সিডনিতে ১৬ ঘণ্টা পর মুক্ত জিম্মিরা

অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ নগরী সিডনির কেন্দ্রস্থলে লিন্ডট চকোলেট ক্যাফেতে অভিযান চালিয়ে জিম্মিদের উদ্ধার করেছে ভারি অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ। অভিযান চলাকালে বন্দুকধারীসহ (ইরানি শরণার্থী) দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছে। এর আগে ১৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সেখানে অস্ত্রের মুখে কমপক্ষে ৪০ জনকে জিম্মি করে রাখে ওই বন্দুকধারী। পুলিশ এই ব্যক্তিকে ইরানি শরণার্থী বলে শনাক্ত করেছে। অভিযানের কিছুক্ষণ আগে ছয় জিম্মিকে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, ক্যাফেতে হানা দেয়া ওই বন্দুকধারী ইরানি শরণার্থী। হারুন মনিস নামের ওই বন্দুকধারীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া সরকার। স্বঘোষিত মুসলিম ধর্মগুরু হিসেবে পরিচিতি হারুন নিজেকে শেখ হারুন বলে পরিচয় দিতেন। তার বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আফগানিস্তানে মোতায়েন অস্ট্রেলীয় সেনাদের হুমকি দিয়ে চিঠি লেখার অভিযোগে ২০১২ সালে হারুন দোষীও সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
সোমবার এই অস্ত্রধারী ক্যাফেতে ঢুকে অন্তত ৪০ জনকে জিম্মি করে ইসলামিক পতাকা উড়াতে বাধ্য করেন। এ ঘটনায় জিহাদি হামলার আশংকা সৃষ্টি হয়।
গণমাধ্যমের ফুটেজে জিম্মিদের হাতে আরবি লেখা যে সাদা-কালো ইসলামিক পতাকা দেখা গেছে তাতে মৌলবাদের সঙ্গে এ ঘটনার সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা ছিল পুলিশের। এএফপি।
প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট হামলার ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ উল্লেখ করে বলেছেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে। জানালার সামনে একটি কালো ইসলামী পতাকা প্রদর্শন করা হয়।
জিম্মি হওয়ার ৬ ঘণ্টা পর তিনজনকে ভবন থেকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। এর ১ ঘণ্টা পর আরও দুজন তাদের অনুসরণ করেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে এক ব্যক্তিকে ব্যাগ নিয়ে ক্যাফেতে ঢুকতে দেখা যাওয়ার পরপরই জিম্মি সংকট সৃষ্টি হয়। খবর পাওয়ামাত্রই পুলিশ এলাকাটি ঘিরে ফেলে। বন্ধ করা হয় যান চলাচল। বন্ধ করে দেয়া হয় সংলগ্ন স্টেশনও। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য পুলিশের উপ-কমিশনার ক্যাথরিন বার্ন বলেন, ‘আমরা আরও তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছি।’
নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য পুলিশের কমিশনার অ্যান্ড্রু সাইপিয়ন বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করতে পারি যে, মার্টিন প্লেস এলাকায় ওই ভবনের ভেতরে জিম্মির ঘটনাকে সন্ত্রাসী ঘটনা হিসেবে এখন পর্যন্ত বিবেচনা করা হচ্ছে না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান চাই। এ জন্য সবকিছুই করা হবে।’
তিনি বলেন, মার্টিন প্লেসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি নগরীর অন্য এলাকায় এ ধরনের আরও ঘটনার খবরের গুজব নাকচ করে দেন।
লিন্ডট কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্যাফের ভেতরে অন্তত ১০ কর্মী ও ৩০ ক্রেতা ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফেসবুকে বিবৃতিতে কোম্পানি জানায়, গুরুতর এ ঘটনা গভীর উদ্বেগজনক।
এর আগে টেলিভিশন ফুটেজে দেখা যায়, ক্যাফের ভেতরে জানালার সামনে কমপক্ষে তিন ব্যক্তি হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা ক্যাফের কর্মী বলে ধারণা করা হয়। তাদের কালো রঙের একটি পতাকা ধরে রাখতে বাধ্য করা হয়। ওই পতাকার মধ্যে সাদা হরফে আরবি লেখা ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চান বন্দুকধারী : গণমাধ্যমের ফুটেজে জিম্মিদের হাতে আরবি লেখা যে সাদা-কালো ইসলামিক পতাকা দেখা গেছে তা জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) কিংবা আল কায়দার বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অস্ত্রধারী ব্যক্তিটি ইসলামিক স্টেটের পতাকা উঁচিয়ে নিজেকে আইএস সদস্য দাবি করেছে এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনারও দাবি জানান বলে জানিয়েছে সিনহুয়া বার্তা সংস্থা।
বেলজিয়ামেও জিম্মি সংকট : সিডনির পর বন্দুকধারীদের হাতে জিম্মি আটকের ঘটনা বেলজিয়ামেও ঘটেছে। সোমবার সকালে চার বন্দুকধারী বেলজিয়ামের ঘেন্ট শহরের একটি ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে। এই নিয়ে শহরজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.