বড়াইগ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ by অমর ডি কস্তা

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা। নগর ইউনিয়নের আটাইঘাটে বড়াল নদের শাখা পচা খাল। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এ খালের ওপরে কোনও ব্রিজ বা রাস্তা নির্মাণ হয়নি। তাই এমন কষ্টের অবসানে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগেই রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার তিন শতাধিক নারী-পুরুষ মিলে কোমর বেঁধে নামেন রাস্তা নির্মাণের কাজে। এতে আটাই ও খিদরিআটাই গ্রামের ১০ হাজার মানুষের শত বছরের কষ্ট লাঘব হলো। জানা যায়, আটাই ও খিদরিআটাই গ্রামের ১০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র পথ হলো পচা খাল পার হয়ে যাওয়া। এভাবে কুরষাট গ্রাম হয়ে বিভিন্ন হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, অফিস আদালতে যেতে হয় এলাকাবাসীকে। অনেক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পেয়েছে ওই খালে একটি কালভার্ট বা ব্রিজ নির্মাণের। কিন্তু নির্বাচন পার হলে আর কোন জনপ্রতিনিধির দেখা মেলেনি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শামসুজ্জোহা এলজিএসপির বরাদ্দ থেকে ২ লাখ টাকা দিয়ে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু কালভার্টের দুই পাশ ভরাটের কোন বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হয়নি। যার জন্য প্রয়োজন আরো এক থেকে দেড় লাখ টাকা। এ অবস্থায় ওই দুই গ্রামের তিন শতাধিক নারী-পুরুষ মঙ্গলবার স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নিজেরাই ভরাট করেন কালভার্টের উভয় পাশ। আর এর জন্য ভাড়া করা হয় মাইক, চাঁদা তুলে আয়োজন করা হয় খিচুড়ি ভোজের। একই সঙ্গে আমন্ত্রণ জানানো হয় ইউপি চেয়ারম্যান শামসুজ্জোহা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াছিন আলীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের।
আটাই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি হাজী আবেদ আলী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, সঠিক উদ্যোক্তার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সবই সম্ভব। আজকের স্বেচ্ছাশ্রমে দুই গ্রামের মানুষের শত বছরের কষ্টের অবসান হলো।
খিদরিআটাই গ্রামের সুলতান আহমেদ ও আবু বকর সিদ্দিক বলেন, নিজেদের স্বার্থেই আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা করেছি। একই গ্রামের সোহাগী বেগম বলেন, ছেলেমেয়েরা একটু বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ে যেতে চাইত না। তাই পুরুষদের উৎসাহ দিতেই নিজেরাও কাজে এসেছি। সবাই মিলে কাজ করতে উৎসবের আনন্দ পাচ্ছি।
ইউপি চেয়ারম্যান শামসুজ্জোহা বলেন, পরিষদের বরাদ্দ থেকে চাহিদা মাফিক উন্নয়ন করা সম্ভব হয় না। তাই আটাই ও খিদরিআটাই গ্রামের মানুষের দাবি সময়মত পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে তারা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল তা অনেকের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.