গান-নাচ কবিতায় নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপন by শিহাব জিশান

নজরুলজয়ন্তীতে শিল্পকলা একাডেমীর মুক্তমঞ্চে আয়োজিত
অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা l সৌরভ দাশ
বাতিঘরের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন
কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস
নানা আয়োজনে ২৫ মে নগরে উদ্যাপন করা হয়েছে সাম্য ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী। কবিতা, গান-নাচ ও কথামালার আয়োজনে জন্মজয়ন্তীতে জাতীয় কবিকে স্মরণ করে বিভিন্ন সংগঠন।
জেলা শিল্পকলা একাডেমী: জেলা শিল্পকলা একাডেমী ও জেলা প্রশাসনের যৌথ আয়োজনে মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় কবি নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তীর আয়োজন। বিকেল পাঁচটায় আলোচনা সভার মাধ্যমে সূচনা হয় অনুষ্ঠান। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) খলিলুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ হাসিনা জাকারিয়া ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। শুরুতেই সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষার্থীরা। ‘দাও শৌর্য, দাও ধৈর্য’ ও ‘জাগো নারী জাগো’ গান দুটি পরিবেশন করেন তাঁরা। ছিল কামরুল হাসান ও শারমিন মৃত্তিকার কণ্ঠে আবৃত্তি। এরপর সমবেত কণ্ঠে নজরুলসংগীতের পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসে কুসুম ললিতকলা একাডেমি ও আর্য সংগীত সমিতির সদস্যরা।
গানের পর নৃত্যে মঞ্চ মাতায় বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা চট্টগ্রামের শিল্পীরা। ‘প্রথম প্রদীপ’ শিরোনামের গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শকদের। এরপর ছিল উচ্চারক আবৃত্তিকুঞ্জের বৃন্দ পরিবেশনা ‘যেদিন আমি থাকব না’। এবার একক গান নিয়ে আসেন শিল্পী মালবিকা দাশ। তাঁর কণ্ঠে ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব’ গানটি আসর জমিয়ে তোলে। এ ছাড়া আবদুর রহিমের ‘এ কূল ভাঙে, ও কূল গড়ে, এই তো নদীর খেলা’, লোকমান চৌধুরীর ‘এত জল এ কাজল চোখে’ গানেও দর্শকদের সাড়া পাওয়া যায়। এভাবে একে একে নাচ, গান ও কবিতার পরিবেশনায় মেতে থাকে শিল্পকলার মঞ্চ। নজরুলসংগীতশিল্পী সংস্থা চট্টগ্রামের শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি ফুল’ গানের মাধ্যমে শেষ হয় আয়োজন।
শ্রুতিঅঙ্গন বাংলাদেশ: নজরুলের জয়ন্তী উপলক্ষে ‘ভৈরবী রাগে সুরবর্ণালী’ শিরোনামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শ্রুতিঅঙ্গন বাংলাদেশ। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় নগরের নন্দনকাননের এ কে খান স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠান। উইলিয়াম ডি সাংমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অধ্যাপক বেনু কুমার দে। অতিথি ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান ও মো. মোস্তফা কামাল।
কথামালা শেষে শুরু হয় ভৈরবী রাগের তালে নজরুলকে স্মরণ। শুরুতেই ‘প্রভাত বীণা তব বাজে’, ‘নমঃ নমঃ বাংলাদেশ মম’, ‘মোরা আর জনমে’, ‘আল্লাহকে যে পাইতে চায়,’ ‘মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর’ পাঁচটি সমবেত গান পরিবেশন করেন সংগঠনের শিল্পীরা। সেতারে ভৈরবী রাগ পরিবেশন করেন প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী। এরপর একে একে ভৈরবী রাগে একক সংগীত পরিবেশন করেন নিলয় দত্ত, বৈশাখী নাথ, সৈকত দত্ত, জেকী দত্ত, নিপা দত্ত, সারিনা ফারহা, ধীমান নন্দী ও লিটন দাশ। সবশেষে ‘আলগা করো গো খেঁাপার বাঁধন’ গানের সমবেত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় আয়োজন।
বাতিঘর : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ÿ২২ মে নগরের প্রেসক্লাব ভবনের গ্রন্থবিপণি বাতিঘর আয়োজন করে অনুষ্ঠানমালা। এতে আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম প্রথাগত মানুষ ছিলেন না। প্রচলিত সমাজভাবনা ও ধর্মচিন্তা দিয়ে তাঁকে বিবেচনা করা যাবে না। এ জন্য সমকালীন সময়ে তাঁকে অনেক অস্বস্তি, সাহিত্যিক আক্রমণ ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছিল।
বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশের সঞ্চালনায় শিল্পী শিমু বিশ্বাসের দুটি নজরুলসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপর বক্তৃতা করেন কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস ও বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
হরিশংকর জলদাস নজরুল জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি কুমিল্লায় নজরুল স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখার স্মৃতি বর্ণনা করেন।
বিশ্বজিৎ চৌধুরী বক্তৃতায় নজরুল জীবনে প্রেম, নজরুলকে নিয়ে তাঁর উপন্যাস নার্গিস লেখার অভিজ্ঞতা পাঠকদের শোনান।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কবিতা পাঠ করেন কবি খুরশীদ আনোয়ার, ওমর কায়সার, মানজুর মুহাম্মদ, মোজাম্মেল মাহমুদ ও তনুজা বড়ুয়া ।
অনুষ্ঠান শেষে দর্শক ও অতিথিরা বাতিঘরে ‘নজরুল রচিত ও নজরুলবিষয়ক গ্রন্থ প্রদর্শনী’ ঘুরে দেখেন। উল্লেখ্য, প্রদর্শনী চলবে ৩০ মে পর্যন্ত।

No comments

Powered by Blogger.