রানির ভাষণে যুক্তরাজ্যের ক্যামেরন সরকারের নীতি- মানবাধিকার, অভিবাসন ও ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রশ্নে কঠোর অবস্থান by তবারুকুল ইসলাম

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উদ্বোধনী অধিবেশন উপলক্ষে ২৮ মে
হাউস অব লর্ডসে ভাষণ দেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
তাঁর বাঁ দিকে বসা ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপ এবং
ডান দিকে যথাক্রমে প্রিন্স অব ওয়েলস প্রিন্স চার্লস ও
ডাচেস অব কর্নওয়াল ক্যামিলা l ছবি: এএফপি
মানবাধিকার, অভিবাসন এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার উদার নীতি থেকে সরে আসার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্যের ডেভিড ক্যামেরন সরকার। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সদ্য ক্ষমতায় ফেরা রক্ষণশীল সরকারের প্রথম বছরেই এসব বিষয়ে পরিবর্তিত নীতির প্রতিফলন ঘটবে। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকা প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠানে বিল আনছে সরকার। ২৮ মে বুধবার নতুন পার্লামেন্টের উদ্বোধন উপলক্ষে রানির দেওয়া প্রথাগত ভাষণে ক্যামেরন সরকারের এসব কর্মসূচি উঠে আসে। রীতি অনুযায়ী সরকারের লিখে দেওয়া ভাষণই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এমপিদের সামনে পাঠ করেন। ভাষণে সরকারের অর্থনৈতিক ও আইনগত মোট ২৬টি কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। বিরোধীরা সরকারের এসব নীতির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, সরকারের এমন রক্ষণশীল নীতি বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক বিশ্বে যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
অবৈধ অভিবাসী এবং বিদেশি সন্ত্রাসীদের যুক্তরাজ্য থেকে বিতাড়ন সহজতর করতে নতুন অভিবাসন আইন প্রণয়নের পাশাপাশি বিদ্যমান মানবাধিকার আইনেও বড় রদবদল আনবে ক্যামেরন সরকার। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের আদালতের দেওয়া রায় ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থাকায় অভিবাসন-সংক্রান্ত অনেক সরকারি সিদ্ধান্ত আটকে যায়। এই বাধা দূর করতে সরকার নিজস্ব মানবাধিকার আইনের উদ্যোগ নেবে। বলা হচ্ছে, এই আইন ইউরোপীয় মানবাধিকার আইনের অধীন হবে না। অন্যদিকে ক্যামেরনের সম্প্রতি দেওয়া ইঙ্গিতমতোই অবৈধ অভিবাসীদের আয় জব্দ করার পাশাপাশি আইনি সুযোগ না দিয়ে আগে দেশে ফেরত পাঠানোর বিধান রাখা হয়েছে নতুন অভিবাসন আইনে।
ধর্মীয় উগ্রবাদ দমনে সরকার যে আইনের প্রস্তাব করেছে, তাতে ব্রিটিশ মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন বক্তব্য-বিবৃতিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। ধর্মীয় উপাসনালয়সহ উগ্রবাদ ছড়ায় এমন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এ লক্ষ্যে পুলিশ, বিচার ও যোগাযোগে আড়িপাতা সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে সরকার।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্দোলন দমনেও নতুন বিল আনবে রক্ষণশীল সরকার। যাতে বলা হয়েছে, ৫০ শতাংশ সদস্য অনুমোদন না করলে আন্দোলনে যেতে পারবে না সংগঠনগুলো। প্রস্তাবিত এই আইন নিয়েও তীব্র আপত্তি তুলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যুক্তরাজ্যের থাকা না থাকা নিয়ে ২০১৭ সালের মধ্যে গণভোট আয়োজনের লক্ষ্যে বিল উত্থাপন করা হচ্ছে। ইইউভুক্ত দেশের অভিবাসীরা ওই গণভোটে ভোট দিতে পারবেন না।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ভাষণে বলেন, তাঁর সরকার বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারি কল্যাণ ব্যয়ের সংস্কার ও কৃচ্ছ্রসাধন অব্যাহত রাখবে। কর্মজীবী মানুষদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করবে। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে চীন এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবে। ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখার পাশাপাশি সিরিয়া, ইরাকসহ বিশ্বে উগ্রবাদ দমনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
রানির ভাষণ ও ঐতিহ্য
লর্ডসভার ব্ল্যাক রড
যুক্তরাজ্যের রানির ভাষণের মধ্য দিয়ে নতুন পার্লামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। অবশ্য এই ভাষণ সরকারেরই তৈরি করা। এই ভাষণে থাকে পরের বছরটিতে সরকার কী করবে না করবে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা। এ-সংক্রান্ত বিল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে আলোচনা করে পাস করা হলেও রানি কিন্তু ভাষণ দেন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ বা হাউস অব লর্ডসে।
পার্লামেন্টের প্রথম দিনে রানির ভাষণ নিয়ে থাকে জাঁকজমকপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা। এর মূল আকর্ষণ তাঁর প্রতিনিধি ‘ব্ল্যাক রড’। রানি আসন গ্রহণের পর এমপিদের ডেকে নিয়ে আসতে তাঁর এই প্রতিনিধিকে হাউস অব কমন্সে পাঠানো হয়। কিন্তু দরজার কাছে যেতেই ধপাস করে সেটি তাঁর মুখের ওপর বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ প্রতীকী প্রথার রয়েছে গভীর তাৎপর্য। এর মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়, রাজতন্ত্র থেকে পার্লামেন্ট স্বাধীন। যা হোক, ব্ল্যাক রড তাঁর হাতের কালো ছড়ি দিয়ে বন্ধ দরজায় তিনবার আঘাত করেন। এরপর দরজা খুলে যায়। তিনি ভেতরে প্রবেশ করে এমপিদের হাউস অব লর্ডসে যাওয়ার আহ্বান জানান। এমপিরা তাঁকে অনুসরণ করে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে প্রবেশ করে রানির ভাষণ শোনেন। পরে এমপিরা আবার হাউস অব কমন্সে ফিরে আসেন। রানির ভাষণের ওপর সেখানে ভোটাভুটি হয়। নিয়ম অনুযায়ী এ ভোটে হারলে সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়।
ব্ল্যাক রড ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উচ্চকক্ষের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। পুরো পদের নাম জেন্টলম্যান আশার অব দ্য ব্ল্যাক রড। হাউস অব লর্ডসের নিরাপত্তা ও নানা অনুষ্ঠানের দায়িত্ব তিনি পালন করেন। সূত্র: বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.