নিজের লাভের জন্য পদকে ব্যবহার করিনি -দুর্নীতির অভিযোগের জবাবে মনমোহন

এনএসইউআই সম্মেলনে মনমোহন
সাবেক ঘনিষ্ঠজনদের মুখে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর মুখ খুললেন সাবেক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। আত্মপক্ষ সমর্থন করে বললেন, সরকারি পদকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজেকে ধনবান করেননি; উপকার করেননি পরিবার বা বন্ধুদেরও।
তবে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের এই দুইবারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেছে, মানা গেল না-হয় মনমোহন নিজে দুর্নীতি করেননি। কিন্তু তাঁর সরকারের অন্যরা? তাঁদের অন্যায্য কর্মকাণ্ডের লাগাম টেনে ধরা কী তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
সাধারণভাবে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির জন্য দেশে-বিদেশে সুপরিচিত মনমোহনের বিরুদ্ধে সর্বশেষ অভিযোগ তোলা ব্যক্তি হচ্ছেন প্রদীপ বাইজাল। মনমোহনের আমলেই ভারতের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (টিআরএআই) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৬ সালে এই পদ থেকে অবসর নেন প্রদীপ।
প্রদীপের অভিযোগ, মুঠোফোনের তরঙ্গ লাইসেন্স বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে ২০০৯ সালে যে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি (টুজি কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত) ঘটে, তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয় তাঁর কাজের সময়েই। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ওই তরঙ্গ বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করতে যেসব নীতি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, তাতে বাদ সাধতে তাঁকে নিষেধ করেছিলেন স্বয়ং তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং নিজেই।
প্রদীপ এনডিটিভিকে গত মঙ্গলবার বলেন, তৎকালীন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী দয়ানিধি মারান যে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন, তা জানতেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন। প্রদীপের ভাষ্য, তিনি যখন লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে মারানের ‘আগে এলে আগে পাবেন’ নীতির ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন, মনমোহন তাঁকে (প্রদীপকে) বলেন, ‘আপনি কেন মন্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করছেন না?’
প্রদীপের ওই অভিযোগের ব্যাপারে মনমোহনের গতকালের জবাব ছিল সোজাসাপটা। গতকাল নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের ছাত্রসংগঠন ভারতের জাতীয় ছাত্র ইউনিয়নের (এনএসইউআই) কেন্দ্রীয় সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি আমার সরকারি পদকে নিজেকে ধনবান করার কাজে ব্যবহার করিনি। আমার পরিবার বা বন্ধুদের বেলায়ও একই কথা।’
মনমোহনের ওই মন্তব্যের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ‘আমি মানলাম (সাবেক) প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজ ছিলেন না। কিন্তু তাঁর মন্ত্রীরাও যেন তাঁরই মতো হন, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাঁরই ছিল।’
প্রদীপ বাইজালের আগে একই ধরনের অভিযোগ তোলেন মনমোহনের অন্তত আরও দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাঁরা হলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম উপদেষ্টা সঞ্জয় বারু এবং কয়লাসচিব পিসি পারাখ।
জাতীয় নিরীক্ষণ কর্তৃপক্ষের হিসাব মোতাবেক, এই ‘আগে এলে আগে পাবেন’ নীতির কারণেই ভারত সরকার টেলিযোগাযোগ খাত থেকে অন্তত ১ দশমিক ৭৬ লাখ কোটি রুপির রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। এ ঘটনাই তখন ‘টুজি কেলেঙ্কারি’ নামে পরিচিতি পায়। এর জের ধরে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী পদে মারানের উত্তরসূরি এ. রাজাকে কারাগারে যেতে হয়েছিল।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে: টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খণ্ডনের পাশাপাশি বিজেপিকেও একহাত নিয়েছেন মনমোহন সিং। এনএসইউআইয়ের সম্মেলনে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার কথা বলে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তিকেই এখন গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেসের বিভিন্ন কর্মসূচির বিরোধিতায় বিজেপি অতীতে সরব থাকলেও, এখন তারাই সেসব কর্মসূচি নিজেদের অবদান বলে চালিয়ে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাহুলের আক্রমণ: সুযোগ পেলেই মোদি সরকারকে আক্রমণ করতে ‘স্যুট বুট’ প্রসঙ্গ টানতে ছাড়ছেন না কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী। এনডিটিভির খবরে বলা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল জেলেদের একটি সমাবেশে তিনি বলেন, ‘মোদি এবং তাঁর পাঁচ-ছয়জন স্যুট পরা বন্ধুকে আমরা ভয় পাই না।’ এর আগে মঙ্গলবার কেরালায় এক সমাবেশে বিজেপি সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাহুল বলেছিলেন, ‘মোদির স্যুট বুট সরকারকে শুভ জন্মদিন জানাই।’

No comments

Powered by Blogger.