যা বলেছি, তা আমিসহ আরও অনেক লেখক ও ভাষ্যকার বছরের পর বছরজুড়ে বলে আসছেন। কেউ যদি কষ্ট করে আমার বক্তৃতার শ্রুতিলিখন পড়েন তো দেখবেন, আসলে আমি যা বলেছি তা বুনিয়াদিভাবে সুবিচারের জন্য দাবি। আমি সেই কাশ্মীরি জনগণের জন্য সুবিচারের দাবি করেছি, যারা বিশ্বের অন্যতম নির্মম সামরিক দখলদারির মধ্যে বাস করে আসছে।
আমি বলেছি কাশ্মীরি ব্রাম্মণ পণ্ডিতদের কথা, যাঁরা তাঁদের স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার করুণ বাস্তবতায় বাস করছেন। আমি বলেছি সেসব দলিত সৈন্যদের কথা, কাশ্মীরের সংঘাতে যাঁরা মারা গেছেন। আমি কুড্ডালোর গ্রামে তাঁদের কবর দেখতে গিয়েছিলাম। আবর্জনার স্তূপের নিচে সেসব কবর ঢাকা পড়েছে। আমি বলেছি ভারতের সেসব দরিদ্র মানুষের কথা, এই দখলদারির মূল্য যাঁদের দিতে হচ্ছে শরীর দিয়ে, জীবন দিয়ে। তাঁরা সবাই এখন ত্রাসের রাজত্বে বসবাস করা শিখছেন, যে রাজত্ব দিনকে দিন পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে উঠছে।
গতকাল (সোমবার) আমি আপেলের শহর শোপিয়ানে গিয়েছিলাম। ৪৭ দিন ধরে শহরবাসী আয়েশা ও নিলুফার নামের দুই তরুণীকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে শহরটিকে বন্ধ করে রেখেছে। তাঁদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল তাঁদেরই বাড়ির ধারের এক চিকন নালার মধ্যে। এত দিন পার হয়ে গেলেও এখনো তাঁদের খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।
আমি নিলুফারের স্বামী আয়েশার ভাই শাকিলের সঙ্গে দেখা করি। সেখানে আমাদের ঘিরে অজস্র ব্যথিত ও ক্রুদ্ধ নর-নারী দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভারতের কাছ থেকে তাঁরা কখনো ‘ইনসাফ’ পাবেন, এ আশা তাঁরা হারিয়ে ফেলেছেন। এখন তাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের একমাত্র আশার নাম হলো ‘আজাদি’—স্বাধীনতা। অল্পবয়সী ছেলেদের সঙ্গেও আমার দেখা হয়েছে। পাথর ছোড়ার অপরাধে তাদের চোখে গুলি করা হয়। যে তরুণের সঙ্গে আমি এখানে-সেখানে গিয়েছিলাম, তাঁর কাছ থেকে শোনা, কীভাবে তার তিন অল্পবয়সী বন্ধুকে ধরে নিয়ে গিয়ে পাথর ছোড়ার শাস্তি হিসেবে আঙুলের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল।
সংবাদপত্রে দেখলাম, কারও কারও অভিযোগ যে আমি নাকি ‘ঘৃণা ছড়ানো’ বক্তব্য দিচ্ছি। আমি নাকি চাই ভারত ভেঙে যাক। অথচ আমি উল্টোটাই চাই। আমি যা বলেছি, তার উৎস ভালোবাসা ও গৌরব। মানুষ গুলিতে মরুক কিংবা ধর্ষিত হোক কিংবা উপড়ে দেওয়া হোক তাদের আঙুলের নখ—এই চাওয়া থেকে তো আমি কিছু বলিনি। আমি বরং এর বিপরীত পরিবেশ চাওয়ার কথাই বলেছি। আমার কথাগুলোর জন্ম এমন এক সমাজে, যা এক ন্যায্য জীবন পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেই রাষ্ট্রকে আমার করুণা হয়, যা লেখকদের মনের কথা প্রকাশ করার পথ বন্ধ করে, তাঁদের নীরব করে দেয়। সেই রাষ্ট্রকে করুণা, যা সুবিচারপ্রার্থীদের জেলে ভরে আর সাম্প্রদায়িক ঘাতকদের, গণহত্যাকারীদের, করপোরেট নচ্ছারদের, লুটেরাদের, ধর্ষকদের এবং যারা গরিবস্য গরিবদের শিকার করে বেড়ায়, তাদের মুক্ত বিচরণে কোনো বাধা দেয় না।
==================================
ইতিহাস- 'ক্রিস্টোফার কলম্বাসের ডায়েরি' by শাহাদুজ্জামান  বিজ্ঞান আলোচনা- নাসা আজীবনের জন্য মঙ্গলে মানুষ পাঠাবে  ফিচার- ‘বাইশ্যা নাচ' by মৃত্যুঞ্জয় রায়  আদিবাসী আলোচনা- 'বেদিয়া নাকি সাঁওতাল' by সালেক খোকন  আলোচনা- 'পর্যটন ও জীববৈচিত্র্য:প্রেক্ষাপট-বাংলাদেশ হেমায়েত উদ্দীন তালুকদার  খবর- নাগোয়া সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ঐতিহাসিক চুক্তি  খবর- ছয় দশক পর দুই কোরিয়ার স্বজনদের পুনর্মিলন  গল্প- 'স্বপ্ন' by আলমগীর হোসেন ফারুক  রাজনৈতিক আলোচনা- 'কাশ্মীর কখনোই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়'- অরুন্ধতী রায়  স্বপ্নকথা- 'আত্মবিশ্বাসী মানুষই সফল হয়' by —বেনজির ভুট্টো  আবিষ্কার খবর- আমাজনে নতুন নতুন প্রজাতির সাপ ব্যাঙ মাছ  খবর- পরমাণু চুল্লিতে জ্বালানি ভরা শুরু করেছে ইরান  কিশোর ফিচার- 'আকাশছোয়াঁ টাওয়ার ‘বুর্জ খলিফা’ by জ়ে হুসাইন  গল্প- 'ঘোস্ট হাউজ অপারেশন' by আব্দুল্লাহ আল নোমান  আলোচনা- 'মহানবীর (সা): আদর্শ জীবন' by অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান  ভ্রমণ- 'মাধবপুর লেক ভ্রমণে' by খালেদ আহমদ শিমুল  স্বাস্থ্য আলোচনা- 'সুস্থতার জন্য হাসি' by আবু হেনা আবিদ জাফর


প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ অরুন্ধতী রায়
অরুন্ধতী রায়: বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতীয় লেখক ও অধিকারবাদী কর্মী।

ভারতের দ্য হিন্দু থেকে ভাষান্তর ফারুক ওয়াসিফ


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.