বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নিতে খোয়াই নদ ভরাট করে বিকল্প সড়ক by হাফিজুর রহমান

শায়েস্তাগঞ্জ নতুন সেতুর পিলার থেকে প্রায় ১০০ হাত দূরেত্ব
নদের ওপর সড়ক নির্মাণে এক্সকাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র)
দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। গত শনিবার তোলা ছবি l প্রথম আলো
হবিগঞ্জের শাহজীবাজারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ৩৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি পরিবহনের জন্য খোয়াই নদ ভরাট করে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের গোয়াং ডং পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ নতুন সেতুর নিচ দিয়ে এই সড়ক নির্মাণ করছে।
সড়ক নির্মাণের কারণে ইতিমধ্যে নদের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তীরবর্তী শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ও বাঁধের ওপরের কিছু গাছপালাও কাটা পড়েছে। খোয়াই নদের উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। মিশেছে দেশের ধলেশ্বরী-কুশিয়ারার প্রবাহের সঙ্গে।
গত শনিবার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর পিলার থেকে প্রায় ১০০ হাত দূরত্ব রেখে নদের ওপর দিয়ে সড়কটি নির্মাণের কাজে পাঁচটি এক্সকাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। নদের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৭০ ফুট প্রশস্ত এই সড়কের দুই পাশে শালগাছ দিয়ে চলেছে পাইলিংয়ের কাজ। শতাধিক শ্রমিক এসব কাজে নিয়োজিত।
ওই এলাকার ব্যবসায়ী আফজল মিয়া বলেন, প্রায় ২০ দিন আগে এ কাজ শুরু হয়েছে। একই এলাকার অধিবাসী আফরোজ মিয়া বলেন, নদটি ভরাট হওয়ায় প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে নৌ-চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
সড়ক তৈরির কাজে নিয়োজিত আবদুস সোবহান ও এনামুল হক বলেন, ঢাকার অ্যাভেন কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান সড়কটির নির্মাণকাজ করছে। তাদের এ কাজের দায়িত্ব দিয়েছে চীনের গোয়াং ডং পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। তিন কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কের কাজ তিন সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে।
গোয়াং ডং পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের সূত্র জানায়, শাহজীবাজারে নির্মাণাধীন ৩৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৪০০ মেট্রিক টন ওজনের একটি জেনারেটরসহ আটটি অতি ভারী যন্ত্র মংলা বন্দর থেকে নৌপথে সিলেটের শেরপুরে কুশিয়ারা নদীতে আনা হবে। সেখান থেকে তা সড়কপথে প্রকল্প এলাকায় নেওয়া যেত। কিন্তু সমস্যা বেধেছে শায়েস্তাগঞ্জ সেতু নিয়ে। সেতুটি ঝুলন্ত হওয়ায় তার ওপর দিয়ে অতি ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহন করা সম্ভব হবে না। এ কারণে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করতে হচ্ছে। যন্ত্রপাতি পরিবহনের পর আবার সড়কটি কেটে নদের প্রবাহ চালু করে দেওয়া হবে।
বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত একজন সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভৈরব থেকে মেঘনা নদী ধরে এসে কুশিয়ারায় পড়লে যন্ত্রপাতিগুলো নৌপথেই শাহজীবাজারের প্রকল্প এলাকায় পরিবহন করা যেত। এ জন্য সিলেটের শেরপুর কুশিয়ারায় যাওয়ার দরকার হতো না। কিন্তু তা কেন করা হলো না, সেটা পরিষ্কার নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শহিদুল আলম বলেন, গোয়াং ডং পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন সড়ক নির্মাণের জন্য অনুমোদন চেয়ে পাউবোতে আবেদন করেছিল। তখন তাদের বলা হয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কিন্তু তারা সেই অপেক্ষা না করেই কাজ শুরু করে দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.