চীনের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীদের উসকানি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ভবিষ্যৎ অর্থনীতির অন্যতম বৃহৎ উৎস দক্ষিণ চীন সাগরের নিয়ন্ত্রণে ভাগ বসাতে অস্থির হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিতর্কিত ওই সমুদ্রসীমায় চীনের অব্যাহত তৎপরতা ও সামরিক স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে আর চুপ থাকতে চায় না ওয়াশিংটন। তবে বেইজিংয়ের সঙ্গে সরাসরি বিরোধে যেতেও পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে চীনের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে একজোট করার ‘উসকানি’ কৌশল নিয়েছে পেন্টাগন। আশিয়ান রাষ্ট্রগুলোকে সংগঠিত করে বেইজিংকে প্রতিহত করাকেই এখনকার কার্যকর উপায় হতে পারে। এতে সাপও মরবে, আবার লাঠিও ভাঙবে না। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বৃহস্পতিবার এসব কথা জানানো হয়েছে। প্রতিবেশীদের একজোট করতে চীনের কার্যক্রম প্রকাশ করার কৌশল নেয়। গত সপ্তাহে সিএনএনের এক সাংবাদিককে নিয়ে মার্কিন নজরদারি বিমান পি-৮এ ঘুরে আসে স্পার্টলি দ্বীপপুঞ্জে। এ সময় ওই অঞ্চলে বেইজিংয়ের সামরিক স্থাপনাগুলোর ভিডিও করে গোয়েন্দা বিমান। চীনা নৌবাহিনী ওই মার্কিন বিমানকে আটবার সতর্ক করে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণকে ‘দায়িত্বহীন ও ভীষণ বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করে। পরদিন ভিডিওটি প্রকাশ করার মাধ্যমে পেন্টাগন বুঝিয়ে দিল দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর অবস্থানে। ভিডিও অনুযায়ী, চীন চলতি বছরেই বিতর্কিত স্পার্টলি দ্বীপপুঞ্জে ১৫০০ একর জায়গা নিয়ে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করছে। এতে রয়েছে পাঁচটি আউটপোস্ট। বসানো হয়েছে রাডার ও এয়ারস্ট্রিপ। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ডজনখানিক ড্রিল নৌযান নিয়ে সাগর খোঁড়া হচ্ছে। অথচ এ এলাকার মালিকানার দাবি করছে ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, ব্রুনেই, তাইওয়ান ও মালয়েশিয়া। বিতর্কিত এলাকায় চীনের গায়ের জোর ফলানো সামনে এনে এশিয়ান মিত্রদের উসকে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
আজ সিঙ্গাপুরে এশিয়ার নিরাপত্তাবিষয়ক সম্মেলন সাংগ্রিলা ‘ডায়লগ’-এ এই ইস্যুই হতে যাচ্ছে প্রধান আলোচ্য বিষয়। এতে উপস্থিত থাকছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাস্টন কার্টার। নাম না প্রকাশ করার শর্তে মার্কিন এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এই দেশগুলোকে ইস্যুটা (দক্ষিণ চীন সাগর) নিজেদের মনে করা দরকার। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এ বিষয়ে চীনকে চ্যালেঞ্জ করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, আশিয়ানের ১০ রাষ্ট্রকে এখনই ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে হবে। চার বছর অপেক্ষা করলে দেখা যাবে সবকিছুই সম্পন্ন হয়ে গেছে। মার্কিন মিত্র ফিলিপিন্স এ ব্যাপারে উৎসাহী হলেও চীনের ওপর হস্তক্ষেপ প্রশ্নে আশিয়ান দ্বিধাবিভক্ত রয়েছে। যদিও গত মাসে এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছে, সমুদ্রসীমানায় চীনা কার্যক্রমে পারস্পরিক আস্থা নষ্ট হবে ও আঞ্চলিক শান্তি বিনষ্ট হবে। সিঙ্গাপুরের ইন্সটিটিউট অন সাউথইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের গবেষক ইয়ান স্টোরির মতে, নিকট ভবিষ্যতে দক্ষিণ চীন সাগরে আশিয়ান লেভেলের কোনো ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, ‘এটা একেবারেই ফ্যান্টাসি।’ এদিকে চীন ভীত হয়ে তার কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে যাবে- এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দক্ষিণ চীন সাগরের ৯০ শতাংশই নিজেদের বলে দাবি করছে বেইজিং। মনে করা হচ্ছে ওই অঞ্চলে ব্যাপক পরিমাণে তেল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। মঙ্গলবারই তারা সেখানে দুটো বাতিঘরের উদ্বোধন করেছে এবং বার্ষিক সামরিক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জানিয়েছে, চীনা নৌবাহিনী সীমানার বাইরে আরও তৎপর হবে। সাগরের মুক্ত এলাকাতেও তারা নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

No comments

Powered by Blogger.