একমঞ্চে জনসভা প্রমাণ করে বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি ও জামায়াতকে পাকিস্তানের দালাল আখ্যায়িত করে তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, দরকার হলে বুকের রক্ত দিয়ে দেব। তবু লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত এ পতাকা নিয়ে কোনো শকুনিকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। রাজধানীর খামারবাড়ীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজয়ের মাসে খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে একমঞ্চে জনসভা করে প্রমাণ করেছেন বিএনপি স্বাধীনতার পক্ষের দল নয়। আর উনি যে আন্দোলন করতে চান তাও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার আন্দোলন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২০০৯ সালে সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
তিনি বলেন, জামায়াত-বিএনপি হত্যাকারী বিডিআর জওয়ানদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। আসামিদের পক্ষে বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা মামলায় লড়েছে। প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জড়িত না থাকলে তারা আসামিদের পক্ষে কেন আইনজীবী ছিল? কেন তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করল? এতজন করে আইনজীবী আসামিরা পেল কোথায়! এত টাকা পেল কোথায়?
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের দিন উনি ক্যান্টনমেন্ট থেকে হঠাৎ আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেলেন। তখন তার প্রটোকল ছিল। কাউকে কিছু জানাননি। দেড় মাস তিনি ক্যান্টনমেন্টের বাসায় যাননি কেন? উনি ছিলেন কোথায়? এ প্রশ্নের জবাব দিক উনি। আজকে তিনি আমাদের দোষ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সবাই পিলখানায় ছুটে গিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া কেন যাননি। বিচারেও তিনি কোনো সহযোগিতা করেননি। উল্টো আসামিদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এদেশে হত্যা-ক্যু সব বিএনপি-জামায়াত করেছে। আবার খুনিদের রক্ষাও করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষেও তারা। তারা খুনিদের পক্ষেই থাকে। একাত্তরে যে কায়দায় মানুষ হত্যা হয়েছে ৫ জানুয়ারির আগেও ঠিক সেভাবেই মানুষ হত্যা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে মানুষ হত্যা করা। সংখ্যালঘু নির্যাতন করা, খুনের রাজত্ব কায়েম করে বাংলাদেশকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করা। রক্ত নিয়ে খেলা এটাই তাদের চরিত্র।
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ করেনি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ করেনি, উনি (খালেদা জিয়া) করেছেন! তখন তো বিএনপির জন্মই হয়নি, তারা থাকে কীভাবে আমি জানি না! এ প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগের দিন উনি কাদের নিয়ে বক্তৃতা করলেন! আলবদর, রাজাকারদের নিয়ে উনি কীভাবে বক্তৃতা দিলেন? কারা ছিল ওই মঞ্চে? আলবদর আর রাজাকাররা। কাদের ছবি ছিল ওই বেলুনে?
যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে তার সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আলবদর রাজাকারদের বিচার হবে। শকুনের দোয়ায় গরু মরে না। তাহলে দেশে আর গরু থাকত না। ওনার মতো শকুন এখনও বাংলাদেশে আছে। দেশে তো শকুন পাওয়া যায় না। দেশে আর শকুন নেই। শুধু একটি শকুনি আছে। জিয়াউর রহমানের আমলে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান শাহ আজিজ ও গোলাম আযমকে ফিরিয়ে আনে। যেই গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়া হয়েছিল। মার্শাল ল অর্ডিন্যান্স দিয়ে সংবিধান সংশোধন করে তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয় জিয়াউর রহমান।
জিয়াউর রহমানের নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা অবৈধ ছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সায়েম সাহেবকে হটিয়ে দিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। পরে মার্শাল ল অর্ডিন্যান্স দিয়ে এই রাজাকারদের বিচার বন্ধ করেছিল জিয়াউর রহমান। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে কাজ করতে চেয়েছিল, তাই যেন শুরু করে জিয়াউর রহমান।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টিকে নিয়ে নির্বাচন করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) কর্নেল রশীদ ও হুদাকে নিয়ে ইলেকশন করেন। কর্নেল রশীদকে বিরোধী দলের আসনে বসান। এরপর ক্ষমতায় গিয়ে মুজাহিদ (আলী আহসান মুজাহিদ) ও নিজামীকে (মতিউর রহমান নিজামী) মন্ত্রী বানান। বাংলাদেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া আর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করাই বিএনপি আর জামায়াতের লক্ষ্য ছিল।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূর, শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দিন নাছিম, সুজিত রায় নন্দী, এসএম কামাল হোসেন প্রমুখ।
নুজহাত চৌধুরীর বক্তব্যের সময় বেদনাবিধুর হয়ে ওঠে সভাস্থল। উপস্থিত সবাই তার বক্তব্য শুনে চোখের জল ফেলেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বার বার চোখ মুছতে থাকেন।

No comments

Powered by Blogger.