পুরোনোরা চান না নতুনেরা আসুক by একরামুল হক

কাগজে-কলমে আছে ১৩ হাজার। বাস্তবে চলছে আট হাজার। গত মঙ্গলবার থেকে পুলিশের অভিযানের কারণে রাস্তা থেকে উঠে গেছে নতুন করে নামানো সাড়ে তিন হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ফলে ৬০ লাখ মানুষের চট্টগ্রাম নগরে গণপরিবহনে সংকট তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অটোরিকশার স্বল্পতার কারণে যাত্রী ভোগান্তি যেমন আছে, তেমনি চালকেরা ইচ্ছামতো বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া আদায় করছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।
পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও অটোরিকশার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরোনো অটোরিকশার মালিকেরা নতুন করে চট্টগ্রাম নগরে আর কোনো অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হোক তা চান না। এ নিয়ে তাঁরা হাইকোর্টে চারটি রিট করেছেন। দুই বছর আগে সরকার নতুন চার হাজার অটোরিকশা রাস্তায় নামানোর সিদ্ধান্ত নিলেও মামলার কারণে বিআরটিএ নিবন্ধন দিতে পারেনি। চারটি রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টির ফয়সালা হবে না বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বিআরটিএ ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে ১৩ হাজার অটোরিকশার নিবন্ধন দেয়। ২০১১ সালে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ওই অটোরিকশাগুলোর আয়ুষ্কাল ১১ বছর নির্ধারণ করে। এ বছর আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পর এসব অটোরিকশার ভাগ্যে কী ঘটবে বা সরকারের নতুন পরিকল্পনা কী, তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি বিআরটিএর কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকা থেকে ১১ বছর পূর্ণ হওয়া সব অটোরিকশা উঠিয়ে দিয়ে নতুন অটোরিকশা নামানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু একাধিক পক্ষ বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে যায়। তাই আদালতের সিদ্ধান্ত মেনেই পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, পুরোনো অটোরিকশার মালিকদের করা চারটি রিটের কারণে নগরে নতুন করে অটোরিকশার নিবন্ধনপ্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। ফলে চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিয়ে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। একই সঙ্গে মিটারের ব্যবহার না হওয়ায় গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, সরকার ২০১৩ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রামে চার হাজার ও ঢাকায় পাঁচ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা নামানোর ঘোষণা দিয়েছিল। এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে পুরোনো অটোরিকশার মালিকেরা তাঁদের অটোরিকশার আয়ুষ্কাল বাড়ানো এবং নতুন অটোরিকশার নিবন্ধন না দিতে হাইকোর্টে পৃথক চারটি রিট করেন।
পুলিশ ও অটোরিকশার মালিক সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের পর পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রামে ৩ হাজার ৫২৫টি নতুন অটোরিকশা নামানো হয়। এ গাড়িগুলো এত দিন চলছিল উচ্চ আদালতের নির্দেশে। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নতুন অটোরিকশা চালানোর জন্য করা রিট গত বৃহস্পতিবার খারিজ করে দেন। এরপর চট্টগ্রাম নগরে নিবন্ধনহীন সব অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে বিআরটিএর সহকারী পরিচালক তৌহিদুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে ১৩ হাজার অটোরিকশা চালানোর অনুমতি দেয় সরকার। এ গাড়িগুলোর আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে সরকার চার হাজার অটোরিকশা নামানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতে রিটের কারণে নতুন গাড়ির নিবন্ধনপ্রক্রিয়া থমকে গেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, পুরোনো গাড়ির আয়ুষ্কাল বাড়ানো ও নতুন গাড়ির নিবন্ধনপ্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে চট্টগ্রাম থেকে চারজন হাইকোর্টে চারটি রিট করেন। একটি রিটের বাদী মো. মহিউদ্দিন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ১৩ হাজার অটোরিকশাই সচল রয়েছে। তাই নতুন করে নিবন্ধন না দিতে এবং অটোরিকশার আয়ুষ্কাল বাড়াতে তাঁরা হাইকোর্টে রিট করেছেন। শুনানি শেষে এখন তাঁরা রায়ের জন্য অপেক্ষা করছেন।
তবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ যানবাহন শাখার উপকমিশনার মাসুদ-উল-হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ১৩ হাজার অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হলেও এখন আট হাজারের মতো চলছে। লক্কড়ঝক্কড় হয়ে যাওয়ায় বাকিগুলো রাস্তায় নেই।
নিবন্ধনহীন অটোরিকশা সংগঠনের নেতা হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম মহানগরে চার হাজার অটোরিকশা নামানোর ঘোষণা দেয়। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, সাড়ে তিন হাজার অটোরিকশা রাস্তায় নামে। কিন্তু পুরোনো অটোরিকশা মালিক সংগঠনের করা চারটি রিটের কারণে নতুন করে নামানো গাড়ির নিবন্ধন করা যায়নি। এ কারণে যাত্রীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.