শাবির ঘটনায় দায়ী আওয়ামী লীগের দু’নেতা -ছাত্রলীগ সভাপতির খোলা চিঠি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার জন্য দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে দায়ী করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, সিলেটের ঘটনায় কেন্দ্রীয় এক নেতা ও সিলেটের এক আওয়ামী লীগ নেতা দোষী। তাদের মদতেই উত্তম ও অঞ্জনরা সেদিন গুলিবর্ষণ করে। পার্থ নিহত সুমন দাসকে ‘বহিরাগত সন্ত্রাসী’ বলেও দাবি করেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ করার ও সভাপতি হওয়ার কারণে বর্তমানে আমি ক্লাস-পরীক্ষা দিতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী মহল আমাকেও হত্যার উদ্দেশ্যে তৎপর হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদককে গুরুতর আহত করার অপরাধে উত্তম দাসকে ২০০৮ সালে দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবুও তার সন্ত্রাসী কাজকর্ম থেমে থাকেনি। তারপরও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একটি মহল বহিষ্কৃত উত্তম দাসকে সভাপতি করার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তার গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ছাত্রলীগের দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পণ করে। কমিটিতে পদ না পাওয়ার রেশ ধরে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক শামসুজ্জামান চৌধুরী সুমনকে ৮ই মে, ২০১৩ কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়। শামসুজ্জামান এখনও পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন-যাপন করছেন। এ ঘটনায় উত্তম দাসকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আজীবন বহিষ্কার এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করলে তার রেশ ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত সাবেক আহবায়ককে হাসপাতালে দেখতে যান। ফেরার পথে উত্তম দাস ও তার সহযোগীরা কুপিয়ে গুরুতর আহত করলে তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার সিএমএইচ-এ নিয়ে এসে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ইমরান খান বর্তমানে পঙ্গুত্ব্ব নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছে। পার্থ বলেন, আওয়ামী লীগের এ মহলটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বর্তমান কমিটিকে দিয়ে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়ার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগের এ মহলটি বর্তমান কমিটিকে অচল করার জন্য নানা ধরনের অপকৌশল করে চলছে। বহিষ্কৃত উত্তম দাস হত্যা প্রচেষ্টা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কারণে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নীরব ভূমিকা পালন করে। উত্তম দাস ও তার সহযোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে স্থানীয় বহিরাগতদের টাকার বিনিময় হলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশে বাধা সৃষ্টি করে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ওই মহলের সহযোগিতার কারণে উত্তম দাস ও তার তার সন্ত্রাসীরা বর্তমান কমিটির নেতাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে এবং ক্যাম্পাসে ছিনতাই-চুরি, রাহাজানির রাজত্ব কায়েম করছে। সংঘর্ষের ঘটনা উল্লেখ করে পার্থ বলেন, কমিটির নেতারা তাদের শিক্ষার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য গত ২০শে নভেম্বর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে আগে থেকে প্রস্তুত থাকা উত্তম, অঞ্জন ও তাদের সন্ত্রাসীরা সিলেট পলিটেকনিক এবং সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগ নামধারী ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং স্থানীয় বহিরাগত সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিলেটের এক নেতা এবং স্থানীয় মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার প্রত্যক্ষ মদতে আমাদের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। বাধা দিলে আমাদের ওপর তারা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এতে আমাদের ৪ জন গুলিবিদ্ধ এবং তাদের গুলিতেই তাদের একজন বহিরাগত সন্ত্রাসী নিহত হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কোন বহিরাগত সন্ত্রাসীর আস্তানা নয়। কিভাবে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালায়? শিক্ষা-শান্তি-প্রগতি ছাত্রলীগের মূলনীতি যারা মানে না তারা কখনও ছাত্রলীগের কেউ হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.