গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে লাগাতার কর্মসূচি

যেদিন থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াবে সেদিন থেকেই লাগাতার কর্মসূচি দেবে ২০ দল। গতকাল নয়া পল্টন কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি- আগামী ১লা জানুয়ারি থেকে সরকার আবারও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী সরকার এর আগেও দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। আবারও বাড়ানো হলে তা জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। মির্জা আলমগীর বলেন, বিশ্ববাজারে বর্তমানে তেলের দাম আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগে যেখানে ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ছিল ১২০ ডলার, তা কমে এখন নেমে এসেছে ৬০-৬৫ ডলারে। অথচ সরকার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তেলের দাম কমায়নি। জনগণের পকেট কাটতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। মির্জা আলমগীর বলেন, বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হচ্ছে। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে এই লুটপাট করা হচ্ছে। এই দুর্নীতি নিয়ে যাতে কেউ কথা বলতে না পারে সেজন্য সরকার সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের ‘ইনডেমনিটি’ দিয়েছে। এখন আবার ভর্তুকির ঘাটতি পূরণে জনগণের পকেট কাটতেই এই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে। আমরা ২০ দলীয় জোট অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। আর সিদ্ধান্ত  প্রত্যাহার না করলে যেদিন থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে, সেদিন থেকে  জোট লাগাতার কর্মসূচি দেবো। কর্মসূচির ধরণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেন, কর্মসূচি দেয়ার সময় জানতে পারবেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ভারত থেকে লাখ লাখ টন চাল আমদানি করে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে সরকার। এই আমদানির কারণে দেশের কৃষক সমাজ তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। অন্যদিকে, সরকারের ভুলনীতির কারণে দিন দিন সার, বীজসহ বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জামের দামও বাড়ছে। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ভুট্টা আমদানি করে আমাদের দেশের ভুট্টা উৎপাদকদের ক্ষতিগ্রস্ত করে পথে বসিয়েছে সরকার। এখন বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির মাধ্যমে কৃষকদেরও ধ্বংস করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার একদিকে ভারত থেকে ব্যাপক হারে চাল আমদানি করছে অন্যদিকে দেশ কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ এমন প্রচার করে বিদেশে চাল রপ্তানি করছে। এটা হঠকারিতা ছাড়া আর কিছু না। ২০ দলীয় জোট সরকারের এ পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একই সঙ্গে এ সব কৃষিপণ্য আমদানি বন্ধেরও জোর দাবি জানাচ্ছে। মির্জা আলমগীর বলেন, ৫ই ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে যে অরুচিকর বক্তব্য দিয়েছেন, ২০দলীয় জোট তার নিন্দা ও প্রতিবাদ করছে। ২০দলীয় জোট মনে করে শেখ হাসিনা তার স্বভাবসুলভ বক্তব্যের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে কলুষিত করেছেন। মির্জা আলমগীর বলেন, ১৩ই ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে ২০ দলীয় জোটের জনসভা হবে। ওই জনসভায় ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। জোটের শরিক দলগুলো আলাদাভাবে জনসভা সফলের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। এর আগে নয়াপল্টন কার্যালয়ে মির্জা আলমগীরের সভাপতিত্বে ২০ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। এতে এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ড. রেদওয়ানউল্লাহ শাহেদী, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের, জাগপা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, কল্যাণ পার্টির এমএম আমিনুর রহমান, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদী, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তের ওলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুহিউদ্দিন একরাম, বিজেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য সালাহ উদ্দিন মতিন প্রকাশ, ডিএলের যুগ্ম সম্পাদক খোকন চন্দ্র দাস, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, ইসলামী ঐক্যজোটের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি তৈয়্যেব শরিক দলের মহাসচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.