হারিয়ে যাচ্ছে পলাশের সুস্বাদু আনারসের সুখ্যাতি by মো. আশাদউল্লাহ মনা

স্বাদ ও গুণগত মানের কারণে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার রাবান এলাকার আনারসের সুনাম দেশ জুড়ে। কালের বিবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এর সুখ্যাতি ও চাহিদা। সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করায় কমে যাচ্ছে ফলন, ছোট হয়ে আসছে আকার। সেই সঙ্গে পোকা-মাকড়ের আক্রমণে কমে যাচ্ছে এর গুণগতমান। এর ফলে এ অঞ্চলের আনারসের চাহিদা কমে গেছে কয়েক গুণ। নানা গুণে সমৃদ্ধ সুগন্ধীযুক্ত সুস্বাদু এই আনারসের চাষ দিন দিন বাড়লেও প্রর্যাপ্ত সেচের অভাব ও সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করার কারণে এ বছর ফলন হয়েছে তুলনামূলকভাবে খুব কম। পাশাপাশি উৎপাদন ও সরবরাহ কম হওয়ায় আনারসের বাজার দরটাও কিছুটা বেড়ে গেছে। এলাকার কৃষকরা জানান, এ বছর বিঘা প্রতি আনারস চাষে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এখানকার মাটি ঢালু হওয়ায় বাগানে পানি ধারণের সুব্যবস্থা নাই। তাই কৃষকদের নির্ভর করতে হয় প্রাকৃতিক বৃষ্টির উপর। চাহিদা অনুযায়ী বৃষ্টির পানি না পাওয়ায় অধিকাংশ বাগানের আনারসের আকার ছোট হয়ে গেছে। আকারে ছোট হওয়ায় পাইকারি বাজারে এর চাহিদাও অনেক কমে গেছে। আর খরচ অনুযায়ী ফলন না হওয়ায় এখন হতাশায় ভুগছে এখানকার কৃষকরা। রাবান এলাকার স্থানীয় পাইকার ব্যবসায়ী শুকুমল চন্দ্র ধর বলেন, রাবান এলাকার ঘোড়াশাল জাতের আনারসের সুপরিচিতি অনেক। এক সময় এ এলাকার আনারস জেলার চাহিদা পূরণ করে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু দিনে দিনে এর আকার ছোট ও ফলন কম হওয়ায় বর্তমানে এই জেলার চাহিদাই পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর উপজেলার ১৪৫ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন এবং একই জমিতে বারবার একই ফসল চাষ করায় মাটির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার কারণে আনারস ফলনের এমন পরিবর্তন হয়েছে। এ ছাড়া জৈব ও রাসায়নিক সার, পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা, বাগান পরিষ্কার এবং প্রতিটি চারার নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় না রাখার কারণে ফলন কম ও এর আকার ছোট হয়ে আসছে। গুণে মানে সমৃদ্ধ, সুগন্ধীযুক্ত এই আনারসের আগের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশনাল কার্যক্রম করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

No comments

Powered by Blogger.