সিন্ডিকেটের হাতেই সবকিছু জিম্মি by মুসতাক আহমদ

সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি রাজধানীর ‘আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এই চক্র বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এর নেতৃত্বে রয়েছেন খোদ অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মূল দিবা (বাংলা ভার্সন) শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুস ছালাম খান, তার আপন ভাই আতিক খান, গভর্নিং বডির (জিবি) একজন প্রভাবশালী সদস্যের ভাতিজা পরিচয় দানকারী জনৈক আতিক প্রমুখ। এছাড়া স্কুলটির জিবি সদস্য গোলাম আশরাফ তালুকদারসহ আরও কয়েকজন সদস্য এ প্রক্রিয়ায় জড়িত। এরা সবাই মিলে নিয়ন্ত্রণ করেন স্কুলের সব ধরনের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। এতে ক্ষমতা অপব্যবহার করার অবাধ সুযোগ তৈরি হয়েছে। আর এই সুবাদে সিন্ডিকেট চক্রের পকেটে নির্বিঘ্নে ঢুকছে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণহীন কাড়ি কাড়ি টাকা। গত কয়েক দিন ধরে সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ওদিকে চরম নীতিবিবর্জিত পদক্ষেপ হলেও স্কুল কমিটির প্রভাবশালী মহল ছাত্রী যৌন হয়রানির মতো ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের অপরাধ আড়াল করতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। অভিযোগ রয়েছে, এ ধরনের নীতিহীন ভূমিকা নিয়ে কেউ কেউ আর্থিকভাবে লাভবান হন। একই ভাবে সরকারি বিধিমালা লংঘনকারী কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। বিনিময়ে এসব শিক্ষকের কাছ থেকে মাসোহারা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
জানা গেছে, ব্যক্তির বাইরে এ স্কুলে শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বীকৃত একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এর নাম ‘আশিকস’ বা ‘আইডিয়াল শিক্ষক কর্মচারী সমিতি’। এই সমিতি স্কুলের শিক্ষার্থী পরিবহন, ক্যান্টিন পরিচালনা, বই বিতান, পোশাকাদি বিক্রিসহ বিভিন্ন খাতের কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই সমিতি শিক্ষক-কর্মচারীদের হলেও এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন জিবি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম আশরাফ তালুকদার। অভিযোগ উঠেছে, এই ‘আশিকস’ সমিতির নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, যা অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়। এই প্রতিষ্ঠানে ‘আইডিয়াল সমমনা পরিবার সমিতি’ নামেও আরেকটি সংগঠন রয়েছে। মূলত ‘ছ’ আদ্যক্ষরের ওই সহকারী প্রধান শিক্ষক এই সংগঠনের আড়ালে নিজের একটি বাহিনী ঐক্যবদ্ধ করেছেন। মূলত এই দুই সমিতি বৈধ-অবৈধ অর্থ আয়ের মেশিনে পরিণত হয়েছে। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ফোরামের সভাপতির কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত এই দুই সিন্ডিকেটের অবৈধ অর্থ আদায়ের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে দেশের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। তাদের কারণে প্রতিষ্ঠানটি রীতিমতো একটি ‘ব্যবসা কেন্দ্রে’ পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, ‘স্কুলে ব্যক্তি বিশেষের কোনো সিন্ডিকেট নেই। শিক্ষকরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। গভর্নিং বডির সদস্যদের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে পরিচালনা করা। তারা তাদের কাজের স্বার্থে স্কুলে যাতায়াত করেন। আর শিক্ষকদের জন্য ক্যান্টিন পরিচালনার লক্ষ্যে সাবেক অধ্যক্ষ ফয়জুর রহমান স্যারের সময়ে আশিকস গঠিত হয়েছে। পরে তাদের কাজের পরিধি কিছুটা বেড়েছে। তবে স্কুলের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সঙ্গে এই সংগঠনটি জড়িত থাকার অভিযোগ সঠিক নয়।’
