মানবাধিকার আদায়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ

কৃষ্ণাঙ্গসহ সংখ্যালঘু নাগরিকদের অধিকার আদায়, ন্যায়বিচার ও পুলিশের বর্ণবাদ আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিরোট বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া নিউইয়র্ক এবং বোস্টনেও পুলিশের হাতে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গদের হত্যার প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। শনিবারের এসব বিক্ষোভ কৃষ্ণাঙ্গদের হত্যার প্রতিক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বিক্ষোভ-সমাবেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল বলে জানিয়েছেন সংগঠকরা। মূলত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হলেও বোস্টনে রাস্তা অবরোধের চেষ্টার সময় ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মানবাধিকার সংগঠক রেভারেন্ড আল শার্পটন প্রতিষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক’ সবার জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী ‘মিলিয়ন মার্চ’ নামে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ডাক দেয়। এই ডাকে সাড়া দিয়ে ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, বোস্টন, লস অ্যাঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, আটলান্টা, মিসৌরি, ফিনিক্সসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। হাড়কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে শনিবার রাতে নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ার এবং সুপ্রিমকোর্ট ভবনের সামনে হাজারো জনতার স্লোগান ধ্বনিত হচ্ছিল। ‘সবার জন্য ন্যায়বিচার’, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’, ‘কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মর্যাদাপূর্ণ’, ‘তুমি কার নিরাপত্তা দিচ্ছ, তুমি কার সেবা করছো’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে নিউইয়র্কের রাতের আকাশ। অপরদিকে ওয়াশিংটন ডিসির ডাউন টাউনের ফ্রিডম প্লাজা থেকে গগনবিদারী স্লোগানে আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত করে কয়েক হাজার মানুষের একটি মিছিল হোয়াইট হাউসের পাশ দিয়ে ক্যাপিটল হিলের সামনে জড়ো হয়।
‘বিচার নাই, শান্তি নাই’, ‘বর্ণবাদী পুলিশ চাই না’, ‘হাত তোল, গুলি করো না’ ইত্যাদি স্লোগানের পাশাপাশি ‘কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মর্যাদাপূর্ণ’, ‘সব মানুষকে সমমর্যাদায় সৃষ্টি করা হয়েছে’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা প্লাকার্ড উঁচু করে ধরে রাখেন তারা। এ সময় অনেকেই বলতে থাকেন, পুলিশ সদস্যরা বর্ণবাদী। তাদের শাস্তি দিতে হবে। প্রেসিডেন্ট ওবামাও এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। এটি আমরা মেনে নেব না। সমাবেশে মিসৌরির ফার্গুসনে পুলিশের গুলিতে নিহত মাইকেল ব্রাউনের মা লেসলেই ম্যাকস্প্যাডেন, নিউইয়র্কে গ্রেফতারকালে পুলিশের হাতে নিহত এরিক গার্নারের সন্তানসহ পুলিশের গুলিতে নিহত আরও অন্তত ১২ জনের মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তানরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রাউনের মা লেসলেই সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। যদি তারা এটি না দেখে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইন পরিবর্তন না করে তাহলে আমরা জানি না ভবিষ্যতে আমাদের কি করত হবে। আমাদের সমর্থন করায় আপনাদের ধন্যবাদ।’ অবিলম্বে কৃষ্ণাঙ্গদের হত্যার দায়ে পুলিশ অফিসারদের অভিযুক্ত করার বিষয়ে কংগ্রেসে একটি শুনানির জন্য ক্যাপিটল হিলের এ সমাবেশ থেকে দাবি জানানো হয়। ‘ন্যাশনাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক’র প্রধান শার্পটন সমাবেশ পরিচালনা করেন। সমাবেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই। কৃষ্ণাঙ্গসহ সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা দীর্ঘদিন থেকেই উপেক্ষিত। সর্বশেষ মাইকেল ব্রাউন এবং এরিক গার্নারের হত্যাকারী পুলিশ অফিসারদের অভিযুক্ত না করে সংখ্যালঘু আমেরিকানদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির প্রত্যাশাকে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়েছে।’
‘এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। এ অবস্থায় সামাজিক ভারসাম্য বিপন্ন হতে বাধ্য। যুক্তরাষে।ট্রর সংবিধান সব নাগরিকের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের কথা বলেছে। বর্ণ,-জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার সমঅধিকার নিশ্চিতের গ্যারান্টি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান’, বলেন তিনি। এ সমাবেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি ধর্মীয় ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংগঠন। তারাও এসব বিক্ষোভে অংশ নেন। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীর সরব উপস্থিতি সমাবেশে অংশগ্রহণকারী সবাইকে অভিভূত করেছে।
সমাবেশ শেষে কিছু বিক্ষোভকারী ওয়াশিংটনের ডাউন টাউনে গিয়ে অল্প সময়ের জন্য কয়েকটি রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায়, জানিয়েছে পুলিশ। মিসৌরিতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার বিক্ষোভকারী এবং নিউইয়র্কে ২০ থেকে ৩০ হাজার বিক্ষোভাকারী প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। এসময় তার উচ্চস্বরে স্লোগান দেন, ‘আমরা নিউইয়র্ক অচল করে দেব। কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনের মূল্য আছে। এটা আর চলতে দেয়া যায় না।’ বিক্ষোভে অংশ নেয়া কমিউনিটি নেতা মার্টিন বায়েজ বলছিলেন, কৃষ্ণাঙ্গ মানুষরা সমঅধিকারের দাবিতে এখানে সমবেত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জন্য সমান গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে লড়াই করছি। বেআইনিভাবে সিগারেট বিক্রির অপরাধে কাউকে হত্যা করা যায়, আপনি বলুন?’ ‘যতক্ষণ পরিস্থিতি না বদলাবে, যতক্ষণ সরকার আমাদের স্বাধীনতাকে সম্মান না দেখাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’ এএফপি, বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস।
পুলিশ সদস্যরা বর্ণবাদী। তাদের শাস্তি দিতে হবে। প্রেসিডেন্ট ওবামা এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। তুমি কার নিরাপত্তা দিচ্ছ? কার সেবা দিচ্ছ? এটি আমরা মেনে নেব না
ওয়াশিংটনে ১০ হাজারের বেশি
বিচার নাই- শান্তি চাই, হাত তোল- গুলি করো না স্লোগানের পাশাপাশি সব মানুষকে সমমর্যদায় সৃষ্টি করা হয়েছে- লেখা প্লাকার্ড উঁচু করে ধরে রাখেন তারা
নিউইয়র্কে ২০-৩০ হাজার
আমরা নিউইয়র্ক অচল করে দেব। কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনের মূল্য আছে। বেআইনিভাবে সিগারেট বিক্রির অপরাধে কাউকে হত্যা করা যায়, আপনি বলুন?
মিসৌরিতে ৪০-৫০ হাজার
সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। যদি তারা এটা না দেখে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইন পরিবর্তন না করে, তাহলে আমরা জানি না ভবিষ্যতে আমাদের কি করতে হবে।
সবার জন্য ন্যায়বিচার
আমরা ন্যায়বিচার চাই। কৃষ্ণাঙ্গসহ সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা দীর্ঘদিন থেকেই উপেক্ষিত। পুলিশ অফিসারদের অভিযুক্ত না করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশাকে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.