এবার হার মেনেছে কালো বিড়াল by শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার

বাংলাদেশ রেলওয়ের খালাসি পদে নিয়োগ অনিয়মের কাছে এবার হার মেনেছে আলোচিত নিয়োগ বাণিজ্যে ‘কালো বিড়াল’। চলতি মাসে সম্পন্ন হওয়া এক হাজার ৪৪১ জন খালাসি নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ৩০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
এই নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের পিএস (একান্ত সচিব) কিবরিয়া মজুমদার, ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) মোশাররফ হোসেন, মন্ত্রীর চালক রিপন ও তার নিকটাত্মীয়সহ রেলের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জড়িতদের তালিকায় আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- নিয়োগ কমিটির সদস্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ওয়ার্কস ম্যানেজার ফকির মহিউদ্দিন, রেলের শ্রমিক লীগ সভাপতি হুমায়ুন কবির ও একই দলের নেতা শেখ লোকমান ও সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। যদিও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা সবাই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে উল্লিখিত সব তথ্য।
খালাসি নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি ইতিমধ্যেই রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। রেলের ডিজিকে এক মাসের মধ্যে পুরো ঘটনা তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকার এক আলোচনা সভায় তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পেটের ভেতর থেকে আলাদা মন্ত্রণালয় হয়েছে। এটাই বড় সফলতা। এখন থেকে রেলওয়ে দুর্নীতি চলবে না। রেলের দুর্নীতির হোতা- কালো বিড়ালদের খুঁজে বের করতেই হবে। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের তিন মাস না যেতেই রেলের ওয়েম্যান ও খালাসিসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দুর্নীতি অভিযোগ ওঠে। চাকরি দেয়ার নামে প্রার্থীদের কাছ থেকে গণহারে টাকা আদায় করে নেয়ার পথে রাজধানীর বিজিবি সদও দফতর গেটে বস্তভর্তি ৭০ লাখ টাকাসহ ধরা পড়েছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রীর পিএস ওমর ফারুক ও পূর্বাঞ্চলের জিএম ইউসুফ আলী মৃধা। পাশাপাশি রেলমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে জিএমসহ পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তখন সেই নিয়োগও স্থগিত করা হয়। ওই সময় এই নিয়োগ বাণিজ্যকে ‘কালো বিড়াল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন দেশের মানুষ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবারের খালাসি পদে নিয়োগে টাকা দিয়েও চাকরি না হওয়ায় এখন হাজার হাজার প্রার্থী ধরনা দিচ্ছেন রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী শ্রমিক লীগ নেতাসহ বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে। পূর্বাঞ্চল রেলের সদর দফতর সিআরবিতেও প্রতিদিন এ ধরনের প্রার্থীর দেখা মিলছে। জমিজমা বিক্রি করে দালালদের হাতে টাকা দিলেও শেষ পর্যন্ত চাকরি হয়নি। এখন আবার তারা টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না। কেউ কেউ আবার অর্ধেক টাকা ফেরত দিচ্ছেন। কোনো কোনো প্রার্থীর টাকা ফেরত না দিলেও বলা হচ্ছে পরবর্তী নিয়োগের সার্কুলার এলে তাদের চাকরি হবে।