কোচিং বাণিজ্য : অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ‘কোচিং বাণিজ্য’ নিয়ে। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে বাধ্য করা হয় শ্রেণী শিক্ষক ও বিষয় শিক্ষকের কাছে কোচিং করতে। আইডিয়ালের কোচিং পাড়া হিসেবে বেশি খ্যাতি পেয়েছে শাহজাহানপুরের বেনজির বাগান এলাকা। ওই এলাকায় অন্তত অর্ধশত ভবনে ফ্রিস্টাইলে চলছে রমরমা কোচিং ব্যবসা। এ ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই। কেউ নেন মাসে ১ হাজার আবার কেউবা দেড় হাজার টাকা। কারও রেট ৩ হাজারও। তাদের কাছে বছরজুড়েই পড়তে হয়। গত কয়েক দিন ওই এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, সাত-সকালে ঘুম থেকে ওঠে আসা শিশু শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। এ সময় কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, এখানে স্কুলের স্যারদের কাছে কোচিং না করালে ক্লাস রুমে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এমনকি ডায়রি আটকে রেখে বানোয়াট অভিযোগসহ তা অধ্যক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়। অনেক সময় ক্লাসে দাঁড় করিয়ে অভিভাবকদের সম্পর্কে কটূক্তি করাসহ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নানাভাবে হেনস্তা করতেও তারা পিছ পা হন না। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ‘শিক্ষকরা ক্লাসে যেভাবে অভিভাবকদের সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলেন তা মুখে উচ্চারণ করতেও দ্বিধা লাগে। তা সত্ত্বেও একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে কিছুটা উদাহরণ দেন। তিনি জানান, একশ্রেণীর কোচিংবাজ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘কিরে তোর বাবা-মা কি ঘুষের টাকায় বড় লোক? সারা দিন তোকে কী শুধু খাওয়ায়? আবার চিকন ছাত্রদের বলা হয়, ‘কিরে তোর বাবা-মা কি তোর সব খাবার খেয়ে ফেলে?। আর চেহারা সুন্দর হলে বলেন, ‘কিরে তুই তো শূকরের মতো নাদুস-নুদুস... ইত্যাদি।’
নাম প্রকাশ না করে একাধিক অভিভাবক যুগান্তরকে বলেন, অধ্যক্ষ ছাড়া প্রায় সব শিক্ষকই এ কোচিংবাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। এরমধ্যে অংক ও বিজ্ঞানের শিক্ষক মনির হোসেনের নাম উল্লেখ করে তারা বলেন, এ শিক্ষক নিজে নোট দেন, আর তার স্ত্রী পড়ান। টাকা দিতে দেরি হলে কটূক্তি করেন। এছাড়া এ শিক্ষক কোচিং ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন। ইংরেজির শিক্ষক মোজাম্মেল হক মোল্লা আরও একধাপ এগিয়ে। তার কাছে কোনো শিক্ষার্থী কোচিং না করলে তিনি প্রায়ই সময় ক্লাসে তার ডায়রি আটকে দেন। ওদিকে বাচ্চাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি খারাপ আচরণ করেন ড্রইং শিক্ষক রাহুল। ক্ষুব্ধ অভিভাবক জানান, এ ড্রয়িং শিক্ষক তার কাছে পড়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের এক প্রকার জিম্মি করে ফেলেন। রসায়নের মনিরুল হাসান এবং বাংলার শিক্ষক আবদুর রশিদসহ আরও অনেকেই এক রকম ডুবে গেছেন কোচিং বাণিজ্যে। এদের মধ্যে আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্যের ভয়াবহ অভিযোগের অডিও রেকর্ড একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রয়েছে বলে জানা গেছে। কয়েক বছর আগে এ শিক্ষকের কোচিং বাণিজ্যের ওপর প্রতিবেদন করতে গিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিকরা হামলার শিকার হন। হামলার সময় এ শিক্ষক শিক্ষামন্ত্রীর ব্যাপারেও কটূক্তি করেন। এরপরই তার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে মাঠে নামে গোয়েন্দা সংস্থাটি। এভাবে অন্যান্য শিক্ষকের বিরুদ্ধেও কোচিং বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা কাউকে কোচিংয়ে বাধ্য করি না। ক্লাসে যারা না বোঝে তাদের অভিভাবকরা আমাদের অনুরোধ করলে কেবল তাদের পড়ানো হয়। আমি নোট দেই আর আমার স্ত্রী পড়ান বা দুর্ব্যবহারের অভিযোগও সঠিক নয়।’
