অযোধ্যাকে খুঁচিয়ে তুলল বিজেপি by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

নরেন্দ্র মোদিকে সামনে রেখে হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করে বিজেপি যে দিল্লি দখলের যুদ্ধে নামছে, গতকাল শনিবার তা স্পষ্ট হয়ে গেল। মোদি যাঁকে উত্তর প্রদেশের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন, গুজরাটের সেই বিতর্কিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অযোধ্যায় গিয়ে ‘রাম জন্মভূমিতে’ রামমন্দির স্থাপনের অঙ্গীকার করে এলেন। অযোধ্যায় অমিত শাহ বলেন, রামের জন্মস্থানে ভব্য রামমন্দির তৈরি করাটা তাঁদের কর্তব্য। মোদিকে দলের প্রচার কমিটির প্রধান করার সময় লালকৃষ্ণ আদভানিসহ যাঁরা আপত্তি জানিয়েছিলেন, তাঁদের আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত করলেন অমিত শাহ। এই মহলের অভিমত ছিল, মোদিকে ‘দলের মুখ’ করলে ফের হিন্দুত্ব মাথাচাড়া দেবে। দেশ বিভাজিত হয়ে যাবে ধর্মনিরপেক্ষ ও সাম্প্রদায়িক এই দুই শিবিরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের আগে জোট ধরে রাখা ও ভোটের পর নতুন সঙ্গী পেতে বিজেপির অসুবিধা হবে, যেহেতু মোদির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। অমিত শাহের সফর ও বক্তব্যের পর পুরোনো মন্দির-মসজিদ বিতর্ক মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কংগ্রেস দাবি জানিয়েছে, তাঁকে অবিলম্বে উত্তর প্রদেশ থেকে বের করে দেওয়া হোক। বিজেপি ও সংঘ পরিবার নরেন্দ্র মোদিকে দলের মুখপাত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, কট্টরপন্থী এমন একটা ভাবমূর্তি তাঁর গড়ে উঠেছে, দ্বিতীয়ত, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি উন্নয়নের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ, সংঘ পরিবারের গড়ে তোলা হিন্দুত্বকে তিনি নতুন একটা মোড়কে পেশ করতে সফল। কাজেই, একদিকে হিন্দুত্ব, অন্যদিকে উন্নয়নকে হাতিয়ার করে মোদি দলকে ভোট বৈতরণি পার করাতে পারবেন বলে বিজেপির বিশ্বাস। এই উদ্দেশ্যে মোদিও অযোধ্যা থেকে প্রচার অভিযান শুরু করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু আদভানির আপত্তিতে সেই পরিকল্পনা বাতিল করেন। কিন্তু নিজে না গেলেও অমিত শাহকে অযোধ্যা পাঠিয়ে মন্দির বিতর্ককেই খুঁচিয়ে তুললেন। সেই সঙ্গে শুরু হয়ে গেল ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বনাম ‘সাম্প্রদায়িক’ শিবিরের বাগ্যুদ্ধ। বিজেপির বিরোধিতায় মুখর হয়েছে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, জনতা দলসহ (সংযুক্ত) বামপন্থীরাও। মোদি কিন্তু নিজের পরিকল্পনায় অটল। শনিবার থেকেই জাতীয় স্তরে প্রচার শুরুর ক্ষেত্রে অযোধ্যার পাশাপাশি বেছে নিলেন বিহারকে। গুজরাটের রাজধানী গান্ধীনগরে বসে সন্ধ্যায় তিনি টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে বিহারের অন্তত দেড় হাজার দলীয় নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথাবার্তা বলেন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.