ডাকাত আতঙ্কে সিলেটে রাত জেগে পাহারা

শীত এলেই ডাকাতি বাড়ে সিলেটে। গ্রামে গ্রামে শুরু হয় ডাকাত আতঙ্ক। এবার শীত আসার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে ডাকাতি। আর সিলেটের প্রবেশমুখ দক্ষিণ সুরমায় এক মাস ধরে ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় রাত জেগে গ্রামে গ্রামে পাহারা বসিয়েছে লোকজন। রাতের বেলা পুলিশের টহল থাকলেও তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। ডাকাতরা ঘরের দরজা, জানালা ও কলাপসিপল গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বাসার সবাইকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে ঘটনার পর লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা তো দূরের কথা জড়িত অপরাধীদের পুলিশ গ্রেপ্তার কিংবা শনাক্ত করতেও পারছে না- এমনকি অপরাধীরা ধরাও পড়ছে না। পুলিশের দাবি, তাদের সংখ্যা কম থাকায় এসব অপরাধ দমনে অনেকটা সম্ভব হচ্ছে না। অপরাধীদের দমন করতে পুলিশের সংখ্যা বাড়ালে এসব অপরাধ অনেকটা কমে আসবে। তা ছাড়া পুলিশি টহল একদিকে দিলেও, অন্যদিকে পুলিশ আসার আগেই চোর ও ডাকাতরা অপরাধ করে পালিয়ে যাচ্ছে। ফলে অপরাধীদের ধরতে ও মালামাল উদ্ধার করতে অনেকটা হিমশিম খেতে হয়। পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত ১৫ দিনে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় অন্তত ১২টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত ২৬শে নভেম্বর রাত ২টায় দক্ষিণ সুরমার পিরিজপুরের ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের বাড়িতে ঘরের দরজা ভেঙে ২০-২২ জন মুখোশধারী ডাকাত প্রবেশ করে। এরপর ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের ভাই নাজির উদ্দিনকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঘরে থাকা ৩০ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন সেট ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নেয়। এর প্রতিবাদে এলাকার স্থানীয় লোকজন পরদিন সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ বাইপাস সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। গত ২৩শে নভেম্বর রাত আড়াইটায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের গোপশহরে আমেরিকা প্রবাসী তৈমুজ আলীর বাসায় দুর্ধর্ষ ডাকাতরা ছয়টি কক্ষ তছনছ করে টাকাসহ ৭ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে। ওই রাতে ২০-২৫ জনের একটি ডাকাত দল বাসার গ্রিল ও দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় তার ছেলে আবদুর রকিব বাধা দিলে ডাকাতরা তাকে মারধর করে। পরে তৈমুজ আলী, রকিব, তৈমুজের মেয়ে রাহেনা বেগম ও মেয়ের জামাই মিসবাহকে বেঁধে ফেলে ডাকাতরা। তারা বাসার ৬টি কক্ষ তছনছ করে নগদ আড়াই লাখ টাকা, ৪০০ ডলার, ৫ ভরি স্বর্ণ, ৮টি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও একটি হাতঘড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। গত ৬ই নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ২টায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের ভরাউট গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল হান্নানের বাড়িতে ৮-৯ জনের সংঘবদ্ধ ডাকাত দল ঘরের জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে পরিবারের লোকজনকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ১০ হাজার টাকা, ২টি মোবাইল সেটসহ ৮ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। গত ২৮শে অক্টোবর রাত ৩টার দিকে দক্ষিণ সুরমা থানার করসনা গ্রামের তোতা মিয়ার পুত্র লিলু মিয়ার বাড়িতে ১৫-১৬ জনের সশস্ত্র একদল ডাকাত তাদের বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় ডাকাতরা বাড়ির লোকজনকে মারধর করে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৮৫ হাজার টাকা ও ৩টি মোবাইল সেটসহ ৫ লাখ ৯১ হাজার ১০০ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। গত ১৩ই নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় দক্ষিণ সুরমা মোগলাবাজার এলাকার তিরাশি গ্রামে ফার্নিচার ব্যবসায়ী দেলওয়ার মিয়া বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে ৮-১০ জন ডাকাত ঘরে থাকা ৩ জন মহিলার হাত-পা বেঁধে ফেলে। তাদের বাধা দিলে আফসা বেগম (৪৭) ও জেএসসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়াকে (১৫) ছুরিকাঘাতে করে আহত করে ডাকাতরা। এ সময় ডাকাতরা নগদ ৩ লাখ টাকা, তিন ভরি স্বর্ণালংকার, ৩টি মোবাইল সেটসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ডাকাতি করে নিয়ে যায়। শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায় দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকর (কৃষ্ণপুর) শিববাড়ী কিষাণপুর রাধামাধব জিউর দেবতা মন্দিরে চুরি হয়েছে। দুর্বৃত্তরা ওই মন্দিরের পশ্চিমের গ্রিল কেটে মন্দিরের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় চোররা একটি বড় বিষ্ণু মূর্তি, রাধারানীর নেকলেস, হাতের বালা, কানের দুল এবং দানবাক্সের ৪ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে মোগলাবাজার থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টাকাসহ ৩ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে দোকান কর্মচারী পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় দক্ষিণ সুরমা থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। পুলিশ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। গত ১১ই নভেম্বর টার্মিনাল রোডের ভার্থখলায় অবস্থিত মেসার্স খালেদ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী কিশোরগঞ্জ জেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের আবদুল কাদিরের পুত্র নাঈম (২৫) লোকচক্ষুর আড়ালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতর ক্যাশ বাক্স থেকে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা ও ৪৫ হাজার টাকার স্যানিটারি মালামালসহ চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মেসার্স খালেদ অ্যান্ড ব্রাদার্স-এর স্বত্বাধিকারী গোলাপগঞ্জ উপজেলার বরায়া হাজীপুর গ্রামের মজাহিদ আলীর ছেলে খালেদ আহমদ বাদী হয়ে নাঈমের বিরুদ্ধে ১২ই নভেম্বর লিখিত অভিযোগ দেন। এদিকে, আশঙ্কাজনক হারে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বেশ কয়েক গ্রামে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছে স্থানীয়রা। তারা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাছে থাকা গ্রামগুলোতে আকস্মিক হানা দেয় ডাকাতরা। এ কারণে ডাকাতি রোধ করতে তারা পাহারা বসিয়েছে। এদিকে, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ঘন ঘন ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে থানা থেকে ওসি মো. মরছালিনকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত টহল জোরদার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.