শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করা হয়েছে সেই সূর্যসন্তানদের, স্বাধীনতার পূর্বমুহূর্তে  এদেশের দোসরদের সহযোগিতায় যাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন, শোক র‌্যালি, শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। সকাল থেকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়ের বাজার স্মৃতিসৌধে ঢল নামে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের। সকাল ৭টা ৫৯ মিনিটে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এক মিনিট নীরবতা পালন এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন  শারমিন চৌধুরী। কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল থেকেই লাল  সবুজের পতাকা ও ফুল হাতে অগণিত মানুষ ভিড় করেন স্মৃতিসৌধ এলাকায়। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে স্মৃতিস্তম্ভের বেদিমূলে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর স্মৃতিসৗধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তারা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। এভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল সকাল ১০টায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দেশের সূর্যসন্তানদের স্মৃতির প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে খালেদা জিয়ার শ্রদ্ধা নিবেদনকে কেন্দ্র করে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক শোডাউন করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সকাল থেকেই ওই এলাকায় পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান নেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, ঢাকা কলেজ ছাত্রদল, মিরপুর বাংলা কলেজ ছাত্রদল শাখাসহ মহানগর ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী। এ সময় তারা স্লোগানে স্লোগানে এলাকা মুখর করে রাখেন।
তার আগে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।  বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাপার সংসদ সদস্য নোমান মিয়া, সেলিম উদ্দিন। পরে একে একে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি,  বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সহ বিভিন্ন সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। একইভাবে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রায়ের বাজারের বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে সকালে মানুষের ঢল নামে। সেখানেও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সেখানে শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের কন্যা শমী কায়সার, ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রজন্ম-৭১ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। দিবসটি উপলক্ষে দেশজুড়ে পালিত হয়েছে নানা কর্মসূচি। বিকালে রাজধানীতে আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

No comments

Powered by Blogger.