আরও জানা গেছে, ২০১০ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে ১ হাজার ৪৪১ জন খালাসি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এই নিয়োগ আহ্বান করার পর ৪০ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৩৬ হাজার নিয়োগপত্র চূড়ান্ত করা হয়। ২০১২ সালে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এর আগে-পরেই শুরু হয় নিয়োগ বাণিজ্য। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র অভিযোগ করে বলেছে, রেলওয়েতে খালাসি পদে নিয়োগের জন্য মন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৪০০ জনের একটি তালিকা দেয়া হয়। রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ৭ সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া হয় ১০৬ জনের তালিকা। এই তালিকার যারা চাকরি পেয়েছেন তারাও বিভিন্ন মাধ্যমকে দিয়েছেন টাকা। টাকা ছাড়া চাকরি হয়েছে এমন প্রার্থীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। সূত্র জানায়, ১ হাজার ৪৪১ জনের মধ্যে অন্তত ১ হাজার জনের চাকরি হয়েছে টাকার বিনিময়ে। প্রতি পদের বিপরীতে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়। এ হিসেবে গড়ে প্রতি পদের বিপরীতে ৩ লাখ টাকা করে ১ হাজার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্য হয়েছে অন্তত ৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক লীগের সিন্ডিকেট অন্তত ১৫ কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। বাকি টাকা বিভিন্ন মাধ্যমের পকেটে গেছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রীর পিএস কিবরিয়া মজুমদার মঙ্গলবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, ‘যেখানে মন্ত্রী আছেন সেখানে বাণিজ্য তো দূরের কথা নিয়োগের কোনো ধাপে আমার জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না। সংসদীয় কমিটিতে আমার নামে কোনো আলোচনাই হয়নি। অথচ কোনো কোনো পত্রিকা আমার নাম লিখে দিল। তাছাড়া নিয়োগের ফলাফল ঘোষণা করা হয় ২৮ এপ্রিল। আমি ১৯ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ছিলাম দেশের বাইরে।’ কিবরিয়া মজুমদার বলেন, ‘সারা দেশ থেকে এমপি রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন জনের সুপারিশে ৩ হাজার জনের একটি তালিকা নিয়োগ কমিটিকে দেন মন্ত্রী মহোদয়। এর মধ্যে মাত্র ৪০০ জনের নিয়োগ হয়েছে বলে আমি জানি। এক্ষেত্রে মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের কোনো লোক একটি টাকা নিয়েছে এমন অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। এর বাইরে যেসব নিয়োগ হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে বাণিজ্য হয়েছে কী হয়নি সে বিষয়ে আমি বলতে পারব না।’
