নিমেষেই গুঁড়ো গুঁড়ো আলিফের পায়ের হাড়

(কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত স্কুলছাত্র আলিফ হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ছবিটি আজ সোমবার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো) কুষ্টিয়া শহরের কামরুজ্জামান আজ সোমবার সকালে তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছেলে হিসনে হাসিন আলিফকে (৮) নিয়ে মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। গন্তব্য স্থানীয় প্রতীতি বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের কেজি শ্রেণির ছাত্র আলিফের বার্ষিক পরীক্ষার শেষ বিষয়ের পরীক্ষা আজ। সকাল পৌনে আটটার দিকে ঘন কুয়াশার মধ্যে শহরের ফুলতলা মোড়ে সড়ক পার হওয়ার জন্য অপেক্ষার সময় দ্রুতগামী ট্রাক হঠাৎ উল্টো পথে এসে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা মারে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় মোটরসাইকেলটি। বাবা-ছেলে চলে যায় ট্রাকটির নিচে। আলিফের পায়ের ওপর গিয়ে থামে ট্রাকের চাকা। নিমেষেই গুঁড়ো হলো শিশুটির দুই পায়ের হাড়। শুধু পড়ে রইল রক্তমাখা জুতা।
দুর্ঘটনার পর আলিফকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান বাবা কামরুজ্জামান। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন তিনি। তাঁর একটাই জানতে চাওয়া, ‘কেন ট্রাক রং সাইডে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাপ-ছেলের ওপর চলে এল?’
দুর্ঘটনার পর সকালে প্রতীতি বিদ্যালয়ের অভিভাবকেরা কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর ১০টার দিকে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়।
হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে কামরুজ্জামানকে এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আলিফকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কামরুজ্জামানের ডান পায়ে ব্যথা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
ছেলের এমন অবস্থায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আলিফের মা। তীব্র ব্যথায় আলিফের চিৎকার—‘মা, আমি বসতে চাই, আমার পায়ে ব্যথা করছে।’
হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, আলিফের দুই পায়ের হাড় ভেঙে প্রায় গুঁড়ো গুঁড়ো হয়েছে। এ ছাড়া সে মাথায় আঘাত পেয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পার না হওয়া পর্যন্ত সে আশঙ্কামুক্ত কি না, বলা যাচ্ছে না।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল খালেক জানান, ট্রাকটিকে আটক করা হয়েছে। চালক পালিয়ে গেছেন। আহতের চিকিৎসা চলছে। মহাসড়কে এখন যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.