হাজারীবাগে দিবালোকে যুবদল নেতা সাত্তার খুন

সিনেমার তুখোড় অ্যাকশন দৃশ্যও হার মেনে যাবে। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের সফল অপারেশনে টার্গেট ‘ফিনিশ’ করে দিয়ে মোটরবাইকে ঝড়ের গতিতে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যায় ঘাতকরা। হাজারীবাগে নিজের এলাকাতেই গুলিতে ঝাঝরা হয়ে পড়ে থাকে যুবদল নেতা সাত্তারের দেহ। তিনি ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ছিলেন।
রোববার দুপুরে প্রকাশ্যে রাজধানীর হাজারীবাগে চামড়া ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন ওরফে সাত্তার ওরফে গালকাটা সাত্তারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এলাকাবাসী জানায়, হাজারীবাগের মনেশ্বর রোডের ট্যানারি মোড়ের ৮২ নম্বর বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাত্তার তিন মাজার মসজিদে নামাজ পড়তে যান। বেলা পৌনে ২টার দিকে মসজিদের উত্তর গেটের ফুটপাতে মাছের দরদাম করছিলেন তিনি। এ সময় মোটরসাইকেলে চড়ে অস্ত্রধারীরা সেখানে এসে তাকে লক্ষ্য করে চার রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, চামড়ার ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জের হিসেবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে পরিবারের অভিযোগ, প্রতিপক্ষ ইমন গ্র“পের সন্ত্রাসীরা সাত্তারকে হত্যা করেছে।
সাত্তারের স্ত্রী সামিনা বলেন, দুপুরে সাত্তার নামাজের জন্য বাসা থেকে বের হন। এরপর বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। আর তখনই সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে। তিনি বলেন, ঘটনার পর দেবর মোতালেবসহ তারা দ্রুত সাত্তারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাতালে নেয়। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সামিনা জানান, ৬ মাস আগে জেল থেকে বের হওয়ার পর সাত্তার বাইরে তেমন একটা বের হতেন না। মর্গের সামনে আহাজারি করতে করতে তিনি স্বামীর খুনিদের বিচার দাবি করেন।
হাজারীবাগ থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত সাত্তারের বিরুদ্ধে ১০টি হত্যা মামলাসহ ১২টি মামলা রয়েছে। এই থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের মধ্যে তার নাম রয়েছে ২ নম্বরে।
সাত্তারের মৃত্যুতে তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্ত্রী সামিনা আক্তার সেতু ঢাকা মেডিকেলের মর্গের সামনে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। বুকফাটা আর্তনাদ করতে থাকেন ছোটভাই ওবায়দুল ইসলাম মোতালেব। তিনি বলেন, মাত্র ৬ মাস আগে জেল থেকে জামিনে বের হন তার ভাই। আর তখন থেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার জন্য তাকে চাপ দেয়া হচ্ছিল। মোতালেব বলেন, ‘আমরা বিএনপি করি- এ কারণে আমার ভাইকে প্রাণ দিতে হল।’
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন দোকানি জানান, হত্যাকাণ্ডে দুটি মোটরসাইকেলে চারজন অংশ নেয়। মাত্র ৩০ সেকেন্ডে কাজ সেরে তারা পালিয়ে যায়। এর মধ্যে একটি মোটরসাইলে দু’জন এবং অন্যটিতে একজন ছিল। দ্বিতীয়টিই গুলি নিক্ষেপকারী সন্ত্রাসীকে ঘটনাস্থল থেকে তুলে নেয়। হত্যার পর দুটি বাইক নিয়ে সন্ত্রাসীরা জিগাতলার দিকে চলে যায়। পুলিশের ধারণা, আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, মামলাসংক্রান্ত কিংবা পারিবারিক কারণে সাত্তারকে হত্যা করা হতে পারে।
হাজরীবাগ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জমশেদুল আলম যুগান্তরকে বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা দুই যুবককে চিনতে পেরেছে। কারণ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি নিহতের দুই ভাগ্নে ইশতিয়াক ও ইমতিয়াজ ছিল। তারা দু’জনকে চিনতে পেরেছে। এসআই বলেন, যেহেতু নিহত ব্যক্তি নিজেও অপরাধী ছিলেন তাই মনে হচ্ছে আধিপত্য নিয়ে এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে পরিবারের অভিযোগ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা যাচাই করেই অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে। জমশেদুল জানান, নিহতের শরীরে চারটি গুলি লেগেছে- বাম গালে একটি, বাম হাতে একটি, মাথার বাম পাশে একটি ও বাম পাঁজরে একটি।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত সাত্তার কারাবন্দি বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টুর সহযোগী ছিলেন। ’৯৬ সাল থেকে তিনি পিন্টুর হয়ে কাজ করেন। তার বাবার নাম মৃত আবদুল আজিজ। সাত্তারের মা ফিরোজা বেগম ও ছোট বোন ইয়াসমিন আক্তার যুগান্তরকে বলেন, সাত্তারকে ইমন গ্র“পের সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। তাদের ভয়েই সাত্তার বাসা থেকে বের হতেন না। এমনকি মৃত্যুর আগেও অনেকবার তিনি কয়েকজনের নাম বলেছেন। তারা তাকে যে কোনো সময় মেরে ফেলতে পারে বলেও পরিবারের সদস্যদের বলেছেন।
হাজারীবাগ থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ব্যবসায়িক আধিপত্য বিস্তার ছাড়াও হত্যার কারণ হিসেবে কারাবন্দি সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে বিরোধিতার বিষয়টিও উঠে এসেছে। তার গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে বেশ কিছুদিন বাসা থেকেই বের হননি সাত্তার। ইমনের সন্ত্রাসীদের সব সময় বাসার আশপাশে দেখা যেত। প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে সাত্তারের দুই ভাগিনা যুগান্তরকে বলেন, দেখিয়ে দিলে তারা সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করতে পারবেন। হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম বলেন, হত্যাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ইমন গ্র“পের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অভিযোগের সূত্র ধরেই অভিযান চলছে।

No comments

Powered by Blogger.