এছাড়া রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির মঙ্গলবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা দেশের ৬০টি সংগঠনের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে ৬০০ জনের তালিকা মন্ত্রী মহোদয়কে দিয়েছিলাম। এই তালিকা থেকে চাকরি দেয়া হয়েছে মাত্র ১৫০ জনকে। সারা দেশের ৬০টি সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক যদি একজন করেও তালিকায় নাম দেন তবে তারা ১২০ জন লোককে চাকরি দিতে পারেন। পোষ্য কোটা হিসেবেও তো এসব চাকরি পাওয়া যায়। আর শ্রমিক রাজনীতি করি, তাই শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের জন্য চাকরির জন্য স্বাভাবিকভাবেই সুপারিশ করেছি। এটা আমাদের ন্যায্য। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়ায় সারা দেশের শ্রমিক নেতা ও সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমাদের ভর্ৎসনা করেছেন। কোনো শ্রমিক নেতা টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছেন বা টাকা নিয়ে চাকরি না দিয়ে সেই টাকা আÍসাৎ করেছেন এমন অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রদত্ত তালিকার যেসব লোককে চাকরি দেয়া হয়েছে তা মোট নিয়োগের ১০ শতাংশও নয়। বাকি ৯০ শতাংশ যে চাকরি হয়েছে সেগুলো কিভাবে হয়েছে খবর নেন। মন্ত্রী, এমপি ও রাজনৈতিক নেতাদের নামে যেসব চাকরি হয়েছে, নিয়োগ কমিটির যারা নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা বড় ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকির আশ্রয় নিয়েছেন। যে কারণে শ্রমিক বা পোষ্যরা আইনত বা ঠিকভাবে চাকরি পাননি। এই ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রে যে বাণিজ্য হয়নি সে বিষয়টি উড়িয়ে না দিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তো বাংলাদেশের ট্রাডিশন’।
তালিকা পর্যবেক্ষণ : নিয়োগ তালিকায় দেখা গেছে, এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি কোনো জেলা কোটা। এক জেলার প্রার্থীকে অন্য জেলায় আবার ওই জেলার প্রার্থীকে এই জেলায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তালিকায় কোন কোন কোটায় কতজন নিয়োগ দেয়া হয়েছে সে বিষয়টিও স্পষ্ট করা হয়নি। দেশের ৬৪ জেলা থেকে নিয়োগ হলেও দেখা গেছে, কোনো কোনো জেলা বৈষম্যের শিকার হয়েছে। কোটা অনুযায়ী যতটি পদ পাওয়ার কথা ছিল তত পদ পায়নি। তবে এ ক্ষেত্রে ভাগ্যবান জেলা হচ্ছে রেলমন্ত্রীর কুমিল্লা জেলা। এ জেলার কোটা অনুযায়ী ৫৩ জন ছাড়াও বাইরের জেলায়ও নিয়মভঙ্গ করে ঢোকানো হয়েছে কুমিল্লার প্রার্থীকে। এ ধরনের অন্তত ১৪ জনের হিসাব পাওয়া গেছে। আবার চট্টগ্রাম জেলার ২৫ জনের কোটায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে বাইরের জেলার দু’জনকে। ঢাকা জেলাও এ ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছে।
