ধ্বংসের পথে খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্র by রাশিদুল ইসলাম

খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংসের পথে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-বিউবো’র বোর্ড মিটিংয়ে এ কেন্দ্রের ১১০ মেগাওয়াট ইউনিটটি ওভারহোলিংয়ের সিদ্ধান্ত হলেও তা বাতিল হওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে খুবিকে’র শ্রমিক-কর্মচারীরা ফুঁসে উঠেছে। এদিকে ওভারহোলিং না করার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েই ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি টিকে থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের বেজমেন্ট প্লান্ট টিকিয়ে রাখতে না পারলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লো-ভোল্টেজ অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ লো-ভোল্টেজ কমাতে ১১০ ও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র দু’টি দ্রুত ওভারহোলিং করে চালু করা জরুরি বলেও অনেকে মনে করেন। খুবিকে’র অপর একটি সূত্র জানায়, এক সময় এ কেন্দ্রটি ছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রায় তিনশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো এ কেন্দ্র থেকে। এখানে ছিল ৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাস টারবাইন, ৫৬ মেগাওয়াটের আরও একটি বার্জ মাউন্টেন কেন্দ্র, জিটি-৩৫ নামের একটি ডিজেল চালিত কেন্দ্র এবং বর্তমানে নিভু নিভু অবস্থায় থাকা ১১০ ও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সূত্রটি আরও জানায়, মাত্র এক বছর আগে চালু হওয়া খুবিকে সংলগ্ন নর্থ ওয়েস্টের ১৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ওভারহোলিংয়ের জন্য ১৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে ২০০৬ সাল থেকে অকেজো হয়ে পড়ে থাকা ১১০ কেন্দ্রটি ওভারহোলিংয়ের জন্য ১৮০ কোটি টাকার অনুমোদন মিলছে না। দীর্ঘদিন ধরে খুবিকেতে শ্রমিক নেতৃত্ব দেয়া প্রবীণ শ্রমিক নেতা লোকমান হাকিম বলেন, বেজমেন্ট প্লান্টগুলো না থাকলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লো-ভোল্টেজ রোধ করা যাবে না। তাছাড়া এ জাতীয় প্লান্ট একাধারে ছয় মাস চলতে পারবে। পক্ষান্তরে রেন্টালসহ বর্তমানে যেসব প্লান্ট স্থাপন করা হচ্ছে সেগুলো প্রতিদিনই বিরতি দিয়ে চালাতে হয়। খুলনার ৫৬ মেগাওয়াটের বার্জ মাউন্টেড কেন্দ্রটি চালু থাকলে সামপ্রতিক সময়ে হওয়া দেশব্যাপী বিদ্যুৎ বিপর্যয়ও রোধ করা সম্ভব হতো বলে তিনি উলেখ করেন। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, খুলনার প্রতি কিছু আমলার যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, ১১০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের ওভারহোলিং সিদ্ধান্ত বাতিল তারই অংশ। সুতরাং এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। এদিকে বিউবোর গত ১৭ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত বোর্ড মিটিংয়ের একটি সূত্র জানায়, পূর্বের বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক খুবিকে’র ১১০ মেগাওয়াট ইউনিটটি ওভারহোলিং বিষয়ক আলোচনার একপর্যায়ে বোর্ড সদস্যরা এটিকে ওভারহোলিং না করার ব্যাপারে মত দেন। এমনকি বিউবো চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে বলেন, ৩০ বছরের পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওভারহোলিংয়ের কোন প্রয়োজন নেই। সুতরাং ১১০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি ওভারহোলিংয়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করা যেতে পারে। মিটিংয়ের শেষ পর্যায়ে এমনটিই সিদ্ধান্ত হয়। এ খবর খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয় খুবিকে’র শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে। মঙ্গলবার তাৎক্ষণিক বৈঠক করে জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে খুবিকের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর পত্র দিয়ে আন্দোলন কর্মসূচির কথা জানিয়ে দেয়া হয়। যার আলোকে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এতে সভাপতিত্ব করেন শেখ আসলাম উদ্দিন। এ সময় বক্তারা বলেন, খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে মহল বিশেষের যে ষড়যন্ত্র চলছে, ১১০ ওভারহোলিংয়ের সিদ্ধান্ত বাতিল তারই অংশ। বিউবোতে কর্মরত কিছু আমলা ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ধ্বংসের পাঁয়তারা করছেন। যে কারণে প্রথমে এ কেন্দ্রের মধ্যে যেমন রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট বসানো হয় তেমনি পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থাপন করা হয় দেড়শ’ মেগাওয়াটের বিউবো নিয়ন্ত্রিত তবে নর্থ ওয়েস্ট কোম্পানির আওতাধীন ১৫০ মেগাওয়াটের অপর একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বক্তারা আরও বলেন, খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক সময়ের প্রধান প্রকৌশলী বিউবো ছেড়ে ওই কোম্পানিতেই তিন লাখ টাকা বেতনে চাকরি করছেন। অর্থাৎ পিডিবির প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন তিনি। খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট মাত্র চারশ’ কোটি টাকা খরচ করে ওভারহোলিং করা হলে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সেটি না করে আমলা ও দাতাদের প্রেসক্রিপশনে সরকার এক হাজার চারশ’ কোটি টাকা খরচ করে গোপালগঞ্জে মাত্র ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেছে। ওই কেন্দ্রটি ১০ বছর পর ওভারহোলিংয়েরও কোন সুযোগ থাকবে না বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।

No comments

Powered by Blogger.