জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ঐতিহাসিক চুক্তি

তীব্র মতবিরোধের পর অবশেষে নাগোয়া সম্মেলনের একেবারে শেষ সময় এসে জীববৈচিত্র্য রক্ষার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছায় বিশ্ব সম্প্রদায়। পৃথিবীব্যাপী বন ও প্রবালপ্রাচীরসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জাপানের নাগোয়া শহরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ১২ দিনব্যাপী জীববৈচিত্র্যবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী দিনে গতকাল শনিবার এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
মানব জাতির জন্য অত্যাবশ্যকীয় প্রকৃতির ধ্বংস ঠেকাতে ধনী ও গরিব দেশগুলো ‘কার্যকর ও জরুরি’ পদক্ষেপ গ্রহণে রাজি হয়েছে। সম্মেলনে যোগ দেওয়া ১৯৩টি দেশ ১০ বছরব্যাপী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ২০২০ সাল নাগাদ কার্বন-দূষণ বন্ধ, বন ও প্রবালপ্রাচীর রক্ষা, স্থল ও জলভাগের অংশবিশেষ সংরক্ষণ এবং মৎস্যসম্পদ টিকিয়ে রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার করেছে রাষ্ট্রগুলো।
চুক্তি সইয়ের পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচিবিষয়ক প্রধান আচিম স্টেইনার বলেছেন, ‘দিনটি উদ্যাপন করার মতো।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবেশবিষয়ক কমিশনার জ্যানেজ পোটোকনিক বলেন, ‘আমরা চাইলে কিছু করতে পারি নাগোয়া চুক্তি তা-ই প্রমাণ করেছে।’ পরিবেশবাদী সংগঠন কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি রাস মিত্তারমিয়ার বলেন, ‘এ সম্মেলন অবশ্যই সফল ও বড় ধরনের অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস ও সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রতিনিধিরা বলেছেন, এই চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে আশার প্রদীপ জ্বলেছে। গত বছর কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর নাগোয়া চুক্তি এই বার্তা দিয়েছে যে, পৃথিবীর যেকোনো পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে ক্ষমতা রাখে জাতিসংঘ।
নাগোয়া চুক্তির উল্লেখযোগ্য দিক হলো জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৭ শতাংশ ভূমি ও ১০ শতাংশ সমুদ্র এলাকা সংরক্ষণে মতৈক্যে পৌঁছানো। গ্রিনপিস অবশ্য ২০ শতাংশ সমুদ্র সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিল। সংগঠনটির চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ৪০ শতাংশ সমুদ্রাঞ্চল সংরক্ষণ করা। বর্তমানে মাত্র ১৩ শতাংশ ভূমি ও এক শতাংশ সমুদ্রাঞ্চল রক্ষা করা হচ্ছে।
নাগোয়া চুক্তির আরেকটি দুর্বলতা হলো এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র সই করেনি।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নাগোয়া সম্মেলনের ২০ দফা কৌশলগত পরিকল্পনাকে কোনো কোনো পরিবেশবাদী সংগঠন প্রত্যাশিত মনে করে না। তবে অধিকাংশই একে স্বাগত জানিয়েছে। ডব্লিউডব্লিউএফ ইন্টারন্যাশনালের মহাপরিচালক জিম লিপ বলেছেন, ‘এই চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় একটা জোরালো বার্তা দিয়েছে, পৃথিবী রক্ষার ইস্যুটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিরই অংশ। জীববৈচিত্র্য রক্ষার সংগ্রামে বিশ্ব সম্প্রদায় যোগ দিতে প্রস্তুত।’
চুক্তি সইয়ের আগে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর প্রবেশাধিকার ও সুবিধা ভাগাভাগি নিয়ে ‘অ্যাকসেস অ্যান্ড বেনিফিটস শেয়ারিং (এবিএস)’ প্রটোকলটি অনুমোদনের জোরালো দাবি জানায় ব্রাজিল। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোগ, উন্নত দেশ ও তাদের কোম্পানিগুলো ওষুধ ও প্রসাধনসামগ্রীসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে গরিব দেশ থেকে বিনা মূল্যে প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টিকে ‘বায়োপাইরেসি’ অভিহিত করে এ সম্পদ আহরণের মাধ্যমে ধনী দেশগুলো যে মুনাফা পাচ্ছে তার একটা অংশ দাবি করেছে উন্নয়নশীল বিশ্ব।
সম্মেলনের শেষ দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন ধনী রাষ্ট্রগুলো এবিএস প্রটোকল মেনে নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এবারের সম্মেলনের ২০ দফা কৌশলগত পরিকল্পনা সফল হওয়াটা নিশ্চিত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.