নিয়োগ তালিকা পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার জন্য কোটা সংরক্ষিত ছিল ২৫ জন। কিন্তু এ জেলায় বাইরের জেলার দু’জন নিয়োগ দেয়া হয়। এরা হচ্ছেন আবদুল হামিদ, পিতা রফিকুল ইসলাম, রোল কুমিল্লা/১০৮৯, মোহাম্মদ আবু নাছির, পিতা মকবুল সর্দার, রোল চাঁদপুর/২৮৮। একইভাবে কক্সবাজারে ২০ জন কোটার মধ্যে ১০ জনই বাইরের জেলা থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন শাওন চক্রবর্তী, পিতা ফনি ভূষণ চক্রবর্তী, রোল চট্টগ্রাম/১৫৬, মোহামম্মদ শাহ আলম, পিতা মৃত মফিজুল হক, রোল চট্টগ্রাম/১৮৫৪, কামরুন্নাহার, পিতা কাজী শামসুল হুদা, রোল নোয়াখালঅী/১০৬৬, আবদুল বাকী, পিতা মোহাম্মদ আবদুল মালেক, রোল নোয়াখালী/১১৫০, মোহাম্মদ ওমর ফারুক পিতা শফিকুর রহমান, রোল ফেনী/২০৬, মোজাম্মেল হক, পিতা মোমিনুল হক, (পোষ্য কোটা) রোল ফেনী /৮৩১, আবুল হাশেম, পিতা মো. আলী নুর, রোল ফেনী/৮৪০, মনোয়ারা বেগম, পিতা মাহফুজুর রহমান, রোল বান্দরবান/০১৪, মোহাম্মদ আবু তাহের, পিতা মৃত মো. আবু সৈয়দ, রোল লক্ষ্মীপুর/(অস্পষ্ট)। বান্দরবান জেলা কোটার ৩ জনের মধ্যে দুই জনই বাইরের জেলার। এরা হচ্ছেন সুমন কান্তি চৌধুরী, পিতা মৃত কেদার চৌধুরী, রোল চট্টগ্রাম/৩৪১৫, মো. আনোয়ার উল্লাহ, পিতা মৃত ওয়াহিদুর রহমান, রোল ফেনী/৩০৯। রাঙ্গামাটিতে ৬ জন। এর মধ্যে একজন বাইরের। মো. মারুফ হাসান চৌধুরী, পিতা মো. মাবুদ চৌধুরী, রোল নোয়াখালী/১৯৯। অভিযোগ আছে এই মাবুদ চৌধুরী একজন লোকোমাস্টার। তেল চুরির অভিযোগে তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন।
ভাগ্যবান কুমিল্লা জেলা : তবে কুমিল্লা জেলা ভাগ্যবান। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের এ জেলা কোটার ৫৩ জনের মধ্যে ৫৩ জনই জেলা থেকে চাকরি পেয়েছেন। আবার বাইরের জেলায়ও অন্তত ১৪ জন কৌশলে অন্যায় ও অবৈধভাবে ঢোকানো হয়েছে। মন্ত্রী কুমিল্লার তাই কুমিল্লায় অন্য জেলার কোনো প্রার্থী ঢুকতে পারেননি।
ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলা কোটার ২৪ জনের মধ্যে মধ্যে দু’জন বাইরের জেলার। মোহাম্মদ সোহরাব আলী, পিতা মৃত আলী আকবর, রোল কুমিল্লা/১২৬৫, মো. অলিউল্লাহ, পিতা মৃত জয়নাল আবেদীন, রোল কুমিল্লা/১৩১১। নোয়াখালী ৩০ জন, চাঁদপুর ২৭ জন কোটা অনুযায়ী নিয়োগ পান। লক্ষ্মীপুর জেলা কোটার ১৮ জনের মধ্যে ১ জন বাইরের জেলার। তিনি হলেন অরুণ চন্দ্র দাশ, পিতা মৃত গোপাল চন্দ্র দাশ, রোল কুমিল্লা/২০২। ফেনীর ১৪ জনের মধ্যে ১৪ জনই নিয়োগ পান।
কোটা অনুযায়ী পাবনা ২৬ জন, সিরাজগঞ্জ ৩১ জন, গাইবান্ধা ২৫ জন, পঞ্চগড় ১০ জন, নীলফামারী ১৯ জন, রাজশাহী ২৬ জন, বগুড়া ৩৪ জন, জয়পুরহাটে ১০ জন চাকরি পান। নওগাঁ জেলা কোটার ২৮ জনের মধ্যে দু’জন বাইরের জেলার। এরা হচ্ছেন মো. আতিকুর রহমান, পিতা আবদুল খালেক, রোল (অস্পষ্ট) ৫৬, মো. সাজেদুল ইসলাম, পিতা আবদুল ওয়াহাব, রোল (অস্পষ্ট)/১৩৮। ঠাকুরগাঁও জেলা কোটার ১৩ জনের মধ্যে একজন বাইরের জেলার। তার নাম মো. গিয়াস উদ্দিন, পিতা মৃত সোলেমান, রোল দিনাজপুর/৫৬৯।
