ইয়েমেন থেকে বিস্ফোরকভর্তি প্যাকেট পাঠানো হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রে

ব্রিটেন ও সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাইয়ে পণ্যবাহী বিমান থেকে উদ্ধার করা প্যাকেটগুলোতে বিস্ফোরক ছিল। ইয়েমেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে এসব বিস্ফোরক পাঠানো হচ্ছিল। সন্ত্রাসী হামলা চালানোই ছিল এর মূল লক্ষ্য। হামলার আশঙ্কায় গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দরে সতর্কাবস্থা জারি করা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলার বিশ্বাসযোগ্য হুমকি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, আল-কায়েদার ইয়েমেন শাখা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়, সৌদি আরবের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিস্ফোরকের বিষয়টি জানতে পারে তারা। বিভিন্ন সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর দুটি সিনাগগের (ইহুদি উপাসনালয়) ঠিকানায় এসব প্যাকেট পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আসন্ন দক্ষিণ এশিয়া সফর বিঘ্নিত বা বাতিল হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়, এসব মোড়কে পেন্টারিথ্রিটল টেট্রানাইট্রেট (পিইটিএন) বিস্ফোরক ছিল। একই জাতীয় শক্তিশালী বিস্ফোরক দিয়ে গত বছর বড়দিনে নাইজেরিয়ার নাগরিক ওমর ফারুক আবদুলমুতাল্লাব বিমানে হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম থেকে বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েটের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট ওবামার সন্ত্রাসবিরোধী উপদেষ্টা জন ব্রেননান বলেন, সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা একবারে ভণ্ডুল হয়ে গেছে—যুক্তরাষ্ট্র এমনটা মনে করে না।
বিস্ফোরকভর্তি মোড়কের বিষয়টি নিশ্চিত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘আমরা জানি, আল-কায়েদা ও এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন আমাদের মাতৃভূমি, আমাদের জনগণ, বন্ধু ও মিত্রদের ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে।’
ব্রিটেনের ইস্ট মিডল্যান্ডস বিমানবন্দরের একটি বিমান থেকে উদ্ধার করা প্যাকেটের বিবরণ দিতে গিয়ে একজন প্রকৌশলী জানান, এতে টোনার কার্ট্রিজ, সাদা পাউডার, কিছু তার ও সার্কিট বোর্ড ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দুবাইয়ের কর্মকর্তারা জানান, সেখানেও পণ্যবাহী বিমান থেকে একই ধরনের প্যাকেট উদ্ধার করা হয়।
বিমানে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউপিএস এবং ফেডেক্স ইয়েমেন থেকে পণ্য সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘটনার তদন্তকাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথাও জানিয়েছে তারা।
এদিকে বিমানে বিস্ফোরকের বিষয়টি জানার পর হামলার আশঙ্কায় শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দরে কড়া সতর্কতা জারি করা হয়। বিভিন্ন বিমানে তল্লাশি চালানো হয়। শুক্রবার বিকেলে ইয়েমেন থেকে নিউইয়র্কগামী আমিরাত এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় পৌঁছার পর বিমানটি মার্কিন দুটি সামরিক বিমানের পাহারায় জেএফকে বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ বিমানে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। তবে যাত্রীবাহী এই বিমানে সন্দেহজনক কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ফিলাডেলফিয়াসহ বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরে পণ্যবাহী বিমানে তল্লাশি চালানো হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন সংস্থা ডিএইচএল, ইউপিএস ও ফেডেক্সের গুদাম এবং সরবরাহ কেন্দ্রে তল্লাশি চালানো হয়। বিশেষ করে ইয়েমেন থেকে আসা যেকোনো প্যাকেট গোয়েন্দা বিভাগ থেকে সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়।
শিকাগো নগরের সব কটি সিনাগগে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইহুদি নাগরিকদের যেকোনো ধরনের প্যাকেট সম্পর্কে সাবধান থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সিনাগগ ছাড়াও শিকাগোর গির্জা ও মসজিদে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ওয়াশিংটনে ইয়েমেন দূতাবাসের মুখপাত্র মোহাম্মদ আলবাসা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে ইয়েমেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। বিস্ফোরক পাঠানোর উৎস খুঁজে বের করতে ইয়েমেন সরকার তদন্ত শুরু করেছে। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ওবামার পক্ষ থেকে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুুল্লাহ সালেহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ সালেহ এ ঘটনা তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছেন।
এ ছাড়া হোয়াইট হাউস থেকে সময়মতো তথ্য সরবরাহের জন্য সৌদি আরবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রশংসা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.