গাজীপুরে জনতা ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৬০ লাখ টাকা লুট

জেলা শহরের জয়দেবপুর বাজারের জনতা ব্যাংক গাজীপুর কর্পোরেট শাখা থেকে ৬০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ব্যাংকের তিন নিরাপত্তা প্রহরী মো. নূরুল ইসলাম (৫০), মহিউদ্দিন (৪৫) ও মজিবুর রহমানকে (৪৫) আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাত ১০টার পর ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও ব্যাংক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী মো. নূরুল ইসলামকে খাবারের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে। পরে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৬০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা নিয়ে যায়। জয়দেবপুর বাজারের তানভীর প্লাজার দ্বিতীয় তলায় ব্যাংকের ওই শাখাটি অবস্থিত। ব্যাংকের সামনে জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তির পুরনো কাপড়ের দোকান রয়েছে। শনিবার রাত ১০টার দিকে জাকির কিছু ফলমূল নিয়ে আসে এবং টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে ব্যাংকের দায়িত্বরত নিরাপত্তা প্রহরী মো. নূরুল ইসলামকে দিয়ে প্রধান ফটক খুলিয়ে ব্যাংকের ভেতরে ঢোকে। পরে ফলমূল ও পানির সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য নূরুল ইসলামকে খাইয়ে অচেতন করে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা নিয়ে ব্যাংকের পেছনে পশ্চিম পাশের জানালার গ্রিল খুলে পালিয়ে যায়।
ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সোলাইমান হোসেন জানান, দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে ভল্ট ভেঙে ৬০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
থানা থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে ব্যাংকটি অবস্থিত। টাকা লুটের ঘটনা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আতংকিত করে তুলেছে। ওই ভবনের মাত্র ১৫ গজ দূরে ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি শাখা রয়েছে।
ব্যাংকের অপর নিরাপত্তা প্রহরী মজিবুর রহমান জানান, সকাল ৮টার দিকে তিনি ডিউটিতে এসে ব্যাংকের দরজা বন্ধ দেখতে পান। রাতে ব্যাংকে দায়িত্বপালনকারী গার্ড নূরুল ইসলামকে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার নূরুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। পরে তিনি জয়দেবপুর বাজার থেকে মিস্ত্রি এনে ব্যাংকের গেটের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি সেখানে রাতের শিফটের নিরাপত্তা প্রহরী নূরুল ইসলামকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। সেকেন্ড অফিসার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান।
পরে ব্যাংক কর্মকর্তারা এসে দেখতে পান ব্যাংকের ভল্ট ভাঙা এবং ভল্টের ভেতরে থাকা ৬০ লাখ টাকার হদিস নেই। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জয়দেবপুর থানা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ নিরাপত্তা প্রহরী মো. নূরুল ইসলামকে আটক করে গাজীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসার পর সুস্থ হলে গার্ড নূরুল ইসলামকে নিয়ে পুলিশ তার বাড়ি মহানগরীর কাউলতিয়ায় অভিযান চালায়।
পুলিশ জানায়, নিরাপত্তা কর্মী নূরুল ইসলামের সঙ্গে পুরনো কাপড় ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের দুই বছর ধরে সম্পর্ক। তারা জমি বেচাকেনা করত। ১৫ দিন আগে ব্যাংকের সামনে দোতলায় একটি দোকান ভাড়া নেয় জাকির। রাতে প্রস াব করার কথা বলে সে ব্যাংকের ভেতরে ঢোকে।
রোববার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, দুর্বৃত্তরা টাকা নিয়ে যাওয়ার আগে ব্যাংকের ভেতরে ইয়াবা সেবন, বিয়ার ও সিগারেট পান, ডালিমসহ বিভিন্ন ফল ও চকলেট খেয়েছে। ব্যাংকটি একটি কর্পোরেট শাখা হলেও এতে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। ভবনের পশ্চিম পাশের জানালাগুলোও দুর্বল লোহার তৈরি। ফলে দুর্বৃত্তরা সহজেই জানালার একটি পার্ট খুলে নির্বিঘ্নে ব্যাংকের ৬০ লাখ টাকা নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
জনতা ব্যাংকে টাকা লুটের ঘটনার খবর পেয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন, জনতা ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার (ঢাকা উত্তর) মো. নজরুল ইসলাম ও এরিয়া ম্যানেজার আবদুল জব্বার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার রেজাউল হাসান জানান, ব্যাংকের টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ব্যাংকের তিন নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.