কুড়িগ্রাম জেলায় ২০ জনের মধ্যে একজন বাইরের জেলার। তিনি হলেন মো. রবিউল ইসলাম, পিতা মৃত আছির উদ্দিন, রোল দিনাজপুর/৭৭১। বরিশালে ২৭ জনই নিয়োগ পেয়েছেন। ভোলা জেলার ১৯ জনের মধ্যে চারজন বাইরের জেলার। এরা হচ্ছেন সিদ্দিকুর রহমান পিতা- মৃত আবদুর রহমান, রোল বরিশাল/৮৬, এসএম ওমর ফারুক পিতা- একেএম খলিলুর রহমান, রোল ঝালকাঠি/১৮৬, মোহাম্মদ মেহেদী হাসান সোহেল পিতা-শাহজাহান তালুকদার রোল (অস্পষ্ট)/৪১ মো. নাজমুল হক পিতা- শামসুল হক রোল পিরোজপুর/১৯৪। ঝালকাঠি জেলায় ৮ জনই নিয়োগ পেয়েছেন। পিরোজপুর জেলা কোটার ১৩ জনের মধ্যে ২ জন বাইরের। এরা হলেন মো. করিম মোল্লা পিতা- মোজাহের আলী রোল বরগোনা/১২৩। হারুনর রশীদ পিতা- হাজী আবদুল্লাহ রোল বরগোনা/১৫০। যশোর জেলার ২৯ জনই নিয়োগ পেয়েছেন। ঝিনাইদহ জেলা কোটার ১৮ জনের মধ্যে বাইরের জেলার ২ জন। এরা হচ্ছেন মোহাম্মদ আশানুর রহমান পিতা- মো. আলতাফ হোসেন, রোল যশোর/১৪১, মোহাম্মদ আরিফ হোসেন পিতা- মু. খাইরুল ইসলাম রোল কুষ্টিয়া /৩৯২, মাগুরার কোটার ৯ জনের মধ্যে একজন বাইরের জেলার। তিনি হচ্ছেন মো. খাইরুল ইসলাম পিতা-মৃত আজিজুর রহমান রোল কুষ্টিয়া/১৫৬। কোটা অনুযায়ী নড়াইলে ৮ জন, কুষ্টিয়ায় ২০ জন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১২ জনের নিয়োগ হয়েছে। মেহেরপুর জেলার ৭ জনের মধ্যে ১ জন বাইরের। তিনি হচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম পিতা-মৃত আমিরুল ইসলাম রোল কুষ্টিয়া/২২৩।
ঢাকা জেলা ৯৮ জন। এর মধ্যে ১৭ জন বাইরের জেলা থেকে ঢোকানো হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ শফিকুর রহমান পিতা-জিকেএম ফয়েজ আহাম্মদ। ঢাকা/১৪০। ফয়েজ আহমদ রেলওয়ের ঢাকা রিজার্ভেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। তার বাড়ি নোয়াখালী হলেও ঢাকার কোটায় চাকরি দেয়া হয়। ঢাকায় বাইরের জেলা থেকে চাকরি পাওয়া অন্যরা হলেন- কাঈম উদ্দিন কিবরিয়া পিতা- হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম রোল গোপালগঞ্জ/১৩৭, মুকুল শেখ পিতা- মো. জাহাঙ্গীর শেখ গোপালগঞ্জ/১৮৯, আউয়াল মুন্সি পিতা-গজের আলী রোল ফরিদপুর/১১৩, মোহাম্মদ নাজমুল হক সবুজ পিতা-মৃত দেলোয়ার হোসেন রোল ময়মনসিংহ/০২, মোহাম্মদ সুবল মিয়া পিতা-একেএম ফজলুল হক রোল ময়মনসিংহ/৩৮৯, মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম স্বপন পিতা-মো. আবদুল জলিল, রোল ময়মনসিংহ/৪৬৩, মো. আবু মাসুদ পিতা-মো.আবদুল মজিদ ময়মন/৫৩১, মো. আশরাফুল আলম পিতা-মোহাম্মদ আক্কাছ আলী রোল ময়মন/৮৩৫, মিজানুর রহমান পিতা-শুক্কুর আলী রোল মানিকগঞ্জ/২৫২, সিরাজুল ইসলাম পিতা-আজগর আলী রোল রাজবাড়ি/১০৩, মো. ফরিদ মিয়া পিতা-মো. হাতেম আলী রোল টাঙ্গাইল/২৫৪, মোহাম্মদ রেজাউল করিম পিতা-মো. আনোয়ার হোসেন রোল টাঙ্গাইল/২১৩/১, মো. সোলায়মান পিতা-মৃত আজিজুর রহমান রোল টাঙ্গাইল/৩০৮, যোবায়ের আহাম্মদ পিতা-আবদুল হামিদ তালুকদার রোল টাঙ্গাইল/৩২৭, মো. সাইফুল আলম পিতা-মৃত মো. নাজিম উদ্দিন মিয়া রোল টাঙ্গাইল/৫২২, মো. সোহেল রানা, পিতা-মো. সরুজ আলী রোল কিশোরগঞ্জ/০৬।