মোজাম্মেল হক মোল্লা বলেন, ‘ডায়রি আটকে দেয়ার মতো ঘটনা আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করি। আমার ৩৬ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এমন কাজ করিনি। তবে মাঝে মধ্যে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার অনীহার বিষয়ে ডায়রিতে মন্তব্য করে থাকি। আর আমি গত ২-৩ বছর ধরে কোচিং করাই না।’ ওদিকে ড্রইং শিক্ষক রাহুল বিশ্বাস বলেন, ‘কোচিংয়ে বাধ্য করার অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। আপনি একদিন সরাসরি এসে আমার সামনে জিজ্ঞেস করলে প্রকৃত সত্য জানতে পারবেন।’
আশিকস’র বাণিজ্য : অভিযোগ পাওয়া গেছে, স্কুলের শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য কয়েকশ’ ভ্যান, একাধিক ক্যান্টিন, লাইব্রেরি (বই বিক্রির দোকান), স্কুল ড্রেস ও ফটোস্ট্যাট বাবদ বছরে অন্তত ৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়। কিন্তু নিয়ম থাকলেও এসব কাজের ক্ষেত্রে কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয় না। নাম প্রকাশ না করে স্কুলের গভর্নিং বডির সাবেক এক সদস্য জানান, কেবল লাইব্রেরি ও স্কুল ড্রেস খাত থেকে বছরে আড়াই কোটি টাকা আয় হচ্ছে। মূলত এসব টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়া হয়। এভাবে অন্যান্য খাত থেকেও কোটি কোটি হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। এজন্য স্কুলের সব শিক্ষক মিলে গড়ে তুলেছেন ‘আশিকস’ নামের সমিতি। এ সমিতিই এখন শিক্ষকদের জন্য বড় আশীর্বাদ। তাই নতুন শিক্ষকরা যোগদানের পর দ্রুত সমিতির সদস্য হতে ব্যাকুল থাকেন। জানা গেছে, সদস্য হওয়ার জন্য প্রত্যেক শিক্ষককে ৮ হাজার টাকা করে দিতে হয়। নতুন নিযুক্ত শিক্ষকরা ১ বছর পার হলেই তার সদস্য পদ লাভ করেন। সূত্র বলছে, পর্দার আড়ালের এসব ব্যবসা আরও জমজমাট করতে কয়েক বছর আগে ভ্যান সার্ভিস তুলে দিয়ে মাইক্রোবাস সার্ভিস চালু করেন। কেননা, এতে লাভ বেশি। এত করে অভিভাবকদের খরচ বাড়লেও তা আমলে নেয় না গভর্নিং বডি।
আরও বাণিজ্য : সূত্র আরও জানায়, আইডিয়াল স্কুলের নতুন মুগদা শাখাটিও সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। একইস্থানে পার্শ^বর্তী আরেকটি স্কুলের ক্যাম্পাস নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল। অথচ আইডিয়াল কর্তৃপক্ষ রীতিমতো দখল করে অবৈধ শাখা নির্মাণ করে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এ অবৈধ শাখা নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রভাশলী মহল তা থামিয়ে দেয়।
সূত্র জানায়, অবৈধ ওই শাখার স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু সেই ব্যয়ে কোনো স্বচ্ছতা নেই। শাখাটির গোটা উন্নয়ন কাজ চলাকালে সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখাপ্রধান ছিলেন আবদুছ সালাম খান। আর উন্নয়ন কাজ দেখভাল করেন তারই ভাই আতিকুর রহমান খান এবং বিল ভাউচারে স্বাক্ষর করেন অধ্যক্ষ। আর মজার বিষয় হচ্ছে, উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার পর তিনি এ শাখা থেকে বনশ্রী শাখা বদলি হয়ে যান ছালাম খান। উল্লেখ্য, তিনি মূল ক্যাম্পাসের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত। নিয়ম রয়েছে, যে শিক্ষক যেখানে নিয়োগ পাবেন তাকে সেখানে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছালাম খান নিজে যেমন একের পর এক শাখা বদল করছেন, তেমনি নিজের অনুসারীদেরও এ সুবিধা দিচ্ছেন। গত কয়েক বছরে তার নেতৃত্বে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে। ওইসব বদলির সুবিধা প্রাপ্তদের একজন হলেন বর্তমানে মূল দিবা শাখার শিক্ষক আবদুর রশীদ। তিনি ইংরেজি ভার্সনে নিয়োগপ্রাপ্ত। তিনি বনশ্রী শাখায় বদলি হন। এখন আছেন তিনি মতিঝিলের দিবা শাখায়।
