হাগুপিটে তছনছ পূর্ব ফিলিপাইন

ঘূর্ণিঝড় হাগুপিটের প্রভাবে লেগাজপি শহরের বাঁধে গতকাল এভাবেই আছড়ে পড়ে সাগরের ঢেউ l ছবি: এএফপি
ঘূর্ণিঝড় হাগুপিটের আঘাত এবং এর প্রভাবে হওয়া জলোচ্ছ্বাসে তছনছ হয়ে গেছে ফিলিপাইনের পূর্বাঞ্চল। এতে প্রাথমিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সতর্কতা হিসেবে ওই অঞ্চল থেকে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। শান্তির সময়ে এত বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া ফিলিপাইনে এটাই প্রথম।
হতাহতের খবর তাৎক্ষণিকভাবে না পাওয়া গেলেও ঝড়ের আঘাতে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে গেছে, ভেঙে পড়েছে গাছপালা। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ও তার ছিঁড়ে গিয়ে উপদ্রুত অঞ্চল বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছেন। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের।
স্থানীয় আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রশান্ত মহাসাগর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হাগুপিট শনিবার রাতে ফিলিপাইনের সামারা দ্বীপে আঘাত হানে। এ সময় এর গতি ছিল ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার। চলতি বছর ফিলিপাইনে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী।
সামারা দ্বীপের তাকলোবান শহরের মেয়র স্টেফানি ইউ-তান গতকাল রোববার সকালে বার্তা সংস্থা এএফপিকে টেলিফোনে জানান, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অনেক ঘরবাড়ি উড়ে গেছে। প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। উপকূলীয় এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
ম্যানিলা থেকে কর্তৃপক্ষ জানায়, স্থানীয় সময় রোববার বিকেল চারটা পর্যন্ত হাগুপিটের আঘাতে কোথাও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সামারা দ্বীপের ডলোরেস শহর পুলিশের মুখপাত্র অ্যালেক্স রবিন বলেন, ‘শনিবার রাতেই ঝড়ে গাছপালা ভেঙে ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাত থেকেই আমরা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছি।’
ঝড়ের ভয়াবহতা বোঝাতে গিয়ে তাকলোবানের ইউনিসেফ কার্যালয়ের প্রধান মাওলিদ ওয়ারফা গতকাল সকালে জানান, তিনি পাঁচতলা একটি ভবনে ছিলেন। ঝড়ের একপর্যায়ে সেই পাঁচতলা ভবনও কেঁপে ওঠে। মাওলিদ ওয়ারফা আরও জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় তাঁরা মোমবাতি ব্যবহার করছেন। বাইরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়কবলিত লেগাজপি শহর থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানান, ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ঘূর্ণিঝড়ের আগেই নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়। চায়ান এলাকায় গিয়ে একটি পরিবারকে নিজ বাড়িতেই থাকতে দেখা যায়। পরিবারের ৯৮ বছর বয়সী এক সদস্য অসুস্থ থাকায় বাড়ি ছাড়েনি তারা। আরও কয়েকটি বাড়িতে লোকজনকে থেকে যেতে দেখা যায়। এসব বাড়ির বাসিন্দারা জানান, শক্তিশালী কাঠামোর বাড়ি হওয়ায় তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি। রাতে ঝড় আঘাত হানার সময় বাড়িতেই ছিলেন তাঁরা। ওই বাড়িগুলোতে যাওয়ার পথে গাছপালা ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
তাকলোবান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের মুখপাত্র ইলডেরান্ডো বার্নান্দাস বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, তাঁর এলাকায় উপকূলীয় প্রায় ১৯ হাজার বাসিন্দাকে ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হাগুপিটের আঘাতে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেই তুলনায় ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা দাবি করছেন, আগে থেকেই অনেক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।
সরকারি একটি সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে এক লাখ ২০ হাজার সেনাসদস্য প্রস্তুত রাখা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মানবিক সহায়তাবিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টোস স্টাইলিয়ান্ডিস জানান, ফিলিপাইনে তাঁরা শিগগিরই একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাচ্ছেন। এ দল কেমন ও কী পরিমাণ সহায়তা প্রয়োজন হবে, তার আনুমানিক হিসাব দেবে। সেই হিসাব নিয়ে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম হবে।
রেডক্রসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকাগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। গত বছর প্রচণ্ড শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হাইয়ানের আঘাতে ফিলিপাইনে সাত হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান। সাম্প্রতিক সময়ে দ্বীপ দেশটিতে প্রতিবছরই বিভিন্ন মাত্রার ঝড় আঘাত হানছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবেই ইদানীং দেশটিতে এত বেশি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে।
ফিলিপাইনের ১০ শক্তিশালী ঝড়
১. ‘সুপার টাইফুন’ হাইয়ান, ২০১৩: নিহত বা নিখোঁজ অন্তত ৭৩৫০
২. থেলমা, ১৯৯১: নিহত ৫১০০-এর বেশি
৩. বোফা, ২০১২: নিহত বা নিখোঁজ ১৯০০
৪. ইকে, ১৯৮৪: নিহত ১৩৬৩
৫. ওয়াশি, ২০১১: নিহত ১০৮০
৬. ট্রিক্স, ১৯৫২: নিহত ৯৯৫
৭. অ্যামি, ১৯৫১: নিহত ৯৯১
৮. নিনা, ১৯৮৭: নিহত ৯৭৯
৯. ফেংশেন, ২০০৮: নিহত ৯৩৮
১০. অ্যাঞ্জেলা, ১৯৯৫: নিহত ৯৩৬

No comments

Powered by Blogger.