এছাড়া গাজীপুর ২৩ জন, মানিকগঞ্জ ১৬ জন নিয়োগ পেয়েছেন। মুন্সীগঞ্জ জেলায় ১৫ জনের মধ্যে বাইরের একজন নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি হলেন মো. রমজু মিয়া পিতা-মো. আলাউদ্দিন রোল টাঙ্গাইল/২০৮।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কোটার ২৫ জনের মধ্যে বাইরের জেলার রয়েছেন ৫ জন। এরা হচ্ছেন- আসমা আক্তার পিতা-মৃত মো. পরশি আলী, রোল মানিকগঞ্জ/১৬৪, মো. খোরশেদ আলম পিতা-মো. আজহার আলী রোল জামালপুর/০৩৮, মো. জিয়াউল হক পিতা-মো. কুয়েদ আলী রোল জামালপুর/২৩১, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম পিতা-মো. নুরুল ইসলাম, রোল টাঙ্গাইল/৫১১, মো. রিপন মিয়া পিতা-মো. আমজাদ হোসেন, রোল টাঙ্গাইল/৫৫৮। নরসিংদী ২২ জনই নিয়োগ পেয়েছেনে কোটা অনুযায়ী।
ফরিদপুর জেলার ১৮ জনের মধ্যে বাইরের ২ জন। এরা হলেন মো. আবদুল আলিম পিতা-আবদুস সাত্তার, রোল জামালপুর/৩৩০, মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন পিতা-চাঁদ মিয়া, রোল জামালপুর/৫৮১। গোাপালগঞ্জ ১৩ জন, মাদারীপুর ১৩ জন, জামালপুর ২৬ জন কোটা অনুযায়ী নিয়োগ পেয়েছেন। শেরপুর জেলার ১৬ জনেরর মধ্যে দু’জন বাইরের। এরা হলেন মো. আলমগীর হোসেন মিলন পিতা-খলিলুর রহমান রোল ময়মনসিংহ/৪৪৯। মো. রাশেদুজ্জামান পিতা- মো. নজরুল ইসলাম রোল জামালপুর/৭০০। কিশোরগঞ্জ ২৯ জন, নেত্রকোনা ২৩ জন, ময়মনসিংহ ৫২ জন, টাঙ্গাইল ৩৮ জন নিয়োগ পেয়েছেন।
সিলেট জেলার ৩০ জনের মধ্যে বাইরের জেলার একজন নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি হলেন শংকর সিংহ, পিতা-মৃত বাবাসেনা সিংহ, রোল মৌলভীবাজার/২৩৫। হবিগঞ্জ-২০ জন, মৌলভীবাজার ১৯ জন, সুনামগঞ্জ ২৩ জন। এর মধ্যে বাইরের জেলার চারজন নিয়োগ পান। এরা হচ্ছেন মো. আবদুর রহমান, পিতা-তজমুল আলী সিলেট/২৫৭, প্রসেনজিৎ মুখার্জি, পিতা-ব্রজকিশোর মুখার্জি, রোল মৌলভীবাজার/০৭৩, জুনাঈদ আহম্মেদ, পিতা- আঞ্জব আলী, রোল মৌলভী/১৭২ ও সৌরভ সিংহ, পিতা-বাপ্পি সিংহ, রোল মৌলভী-১৮০।
যারা তালিকা দিয়েছেন : অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেলওয়ের ১ হাজার ৪৪১ জন খালাসি নিয়োগের জন্য রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের পক্ষ থেকে ৪০০ জনের একটি তালিকা দেয়া হয়েছিল। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ আওতাভুক্ত সাতটি সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া হয় ১১৬ জনের একটি তালিকা। মন্ত্রীর দেয়া ৪০০ জনের তালিকার শতভাগ নিয়োগ পায়। আর সংগ্রাম পরিষদের দেয়া ১০৬ জনের তালিকা থেকে নিয়োগ দেয়া হয় ৩৮ জনকে। এর মধ্যে সংগ্রাম পরিষদের আওতাভুক্ত রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন ২১ জনের তালিকা দিলেও সেখান থেকে ৫ জন, রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ও কর্মচারী ইউনিয়নের দেয়া ৮ জনের তালিকা থেকে ৩ জন, রেলওয়ে কারিগর পরিষদের ২২ জন থেকে ৬ জন, রেলওয়ে লোকো রানিং কর্মচারী সমিতির ২০ জন থেকে ১২ জন, রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগের ১১ জন থেকে ৫ জন, রেলওয়ে শ্রমিক পার্টির ১৮ জন থেকে ৪ জন, রেলওয়ে শ্রমিক জোটের তালিকার ৬ জন থেকে ৩ জনের নিয়োগ হয়। এর মধ্যে ভাগ্যবান হচ্ছে রেলওয়ে লোকো রানিং কর্মচারী সমিতি। এই সংগঠন ২০ জনের মধ্যে ১২ জন খালাসি পায়।