লাশ তুলে ফের ময়নাতদন্তের নির্দেশ

যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা খান টিপু সুলতানের পুত্রবধূ ডা. শামারুখ মাহজাবিন সুমির লাশ উত্তোলন করে আবারও ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিকাশ কুমার সাহা এ আদেশ দেন।
যশোর জেলা প্রশাসককে এ আদেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা সিএমএম আদালতে একটি প্রতিবেদন দেয়ার জন্যও জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশে সিভিল সার্জনসহ মোট তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে। ওই কমিটির নেতৃত্বেই যশোরের কারবালা কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করা হবে।
গত ১৩ নভেম্বর ডা. শামারুখের মৃতদেহ নিয়ে যশোরের কারবালা কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার বাবা গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম লাশ পুনঃময়নাতদন্তের আবেদন করেন।
শামারুখ মারা যাওয়ার ১০ দিন পরে ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান হাবিবুজ্জমান চৌধুরী শামারুখের ময়নাতদন্ত করেছিলেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে একে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করা হয়। নিহতের ভাই মো. শরীফ বাবু বলেন, আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। টিপু সুলতান ও তার পরিবারের লোকজন ঘটনাটি সুপরিকল্পিতভাবে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন। আমার বোনকে বাম হাত দিয়ে হত্যা করা হয়, তিন আঙুলের দাগ রয়েছে। তার ডানপাশে দুইটি নখের নিখুঁত দাগ রয়েছে। বামপাশে বৃদ্ধাঙুলের নখের দাগ রয়েছে। বাম হাতে ধারালো অস্ত্রের দাগ রয়েছে, জিহ্বা ভেতরে ছিল। আত্মহত্যা হলে জিহ্বা বের হয়ে আসত। চোখ স্বাভাবিক ছিল। আত্মহত্যা হলে চোখ উল্টে যাওয়ার কথা। বাথরুমের ভেন্টিলেটরে আত্মহত্যা করার কোনো চিহ্ন নেই। শ্যামার উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। তার বাথরুমের ভেন্টিলেটরের উচ্চতা ৫ ফুট। শ্যামাকে হত্যা করার পর টিপু সুলতানরা সবাই মিলে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। ১৩ নভেম্বর মারা যাওয়া শামারুখের লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ২৩ নভেম্বর বিকালে ধানমণ্ডি থানা পুলিশ হাতে পায়।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চিকিৎসক শামারুখ আত্মহত্যা করেছেন।
নিহতের বাবা নুরুল ইসলাম এই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, মেরে ফেলা হতে পারে এমন আশংকার কথা শামারুখ তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে বলেছিল।
সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান ও ঢাকা হলি ফ্যামিলির গাইনি চিকিৎসক ডা. জেসমিন আরা দম্পতির ছেলে হুমায়ুন সুলতান সাদাফের স্ত্রী ছিলেন শামারুখ মাহজাবিন সুমি। ১৩ নভেম্বর রাজধানীর ধানমণ্ডির ৬ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসা থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই রাতেই টিপু সুলতান, জেসমিন আরা ও হুমায়ুন সুলতানকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের পরই গ্রেফতার করা হয় সাদাফকে। খান টিপু সুলতান ও তার স্ত্রী পালিয়ে যান। পরে তারা হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের আগাম জামিন পান। এ অনুযায়ী আগামী ১৩ ডিসেম্বর জামিনের মেয়াদ শেষ হবে।
প্রসঙ্গত, শামারুখ মাহজাবিন সুমি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবম ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন। গত বছর তিনি একই কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন। দেড় বছর আগে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে ধানমণ্ডির ৬ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার ভাড়া বাসায় শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতেন।

No comments

Powered by Blogger.