গ্রামের মানুষ জানে সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, 'গ্রামের মানুষ জানে এ সরকারের আমলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'গাজীপুরের গার্মেন্ট খাতের উন্নয়নে জাইকা থেকে এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা আসছে। গাজীপুরের জনগণ জানে এত বড় উন্নয়নের টাকা কে মেয়র হলে কার হাতে খরচ করা নিরাপদ হবে।' তিনি আরো বলেন, 'গাজীপুর সিটিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী এম এ মান্নান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর সরকারি সম্পদ তসরুফের ব্যপারটি অস্বীকার করে বলেছেন, যদি আমি সরকারি সম্পদ চুরি করে থাকি তবে আমি কোনো দিন নির্বাচিত হতে পারব না। এর পর থেকে মান্নান পাঁচবার দাঁড়িয়ে একবারও পাস করতে পারেননি। এবার পাস করবেন কি না ভোটাররা বলতে পারবে।'
শুক্রবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের সংবাদ পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো ডিভাইন গ্রুপ নিউজ অ্যান্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিক গোলাম মোর্তজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাহফুজুল্লাহ।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, চারটি সিটি নির্বাচনের পর এখন গাজীপুর সিটির নির্বাচন নিয়ে বড় দুই দলই বেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আজ সেখানে নির্বাচন। আপনারা তো গাজীপুরে বেশ কয়েকবার গেছেন। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রতিক্রিয়া জানতে চাই, কিভাবে এ নির্বাচনটিকে দেখছেন।
জবাবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ দর্শক-শ্রোতাদের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, 'গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন কোনো বিচ্ছন্ন ঘটনা নয়। কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জের মতো একটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সরকার গাজীপুরকে এ জন্য পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন করেছে, যাতে স্থানীয় লোকজন সর্বোচ্চ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পায়।' তিনি বলেন, 'বর্তমানে বাংলাদেশে মিডিয়া এত বেশি শক্তিশালী যে নির্বাচনে কারচুপি বা জাল ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।' তিনি বলেন, ছবিসহ ভোটার লিস্ট আছে। এখন আর একজনের ভোট আরেকজন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।'
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক বলেন, 'গাজীপুর সিটির নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণ কী বা কিভাবে এ নির্বাচনকে দেখছেন?'
জবাবে সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ বলেন, 'প্রধান বিরোধী দল বিএনপি গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে।' তিনি বলেন, 'বিভিন্ন কারণে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে গত চারটি সিটিতে সরকারদলীয় প্রার্থী হেরে যাওয়ায় এ নির্বাচনটি সরকারের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।' তিনি বলেন, 'গাজীপুর সিটির নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের উদ্বেগের কারণ রয়েছে।' এ সময় তিনি কালের কণ্ঠে সম্প্রতি গাজীপুরে একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারের সঙ্গে সরকারদলীয় প্রার্থীর প্রচারণায় অংশগ্রহণ ও মানবজমিন পত্রিকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে সরকারি কর্মকর্তাদের আজমত উল্লার পক্ষে কাজ করার বিষয় উল্লেখ করে বলেন, 'এসব থেকে বোঝা যায় সেখানে নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারছে না। তাই বিএনপি গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেই পারে।' তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশনই বলেছে, এখানকার ৬০ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। যদি তাই হয়, তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে আরো বেশি করে নজরে আনা উচিত ছিল।' এ সময় তিনি বলেন, 'গাজীপুরের নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগ করা যেত।'
এ সময় তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'না, এটা ঠিক না। প্রথমত সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোনো কারণ সৃষ্টি হয়নি। চারটি সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করে যদি বিরোধী দল চারটিতেই জয়ী হতে পারে, এখানে সেনা মোতায়েন করতে হবে কেন?' তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'নির্বাচন কমিশন চাইলে গাজীপুরে সেনা মোতায়েন করতে সরকারের আপত্তি ছিল না।' তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন তো এর আগে কোথাও সেনা মোতায়েনের আবেদন করেনি। করলে সরকার ঠিকই ব্যবস্থা নিত।'
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক বলেন, 'কেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তো নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েনের আবেদন করেছিল। কই সরকার তো সে সময় তাদের সে আবেদন রাখেনি?' জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'না, এটা ঠিক নয়। নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েনের কোনো আবেদন করেনি।'
আলোচনার এ পর্যায়ে অংশ নিয়ে সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ বলেন, 'তোফায়েল ভাই, আপনার হয়তো মনে নেই। সে সময় নির্বাচন কমিশন ঠিকই সেনা মোতায়েনের কথা বলেছিল। কিন্তু সরকার তা শোনেনি।' তিনি বলেন, 'এখন থেকে আর স্থানীয় নির্বাচন নির্দলীয় হওয়া উচিত নয়। কারণ দেখুন, গাজীপুর নির্বাচনে শুধু মার্কা ছাড়া সব কার্যক্রমই হয়েছে রাজনৈতিক দলের ব্যানারে।' তিনি বলেন, 'সরকারি ও বিরোধী দলের হেবিওয়েট নেতারা গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা চষে বেড়িয়েছেন।'
আলোচনার এ পর্যায়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'আজমত উল্লা তিন তিনবার টঙ্গী পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র। তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অতীতে জনগণের সেবা করেছেন। আগামীতেও করবেন। তাই আমার মনে হয়, গাজীপুর সিটিতে আজমত উল্লারই নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

No comments

Powered by Blogger.