ফার্গুসনের ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে by ইব্রাহীম চৌধুরী

(ফার্গুসনের বিক্ষোভ নিউইয়র্কসহ বড় বড় নগরে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজপথ কার্যত বিক্ষোভকারীদের দখলে। ছবি: রয়টার্স) কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউন হত্যা মামলায় গ্রান্ড জুরির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসন শহরতলির বিক্ষোভ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য নগরেও ছড়িয়ে পড়েছে।
ফার্গুসনের বিক্ষোভ সহিংস হলেও অন্যান্য নগরের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিন নিউইয়র্কসহ বড় বড় নগরের রাজপথ কার্যত বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে যায়।
ফার্গুসনে পুলিশের গাড়িতে আবার হামলা হয়েছে। তবে লুটপাট ও অন্যান্য সহিংসতা কিছুটা কমেছে। সহিংস বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে শহরতলি ও এর আশপাশে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। গতকাল রাতে ফার্গুসনে ৬১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সহিংসতা বন্ধে গতকাল ফার্গুসনের কাছে ন্যাশনাল গার্ডের দুই হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক শ সদস্য আছেন ফাগু‌র্সনে।
ফার্গুসনে ৯ আগস্ট পুলিশের শ্বেতাঙ্গ সদস্য ড্যারেন উইলসনের গুলিতে নিহত হন নিরস্ত্র ব্রাউন। ঘটনার প্রতিবাদে তখন থেকেই বিক্ষোভ চলছে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে।
এ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের সদস্য উইলসনকে অভিযুক্ত করা হবে কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছিল স্থানীয় সেন্ট লুইস কাউন্টির গ্র্যান্ড জুরির ওপর। গত সোমবার গ্র্যান্ড জুরি তাঁদের সিদ্ধান্তে জানান, উইলসন আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছেন। তাই উইলসনকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
গ্র্যান্ড জুরির এই সিদ্ধান্ত আসার পর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে ফার্গুসন। বৈষম্য ও বিচারব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার অভিযোগ তুলে মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে যোগ দিয়েছেন নাগরিক অধিকার নিয়ে সক্রিয় কর্মী-সংগঠকেরা।
পুলিশি নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে নানা লেখা ব্যানার-ফেস্টুন বহন করতে দেখা গেছে এসব বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রতিবাদকারীদের। ব্রাউন হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে স্লোগান দেওয়া হয়।
গতকাল রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফার্গুসনে বিক্ষোভকারীদের জটলা বাড়তে থাকে। আগের দিনের চেয়ে গতকাল ভাঙচুর কম হয়েছে। তবে উত্তেজিত জনতা আবারও পুলিশের গাড়িতে হামলা করেছে। ক্ষুব্ধ জনতাকে দমনে পুলিশ আক্রমণাত্মক হয়নি।
নিউইয়র্ক থেকে সিয়াটল পর্যন্ত অনেকাংশেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে।
নিউইয়র্কের ইউনিয়ন স্কয়ার থেকে টাইমস্কয়ার হয়ে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে দিতে রাজপথ প্রদক্ষিণ করেন।
রাতের ম্যানহাটন কার্যত বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে যায়। সেখানে উত্তেজনা থাকলেও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।
বোস্টন, হিউস্টন, ফ্লোরিডা, ফিলাডেলফিয়া, নাশভিল, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলস, ডেট্রয়েট, সিনসিনাটিসহ অন্তত ৭০টি নগরকেন্দ্রে টানা প্রতিবাদ-সমাবেশ হয়েছে। এসব প্রতিবাদ-সমাবেশে কৃষ্ণাঙ্গ ছাড়াও নাগরিক অধিকার নিয়ে সক্রিয় সংগঠকদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক।
প্রতিবাদ সমাবেশের সময় নাগরিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে।
ব্রাউনের হত্যাকারী পুলিশ কর্মকর্তা উইলসন গতকাল প্রথমবার গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এবিসি নিউজের কাছে তিনি দাবি করেন, ব্রাউনের হামলার মুখে আত্মরক্ষার্থে গুলি করা ছাড়া তাঁর কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না।
ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গতকাল শিকাগোতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিক্ষোভের নামে যারা লুটপাট ও ভাঙচুর করছে, তাদের প্রতি কোনো সমবেদনা নেই। এ ধরনের কাজ যারা করেছে, তারা অপরাধী। তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
ওবামা বলেন, অনেকেই মনে করছেন, তাঁদের প্রতি ন্যায়সংগত আচরণ করা হচ্ছে না। তাঁদের হতাশা নিরসনের জন্য সঠিক সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিহত ব্রাউনের পরিবার থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গ্র্যান্ড জুরির সিদ্ধান্ত দুঃখজনক। তবে বিক্ষোভকারীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পরিবারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.