ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ফার্গুসন

মিজৌরির ফার্গুসনে গতকাল বিক্ষোভকারীদের দেওয়া আগুনে
দাউ দাউ করে জ্বলছে একটি কারখানা। ছবি: এএফপি
কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউন হত্যার বিচারকে কেন্দ্র করে আবার অগ্নিগর্ভ যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসন শহরতলি। ব্রাউনকে গুলি করে হত্যা করা পুলিশের শ্বেতাঙ্গ কর্মী ড্যারেন উইলসনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত না করার সিদ্ধান্তে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয় স্থানীয় সময় সোমবার রাতে। ভাঙচুর ও লুটপাটের পাশাপাশি পুলিশের গাড়ি ও বেশ কয়েকটি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিও ছুড়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউন তিন মাস আগে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। নিরস্ত্র ব্রাউনকে বিনা প্রয়োজনে গুলি করার অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী তখনই এ নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করে। ব্রাউন বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন, এমন অভিযোগ তোলে বিক্ষোভকারীরা। ওই বিক্ষোভ কার্যত পুরো যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সদস্য ড্যারেন উইলসনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছিল স্থানীয় সেন্ট লুইস কাউন্টির গ্র্যান্ড জুরির ওপর। বিভিন্ন দেশের আইনব্যবস্থায় প্রচলিত গ্র্যান্ড জুরি হচ্ছে বিশিষ্ট কিছু নাগরিকের সমন্বয়ে গঠিত আইনি সংস্থা, যারা অপরাধের ঘটনা বিশদ খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত দেয় কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে কি না। তাদের সিদ্ধান্তের পর সংশ্লিষ্ট মামলার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। গ্র্যান্ড জুরি উইলসনের বিরুদ্ধে ২৫ দিনে ৬০ জনের সাক্ষ্য-প্রমাণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এরপর গত সোমবার সন্ধ্যায় দেওয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, উইলসন আত্মরক্ষার্থে গুলি করার ফলে ব্রাউনের মৃত্যু ঘটেছে। তার মানে, উইলসনকে অভিযুক্ত করা হলো না।
পুলিশ বলেছে, ঘটনার দিন মাইকেল ব্রাউন স্থানীয় এক দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে দাম না দিয়ে বেরিয়ে যান। তখন ডাক পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তাদের দাবি, ব্রাউন নিরস্ত্র থাকলেও পুলিশের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ করেছিলেন। কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত এলাকা হলেও ফার্গুসনের পুলিশ বাহিনীতে শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিদের ব্যাপক প্রাধান্য রয়েছে। ব্রাউনের মৃত্যুর পরদিন থেকে তিন মাস ধরে ফার্গুসন শহরে পালা করে টানা বিক্ষোভ চলে। গ্র্যান্ড জুরি এ মাসেই ব্রাউনকে গুলি করার পুলিশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে, এমন সম্ভাবনা থেকে গত কয়েক দিনে তা জোরাল হয়। সিদ্ধান্ত জানার জন্য ফার্গুসন শহরে সোমবার দুপুর থেকেই লোকজন জমায়েত হতে থাকে। রাতে সিদ্ধান্ত আসার পরপরই তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ লোকজনের পাশাপাশি ছিলেন নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা প্রতিবাদ করে জানান, জুরিবোর্ডের এ সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা আবারও প্রকাশ পেল। বিক্ষোভকারীদের একাংশ সহিংসভাবে প্রতিবাদ শুরু করে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। ক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীরা সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত অন্তত ১২টি ভবনে আগুন দিয়েছে। অনেক দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা পুলিশের কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ অভিযোগ করেছে, তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলের পাশাপাশি অন্তত দেড় শ গুলিও ছুড়েছে। তবে পুলিশ কোনো গুলি ছোড়েনি। তারা বিপুলসংখ্যক কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ধোঁয়ার বোমা ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। ফার্গুসনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় নগরেও সোমবার রাতেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ার থেকে শুরু করে শিকাগো, ডেট্রয়েটসহ কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত অনেক এলাকা এবং ক্যালিফোর্নিয়া ও সিয়াটলের মতো দূর-দূরান্তেও বিক্ষোভ-সমাবেশ হচ্ছে। তবে এসব এলাকার বিক্ষোভ-সমাবেশগুলো শান্তিপূর্ণ ছিল। সব মিলিয়ে এ বিক্ষোভ নিয়ে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে সতর্কাবস্থা বিরাজ করছে। বড় নগরগুলোয় পুলিশের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। ওবামার শান্ত থাকার আহ্বান: প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। জুরির মত ঘোষণার পর পর হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ওবামা বিক্ষোভকারীদের আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। নিহত ব্রাউনের পরিবার থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গ্র্যান্ড জুরির সিদ্ধান্ত দুঃখজনক। তবে বিক্ষোভকারীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য আহ্বান জানায় তাঁর পরিবার।

No comments

Powered by Blogger.