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, রেলমন্ত্রীর পিএস এপিএস গাড়িচালক শ্রমিক লীগ নেতারা ছাড়াও নিয়োগ কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য পূর্বাঞ্চল রেলে কর্মরত ওয়ার্কস ম্যানেজার ফকির মহিউদ্দিন সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেন। নিয়োগপ্রাপ্ত পদগুলো তার বিভাগের আওতাভুক্ত হওয়ায় এক্ষেত্রে তিনি বেশ প্রভাব খাটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। রেলের এক কর্মচারী আবদুর রবসহ কয়েকজনের মাধ্যমে তিনি চাকরি দেয়ার জন্য টাকা নিয়েছেন। ১২ মে চট্টগ্রাম ওয়ার্কশপ পরিদর্শনে গেলে সেখানে চাকরিবঞ্চিত ও রেলওয়ের অনেক সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারী তার বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করেন। চাকরির জন্য সিআরবিতে কর্মরত আবদুর রব নামে এক অফিস সহকারীকে দেয়া এক লাখ টাকার একটি চেকও পরে চাকরি না হওয়ায় চেকদাতাকে সেই চেক আবার ফিরিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ আছে। এ সংক্রান্ত চেকের ফটোকপি যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এ প্রসঙ্গে ফকির মহিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, অনেকে তার কাছে চাকরির জন্য এসেছেন। কিন্তু যারা পরীক্ষায় টিকেছেন তাদের চাকরি হয়েছে। যারা টিকেনি বা যাদের চাকরি হয়নি তারা হয়তো এ বদনাম ছড়াচ্ছে। কেউ যদি তার নামে চাকরি দেয়ার কথা বলে চেক নেয় বা আবার ফিরিয়ে দেয় সে দায়-দায়িত্ব তিনি নিতে পারেন না বলেও জানান। তবে তিনি বলেছেন, তিনি নিয়োগ কমিটির একজন সাধারণ সদস্যমাত্র। তার পক্ষে কতটুকু দুর্নীতি-অনিয়ম করা সম্ভব বা মন্ত্রীকে কেউ যদি তার বিরুদ্ধে বলে থাকেন কেন বলেছেন, তা তারাই ভালো জানেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। ফকির মহিউদ্দিন বলেন, চাকরির নামে টাকা নেয়া হয়েছে, চাকরি না হলেও টাকা ফেরত দেয়া হয়নি- এমন অভিযোগ তাদের কাছেও আছে। তবে মাঝখানে হয়তো দালাল সৃষ্টি হয়ে নিয়োগকে পুঁজি করে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
সংগ্রাম পরিষদের বক্তব্য : রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়কারী মোখলেছুর রহমান যুগান্তরকে বলেছেন, খালাসি নিয়োগে রেলে বেপরোয়া নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতি হয়েছে। এই বাণিজ্য ‘কালো বিড়ালকেও’ হার মানিয়েছে। এভাবে টাকার বিনিময়ে প্রতিটি পদে চাকরি হলে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যেতে বাধ্য। কারণ যারা টাকা দিয়ে চাকরিতে ঢুকছে তাদের চাকরি করার চেয়েও মন-মানসিকতা থাকবে কীভাবে সেই টাকা উঠাবে। এক্ষেত্রে তারা নিজেরাও জড়িয়ে যাবে দুর্নীতিতে। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরের আমলে ৭৫ পদে নিয়োগ হয়েছিল। তখন নিয়োগ নিয়ে একটি কথাও উঠেনি।

No comments

Powered by Blogger.