কোটি কোটি টাকা নয়ছয় by মুসতাক আহমদ

খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়েছে। এমন কোনো বিষয় বা খাত নেই যেখানে এই কমিটি অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির গন্ধ পায়নি। বলতে গেলে পদে পদে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি হয়েছে। তথ্য পেয়েছে সরকারি সব ধরনের আইন-কানুন উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী ভর্তি বাবদ অতিরিক্ত ৬ কোটির বেশি টাকা আদায়ের। ভর্তি ফরম বিক্রিতেও কম যাননি, এ খাতে আদায় করা অর্থের মধ্যে ৮৪ লাখ টাকার ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এর বাইরে ছয়টি খাতে প্রতি বছর গড়ে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার আলামত পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া অবৈধভাবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ঘটনা তো হাতেনাতেই প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, অভিযোগের পাহাড় জমা পড়ার একপর্যায়ে ২০১৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রতিবেদনে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। যদিও এ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যে কারণে পরের বছরও অভিযুক্ত প্রভাবশালীরা আবার একই ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর একই ধরনের অভিযোগ পেয়ে ২০১৪ সালে ফের শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্তের উদ্যোগ নেয়। তারা দ্বিতীয় দফায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) নির্দেশ দেয়। কিন্তু এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও কোনো প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে আজ পর্যন্ত জমা দেয়া হয়নি। যে কারণে মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবেদন চেয়ে ২৩ ফেব্র“য়ারি তৃতীয় দফায় মাউশিকে তাগিদ দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উল্লিখিত প্রতিবেদনে মূলত ২০১২ সালের আয়-ব্যয়ের অনুসন্ধান হয়েছে। তবে নয়ছয়ের ঘটনা শুধু ওই বছরই হয়নি, এর আগে এবং পরে বিভিন্ন সময়ে স্কুলটিতে এভাবে অসংখ্য বৈধ-অবৈধ খাত সৃষ্টি করে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে দু’হাতে অর্থ আদায় এবং তা নানাভাবে লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০০৮ সালে সরকারি আরেক তদন্তেও স্কুলে অবৈধ ভর্তি এবং নানা অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসে। ওই তদন্তের পর অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগমকে বাধ্যতামূলক ছুটি আর তৎকালীন সহকারী শিক্ষক আবদুছ ছালাম খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়, যদিও তারা দু’জনে ২০০৯ সালে আবার ফিরে আসেন।
প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে নানাভাবে দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, একশ্রেণীর শিক্ষক স্কুলটিকে ‘কামধেনু’তে (বাচ্চা হোক বা না হোক দোহালেই দুধ পাওয়া যায়) পরিণত করেছেন। কোচিং, ভর্তি, নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে এ সারির শিক্ষকরা জড়িত। এজন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা তাদের লুটপাটের কর্মটি নির্বিঘ্ন রাখতে যখন যে দল সরকারে থাকে, তখন সেই দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের সামনে রাখেন। কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিকে লুটপাটের ভাগ দিয়ে নিজেরা থাকেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আর এই লক্ষ্য হাসিলের জন্য সব সময়ই এ চক্রটি প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি (জিবি) দখলে রাখার চেষ্টা করে থাকে। তাই ৬ জুনে নির্ধারিত গভর্নিং বডির সদস্য নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই স্বার্থান্বেষী মহল একই উদ্দেশ্যে ফের নেমে পড়েছেন। জানা গেছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজকে ঘিরে অনিয়ম-দুর্নীতির এসব বিষয় যে শুধু সরকারি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে তা নয়, শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং স্কুলের আশপাশের মানুষের কাছেও অনেকটাই ওপেন সিক্রেট বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা গঠন করেন ‘আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ফোরাম’। এ সংগঠনের দফতর সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকের স্বাক্ষরে ২৩ মে রাতে পাঠানো এক বিবৃতিতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম-দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে। এতে স্কুলটিতে দুর্নীতি উচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলা হয়, দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, শিক্ষা বাণিজ্য ও অনৈতিকতার মহোৎসবে কলংকিত হচ্ছে। সুবিধাভোগী ও স্বার্থান্বেষী মহলের দৌরাত্ম্য এবং কালো থাবা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষার দাবিও করা হয়েছে বিবৃতিতে। এই ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবীর দুলুর সঙ্গে এসব বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘ইতিপূর্বে সরকারি বিভিন্ন তদন্তে শিক্ষকদের মধ্যে যে বা যারা চিহ্নিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন ধরনের শাস্তি ভোগ করেছেন তাদের যদি স্কুল থেকে বিতাড়িত করা যায়, তাহলে প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতিমুক্ত হবে। তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আমি দোষারোপ করছি না। কেননা দুর্নীতিবাজ শিক্ষকরাই নিজেদের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের টেনে আনেন এবং ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।’ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম সোমবার যুগান্তরের কাছে কোনো কোনো বিষয় স্বীকার করেন। আবার কিছু বিষয় অস্বীকার করে তিনি এটাও বলেন, ‘আমরা নীতিমালা মেনে চলার চেষ্টা করে থাকি। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ব্যাপারে সর্বময় ক্ষমতার মালিক গভর্নিং বডি (জিবি)। সব ধরনের কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত জিবির বৈঠকেই নেয়া হয়। আমি তা বাস্তবায়ন করি মাত্র। একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে, অনেকে আছেন, যারা মাতব্বরি করতে চান। বাংলাদেশ এটা। এখানে সবকিছু সঠিকভাবে সম্পন্ন করা কঠিন।’
কেন দখলে মরিয়া : আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক- এ দু’ধরনের আয়-ব্যয়ের সুযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। এর মধ্যে আনুষ্ঠানিক আয়ের খাত রয়েছে ২৬টি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ স্কুলে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার ছাত্রছাত্রী। কোনো একটি খাতে ১০ টাকা করে আদায় করলেও তার পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ টাকা। অর্থাৎ খাত সৃষ্টি করতে পারলেই এভাবে অর্থ আদায় সম্ভব। স্কুলের বিভিন্ন খাতে এভাবে বছরে অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা আদায় ও লেনদেন হয়ে থাকে। এর বাইরে অঘোষিত অনেক খাত রয়েছে। যেমন- বেশির ভাগ শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য করেন। আবার কখনও ছাত্রী যৌন নির্যাতনের মতো অভিযোগও ওঠে কোনো কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে- এমন ঘটনায় গভর্নিং বডির একশ্রেণীর সদস্য অভিযুক্ত শিক্ষককে রক্ষায় নেমে পড়েন। এর বিনিময়ে পর্দার আড়ালে ঘুষ নেয়ার অভিযোগও রয়েছে, যদিও তার কোনো প্রমাণ নেই। অর্থাৎ অনানুষ্ঠানিক খাত থেকেও হর্তাকর্তাদের পকেটে টাকা ঢোকে। এ ধরনের অনৈতিক আয়ের মানসিকতাও জিবি দখলের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করে।
বৈধ খাতে অবৈধ আয়-ব্যয় : সর্বশেষ সরকারি এক তদন্তে দেখা গেছে, ২০১২ সালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অন্তত ২৬ খাতে অর্থ আদায় করা হয়। জানা গেছে, এসব খাতে প্রতিষ্ঠানটির শুধু ১১ মাসেই আয় হয় অন্ততপক্ষে ৪১ কোটি টাকা। অপরদিকে একই বছরে স্কুলে মোট ব্যয় করা হয় ২১টি খাতে। এসব খাতে একই সময়ে ব্যয় হয় মাত্র ১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অথচ, আদায় করা হয় দ্বিগুণের বেশি। প্রশ্ন উঠেছে, বাকি অর্থ বা উদ্বৃত ২২ কোটি ২৬ লাখ টাকা কেন নেয়া হল কিংবা এ টাকা কোথায় গচ্ছিত আছে।
সরকারি ওই তদন্ত দল এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে বিস্মিত হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ‘সকল ব্যয় ভাউচারে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ স্বাক্ষর করে থাকেন। কিন্তু ক্যাশ বই ও ব্যয় ভাউচারে তার স্বাক্ষর নেই।’ এতে আরও বলা হয়, আয়-ব্যয় দেখার জন্য দুটি কমিটি থাকলেও তারা কাজ করেন না। অর্থাৎ, অর্থ লোপাটের রাস্তা পরিষ্কার রাখতে কমিটি করা হয়। কিন্তু কমিটির কার্যকারিতা নেই। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ খাতের আয়-ব্যয়ের পুরো বিষয়টি এখনও স্পষ্ট হয়নি।
এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১২ সালে সরকারি এমপিও এবং স্কুলের তহবিল থেকে দেয়া বেতন-ভাতার বাইরে শিক্ষকরা আরও ৭টি খাতে অর্থ নিয়ে থাকেন। এগুলো হচ্ছে- ভর্তি কার্যক্রম, সাংবাৎসরিক পরীক্ষা (প্রথম, দ্বিতীয় ও বার্ষিক পরীক্ষা), শ্রেণী শিক্ষক সম্মানী, নৈমিত্তিক ভাতা, এসএসসি ও এইচএসসি উৎসাহ সম্মানী। এসব খাতে শিক্ষকদের পেছনে অতিরিক্ত ব্যয় হয় কমপক্ষে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। উপরন্তু, এর বাইরে ব্যক্তির করও দেয় স্কুল। এক্ষেত্রে মজার বিষয় হচ্ছে, নৈমিত্তিক ছুটিতে গোজামিল করে মূল বেতনের দেড়গুণ পর্যন্ত অর্থ নেয়া হয়। এমনকি কলেজ শিক্ষকরা এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করানোর নামে উৎসাহ ভাতা নেন। আর আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্রত্যেক শিক্ষক বেতনের ৫০-৬০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া পেয়ে থাকেন। কিন্তু এরপরও ২০ শতাংশ হারে বিশেষ ভাতা ও নগর ভাতা দেয়া হয়। আবার যারা এমপিও পান তারা সরকার থেকেও বাড়ি ভাড়া ভাতা পান। অথচ এসব খাতে এভাবে অর্থ নেয়া যায় না বলে সরকারি এ তদন্তে আপত্তি করা হয়েছে।
এসব পর্যালোচনায় সরকারি তদন্তে মোট ১০টি অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- স্কুলে নিরীক্ষা কমিটি থাকলেও তা কার্যকর না থাকা, কোনো ক্রয় কমিটি না থাকা ও অস্বচ্ছ ক্রয় কার্যক্রম, আয়-ব্যয় নিরীক্ষা না হওয়া, মোটা অংকের ভ্যাট ফাঁকি, ৬৭ লাখ টাকায় একটি গাড়ি ও জেনারেটর কেনার নামে টেন্ডার নাটক, ডায়েরি, ক্যালেন্ডার, ম্যাগাজিন ও নানা মুদ্রণসহ স্কুলের সব ধরনের খরচে একক ব্যক্তির মাধ্যমে কোটেশন সংগ্রহ, পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজে অস্বচ্ছ ব্যয়, সরকারকে ভ্যাট না দেয়া, মালামালের যথাযথ হিসাব বা স্টক রেজিস্টার না থাকা, প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কর প্রদান ইত্যাদি।
অপরাধ ও উৎকোচ : উল্লিখিত খাতের বাইরে তথ্যানুসন্ধানে আরও বেশকিছু খাতে অবৈধ আয় ও লেনদেনের আলামত পাওয়া গেছে। এগুলো হচ্ছে- শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের এক শাখা থেকে আরেক শাখায় বদলি, ফেল করা শিক্ষার্থীকে উপরের ক্লাসে পদোন্নতি, ক্লাস শিক্ষক নিয়োগ, বিষয় শিক্ষক নিয়োগ, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য মনোনয়ন, বছরে কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটা, স্কুল ড্রেস, ভবন নির্মাণ ও সংস্কার, পুরাতন বই বিক্রি, জেনারেটর পরিচালনা ইত্যাদি। এছাড়া পরীক্ষার ফরম পূরণ ও স্কুলে অতিরিক্ত ক্লাস করাসহ নানা খাতে বাড়তি ফি আদায়, প্রতি বছর বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি আদায় এবং তা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়ার ঘটনাও রয়েছে। যেমন চলতি বছরের এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও ওই অর্থ ফেরত না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এই অবৈধ অর্থ বিগত মাসে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।
আরও অভিযোগ রয়েছে, স্কুলে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের হোতারা একদিকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে লিপ্ত শিক্ষকদের রক্ষা করে থাকেন, অপরদিকে বিভিন্ন কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এ দুই কাজ থেকেই সিন্ডিকেট সদস্যরা দু’হাতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এমনকি আইডিয়াল স্কুলে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতিক খান নিজেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুছ ছালাম খানের ছোট ভাই হওয়ায় এ রকম গুরুতর অনিয়ম করার সুযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়টিও সরকারি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
অধ্যক্ষ ও জিবির সদস্য সচিবের বক্তব্য : এসব অভিযোগের বিষয়ে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির (জিবি) সদস্য সচিব ও অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম যুগান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি স্কুলে জিবিই সব। তাই জিবিতে আমার লোক থাকলে কাজ ভালো হবে- কেউ কেউ এমন ভাবতেই পারেন। এ চিন্তা থেকে কাউকে আমি বিরত রাখতে পারব না। তবে এটা ঠিক দুর্নীতিবাজরা কমিটিতে দুর্র্নীতিবাজ চাইবে- এটা স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, স্কুলে বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ হয়ে থাকে। তবে তা পরীক্ষার মাধ্যমে কমিটিতে দিয়েছে। ২০০৭ সালে অবৈধ ভর্তির ঘটনায় বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে একবার ‘বিপদে’ পড়তে হয়েছিল। তবে পরে বাড়তি ভর্তির যে কথা উঠেছে তা জিবির সিদ্ধান্তেই হয়েছে। আবার বিগত ২ বছর এ গভর্নিং কমিটি চায়নি, তাই ভর্তি করা হয়নি। তবে এ ধরনের ভর্তি স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবসময়ই হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের আয়-ব্যয়ের কার্যক্রমও কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়ে থাকে। আমি তাদের সিদ্ধান্ত শুধু বাস্তবায়ন করি মাত্র।’

No comments

Powered by Blogger.