অপেক্ষায় তৃতীয় রাজনৈতিক জোট by কাজী সুমন

প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। প্রচারণা চালানো হচ্ছে দেশব্যাপী। সাংগঠনিক প্রক্রিয়া গোছানোর পাশাপাশি জনসমর্থন গড়ছে তৃতীয় রাজনৈতিক জোট। সংবিধানপ্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে শিগগিরই আত্মপ্রকাশ ঘটছে নতুন এই জোটের। রাজধানীতে বড় সম্মেলনের মাধ্যমে জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। তবে জোটের নাম কি হবে- তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। সম্মেলনের আগে নাম চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন জোটের উদ্যোক্তারা। ৫টি রাজনৈতিক দল এ জোটে অংশ নিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। যোগাযোগের অংশ হিসেবে এসব দলের কর্মসূচিতে অন্য দলের নেতারা অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক একজন নেতার নেতৃত্বাধীণ নাগরিক জোটও অংশ নিচ্ছে তৃতীয় রাজনৈতিক জোটে। ইতিমধ্যে তারা আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। জোটের ১১ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করে জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। ওই বৈঠকের পর থেকে মাঠে কাজ শুরু করেছেন দলগুলো। সরকারের কর্মকাণ্ডের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন দলের নেতারা। সূত্র জানিয়েছে, ২৮শে নভেম্বর বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে নাগরিক ঐক্য। ওই কর্মসূচিতে অংশ নেবে জোটের দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। এছাড়া আগামী ২রা ডিসেম্বর রংপুরে সমাবেশ করবে নাগরিক ঐক্য। ওই সমাবেশেও জোটের শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন। এছাড়া আগামী ২৬শে ডিসেম্বর রাজধানীতে বিশাল আয়োজনে একটি বিজয় র‌্যালি করার চিন্তাভাবনা করছেন তৃতীয় রাজনৈতিক জোটের নেতারা। এছাড়া ডিসেম্বরজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময়সহ সভা-সমাবেশ ও কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশের রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা হবে। তৃতীয় রাজনৈতিক জোটের পক্ষে জনমত বাড়াতে রাজধানীর আশপাশসহ বিভিন্ন এলাকায় পথসভা-সমাবেশ করা হবে। সুস্থ ধারার রাজনীতি এবং গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ধারা সুপ্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ধারায় দেশ পরিচালনার লক্ষ্যে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে এসব পথসভা ও সমাবেশ থেকে। এসব কর্মসূচিতে নতুন জোটের ১১ দফা খসড়ার ব্যাপারে জনগণের সম্মতি নেয়া হবে।
সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯শে আগস্ট গণফোরামের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ‘গণতন্ত্র ও দেশ বাঁচাতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে ১১ দফা প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন। এর মধ্যে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংলাপের মাধ্যমে ঐক্য না হলে গণভোটের আয়োজন, অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও স্বাধীন-শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত এবং সংবিধান সংশোধন করে তা যুগোপযোগী করার দাবি ছিল। এরপর তৃতীয় রাজনৈতিক জোটের গঠনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া নিয়ে গত ৩রা সেপ্টেম্বর ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলের কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে সিপিবি, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতেৃত্ব নাগরিক ঐক্য, খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে বাসদ ওই জোটে যোগ দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুরেরও যোগ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। ওই বৈঠকে বিকল্প শক্তি সমাবেশের প্রাথমিক খসড়া কর্মসূচি তৈরি করার জন্য ৫ সদস্যের একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। এ সাব-কমিটি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশাসহ সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।
গত ৫ই নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে জেএসডির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, খালেকুজ্জামানসহ সব নেতারাই উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেনকে শিগগিরই মাঠে নামার আহ্বান জানান জোটের নেতারা। এ ব্যাপারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, নতুন জোট গড়ার ব্যাপারে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তবে এখনও জোটে যাওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ভবিষ্যতে জাতীয় ঐক্য হলে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গঠন সম্পর্কে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,  আমাদের জোট গঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। জোটের প্রতিটি দলই নিজেদের জায়গা থেকে কাজ করছি।

No comments

Powered by Blogger.