অপসারণ হচ্ছেন ছালাম খান : গভর্নিং বডির এডহক কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য আবদুছ ছালাম খানকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বোর্ড। তিনি অবৈধভাবে এ সদস্যপদ দখল করায় তার বিরুদ্ধে এ রকম ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুধবার রাতে যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আসফাকুস সালেহীন। বোর্ড ও আইডিয়াল স্কুল সূত্র জানায়, ২৮ এপ্রিল স্কুলের অভিভাবক ফোরাম এ শিক্ষকের সদস্যপদ চ্যালেঞ্জ করে ঢাকা বোর্ডে আবেদন করে। এরপর বোর্ড কঠোর অবস্থান নেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ৬ মে ছালাম খান তড়িঘড়ি পদত্যাগপত্র জমা দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা ২১ দিন গোপন রাখেন স্কুলের অধ্যক্ষ। এ বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানার পর বুধবার অধ্যক্ষের কাছে কৈফিয়ত তলব করেন। পরে অধ্যক্ষ তড়িঘড়ি করে বুধবারই তা বোর্ডে পাঠিয়ে দেন। সন্ধ্যায় কলেজ পরিদর্শক এ বিষয়ে জানান, ‘আমরা আজই ছালাম খানের পদত্যাগপত্র পেয়েছি। তবে এর আগেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ফাইল উত্থাপন করা হয়েছে। তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। কাল (আজ) আদেশ বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেয়া হবে।’
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য : উপরে উল্লিখিত অভিযোগসমূহের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জিবির সদস্য সচিব ও আইডিয়ালের অধ্যক্ষ ড. শাহানআরা বেগম যুগান্তরকে বলেন, ‘আশিকস’র মাধ্যমে স্কুলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা নতুন কিছু নয়। আগে থেকেই হয়ে আসছে। আর শিক্ষকরা কেউ কাউকে না মানার কারণে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে জিবির সদস্যদের মধ্য থেকে গোলাম আশরাফ তালুকদারকে এর সভাপতি করা হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘স্কুলে কেবল আইডিয়াল সমমনা সমিতিই নয়, শিক্ষকদের এ ধরনের আরও সমিতি আছে। তবে তা ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা যাতে কোচিংয়ে সম্পৃক্ত হতে না পারেন সেজন্য আমরা নীতিমালা মেনে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু তাই বলে কোচিং বন্ধের জন্য শিক্ষকদের বাসায় বাসায় গিয়ে পাহারা দেয়া সম্ভব নয়। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’ আবদুছ ছালাম খানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রবিধানমালায় স্পষ্ট কিছু বলা নেই যে সহকারী প্রধান শিক্ষক জিবির সদস্য হতে পারবেন না। যদি নিষেধ থাকত তাহলে বোর্ড অনুমোদন দিত না। আর প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিধিমালায় কোনো নিষেধও নেই। তারপরও বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক ও বিদায়ী জিবি সদস্য আবদুছ ছালাম খানের সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বোর্ডের সিদ্ধান্ত আমি জানি না। তবে আমি সদস্য পদ থেকে ৬ মে পদত্যাগ করেছি। আসন্ন জিবি নির্বাচনে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ চেয়ে মামলা করেছি। রায় আমার পক্ষে এসেছে। তাহলে বিধিমালায় না থাকার পরও এতদিন কেন জিবিতে ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আপনি যা বলছেন ও লিখছেন সবই ভুল।’ এই বলে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন। এরপর ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, স্কুলে তার কোনো গ্র“প নেই। তিনি কোনো সিন্ডিকেটেরও সদস্য নন। কর্তৃপক্ষ তাকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য করেছে। সে হিসেবে তিনি সেবা করছেন মাত্র।

No comments

Powered by Blogger.