‘ওই রাতের ব্যাপারটি অন্যরকম ছিল’

অভিনেত্রী মিতা নূরের রহস্যজক মৃত্যু নিয়ে নানা তথ্য প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। মিতা’র লাশের ময়নাতদন্তে আঘাতের
আলামত পাওয়া গেলেও অভিযোগ করেননি মিতা’র পরিবারের কেউ-ই। রহস্যজনক কারণে সুষ্ঠু তদন্তের আবেদন করা হয়নি। দুই পরিবারের আপস-রফার তথ্য পাওয়া গেছে। এ প্রেক্ষিতে মিতা নূরের বড় ছেলে শেহজাদ নূর প্রিয় লিখেছেন, আমার দেখা সবচেয়ে সংবেদনশীল ও বুদ্ধিমতী নারী হচ্ছেন আমার মা। তিনি সচেতন থাকলে এ ধরনের কাজ করতেন না। অনেক সংবাদ মাধ্যম ভুলভাবে তাকে উপস্থাপন করেছে। কিন্তু আমি সবাইকে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে বলতে চাই, তার একটি সুখী ও অসাধারণ পরিবার ছিল। মতানৈক্য পৃথিবীর প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র পরিবারেই থাকে, তবে এখানে তেমন সিরিয়াস কিছু ছিল না। আমার মা’র হয়তো অনেক বন্ধুই ছিলেন, তবে তার সবচেয়ে ভাল বন্ধু ছিলাম আমি। হয়তো আমি কখনওই সেটি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করিনি। হয়তো আমি কখনওই এটি বুঝতে পারিনি যে, তিনি আমাকে কতটা ভালবাসতেন। তার মৃত্যুর আগের শেষ এক মাস মা অনেকগুলো ব্যাপারে বিষাদগ্রস্ত ছিলেন। যেগুলোর বেশির ভাগই খুব ছোটখাটো বিষয়। তার অনেক মানুষের সঙ্গেই ছোট ছোট মতানৈক্য ছিল, যার মধ্যে আছে আমার বাবা এবং তার বাবা এবং আরও অনেকে। তবে সেগুলো খুবই সাধারণ মতপার্থক্য। তিনি সে সবের ব্যাপারে আমাকে সবই বলেছিলেন এবং আমি তাকে সবসময় বলেছি, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, এখানে দুশ্চিন্তার কিছুই নাই। তবে আমার আরও অন্য কিছু করা উচিত ছিল। কিন্তু তারপর ব্যাপারগুলো আরও খারাপ হতে থাকে এবং তিনি সম্ভবত খুব খারাপ বোধ করেছিলেন। মার যখন খুব খারাপ লাগতো তখন তিনি ঘুমাতেন। অনেক বেশি সময় ঘুমানোর জন্য তিনি ঘুমের ওষুধ খেতেন। তিনি তার জীবনের শেষ দিনও এই একই কাজ করেছিলেন। তবে ওই রাতের ব্যাপারটি অন্যরকম ছিল। ওই ঘুমের বড়িগুলো তার সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে  ফেলেছিল। আমি জানি, এটা তিনি নিজে থেকে করেননি। কিন্তু তার বিষাদগ্রস্ততা আর ওই ঘুমের বড়িগুলোর প্রতিক্রিয়া থেকেই এটি হয়েছিল। তা না হলে পৃথিবীর সব ছাড়লেও তিনি কখনও আমাকে আর ভাইকে একা ফেলে যেতেন না। তিনি সবসময়ই  কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমার সঙ্গে পরামর্শ করতেন।  এমনকি এটি সামান্য একটি ব্যাপার হলেও। তিনি যেটি করেছেন এটি তার সিদ্ধান্ত ছিল না। আমি জানি তিনি আমাদের সবাইকে অনেক ভালবাসতেন। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। আমি তাকে ভালবাসতাম এবং সবসময় বাসবো। তিনি আমার চিন্তা, স্বপ্ন, জীবন, ভাবনা সবকিছুকে সম্মান করতেন এমনকি নিজের চেয়ে বেশি। আমি যদি আমার জীবনে কোনদিন সফল হই, তার পেছনের পুরো কৃতিত্বই আমার মায়ের। আমার মা এখনও আমার মধ্যে আছেন। তিনি আমাকে সবসময়ই বলবেন কি করবো আর কি করবো না।
যা-ই হোক বেশ কিছু টেলিভিশন এবং পত্রিকা যা দাবি করেছে- তা সত্য নয়। আমার মা দুর্বলচিত্তের নারী ছিলেন না। তিনি দৃঢ়চেতা, স্মার্ট, সংবেদনশীল এবং চমৎকার মানুষ ছিলেন। যা হয়েছে তিনি তা চাননি। বরং যেটি হয়েছে তা হলো, তখন তিনি সচেতন ছিলেন না। হয়তো এর বেশির ভাগই আমার ভুল কারণ, আমি আমার মাকে বুঝতে পারিনি। আমার মনে হয়, আমি ভাল ছেলে নই। কিন্তু আমি এটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, মা যা করেছেন তিনি তার বোধ-বুদ্ধিতে করেননি। এখন আমি মাকে যেটি বলতে পারি, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি মা। শান্তিতে থাকো। যতদিন  তোমার সঙ্গে আমার দেখা না হবে, আমি প্রতিদিন তোমাকে  দেখতে যাবো।’ নিউজ মিডিয়াগুলো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ভুল জিনিস লেখা বন্ধ করতে পারলে আমি সেটা উৎসাহিত করবো। তাদের গল্পগুলোর কারণে আমি এইসব লিখতে বাধ্য হয়েছি। আমি আশা করি,  সত্য একদিন উন্মোচিত হবেই।

আমার মায়ের  নিষ্কলঙ্ক খ্যাতি এবং নিষ্কলুষ চরিত্র। সবাই জানেন, তিনি আমার, আমার ভাইয়ের এবং বাবার সঙ্গে কতটা সুখী ছিলেন। তাদের দাম্পত্য জীবন ২৪ বছরের এবং মাত্র সপ্তাহ দুই আগে আমরা তাদের ২৪তম বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করেছি। মা এমন একজন মানুষ যাকে আমার সারা জীবন খুঁজে ফিরতে হবে। তার শিক্ষা, উপদেশ, চিন্তা আমাকে এবং আমার ভাইকে সারা জীবন পথপ্রদর্শন করার জন্য যথেষ্ট। আমরা দু’জন অবশ্যই একদিন তার মুখ উঁচু করবো, ইনশাল্লাহ...। আমি তোমাকে ভালবাসি মা।

No comments

Powered by Blogger.