চবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১

কথাকাটাকাটিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। রোববার বেলা ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চমেকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হন। সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া উভয় গ্রুপই নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। গতকাল বুদ্ধিজীবী দিবসের ফুল দিয়ে আসার সময় ছাত্রলীগের ভিএক্স গ্রুপ ও সিএফসির কর্মীদের মাঝে বাক্‌বিত-া হয়। এ সময় উভয় গ্রুপের কর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। দলীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সাময়িক স্বাভাবিক হয়। পরবর্র্তীকালে সকাল ১১টায় শাহ আমানত হলের সামনে ভিএক্সের কর্মীরা সিএফসির কর্মীদের লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় সিএফসি শাহ আমানত হলের সামনে অবস্থান নেয় ভিএক্স শাহজালালের সামনে অবস্থান দেয়। এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের মাঝে গোলাগুলি হয়। এতে সিএফসি কর্মী তাপস সরকার বুকে গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া আরও তিনজন আহত হন। তারা হলেন চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আলাউদ্দিন আলম, উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন রিমন ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন। এদিকে ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দেয়। উভয় গ্রুপ দেশীয় অস্ত্রসহ হলের সামনে অবস্থান নেই। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইসমাইল জানান, কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হয়েছে। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আটক ও অস্ত্র উদ্ধার: দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক কর্মীর মৃত্যুর পর শাহ জালাল ও শাহ আমানত হলে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। তল্লাশি শেষে শাহজালাল হল থেকে পুলিশ ২৭ ভিএক্স কর্মীকে আটক করেছে। এ সময়ে পুলিশ শাহজালাল হল থেকে ২টি দেশীয় পিস্তল, চারটি ম্যাগাজিন, ও শতাধিক দেশীয় অস্ত্র রামদা, কিরিচ, চাপাতি পাওয়া যায় বলে জানায়।
এদিকে ক্যাম্পাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সন্ধ্যা ৬টায় সিন্ডিকেট সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসি)। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর প্রেস ক্লাবে তারা এ সম্মেলন করে। সম্মেলনে তারা বলেন, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতে এবং সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এরশাদের অর্থায়নে ও অস্ত্রে ভিএক্স নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা দু’টি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ করতে হবে এবং যে সব সন্ত্রাসীরা এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত তাদের খুব দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পবিত্র জায়গায় হত্যাযজ্ঞ থামানো যাবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি অমিত কুমার বসু অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত কিছু কর্মী আশরাফুজ্জামান আশা, জালাল, আরিফ, রুবেল, শফিক ও শুভর নেতৃত্বে হামলা হয়। তিনি আরও বলেন, যারা অবিলম্বে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
নিহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপস সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের (২০১৩-২০১৪) ছাত্র। তাপস সরকারের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ থানার বিষ্ণুপুর এলাকায়। তার পিতার নাম বাবুল সরকার। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তাপস তৃতীয়। বড় ভাইয়ের কর্মসূত্রে তাপসের পরিবারের সবাই নেত্রকোনা সদরের সাতপাই এলাকায় থাকেন বলে জানিয়েছে পরিবার সূত্র।
ওদিকে গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ড. খান তৌহিদ ওসমানকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.