স্নোডেনকে আশ্রয় দিতে রাজি ভেনিজুয়েলা-নিকারাগুয়া

টেলিফোন ও ইন্টারনেটে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নজরদারির খবর ফাঁস করে হৈচৈ ফেলে দেওয়া এডওয়ার্ড স্নোডেনকে আশ্রয় দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে দেশ ভেনিজুয়েলা ও নিকারাগুয়া।
ধারণা করা হচ্ছে, স্নোডেন ইস্যুতে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট এবো মোরালেসের সঙ্গে ইউরোপের কয়েকটি দেশের অশোভন আচরণের পরিপ্রেক্ষিতেই লাতিন আমেরিকার নেতারা এ অবস্থান নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক কর্মী স্নোডেন এখন রাশিয়ার শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে আছেন। এদিকে বিকল্প ধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট টুইটারে জানায়, স্নোডেন আরো ছয়টি দেশে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় দেশগুলোর নাম গোপন রাখা হয়েছে।
ইন্টারনেট ও টেলিফোনে যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির গোপন কর্মসূচি 'প্রিজম'-এর কথা ফাঁস করে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছেন স্নোডেন (৩০)। তথ্য ফাঁস করার আগেই গত মে মাসের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই থেকে চীনের হংকংয়ে চলে যান তিনি। গত ২৩ জুন সেখান থেকে রাশিয়ায় পৌঁছান। সেই থেকে তিনি মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক ট্রানজিট এলাকায় অবস্থান করছেন। গুপ্তচরবৃত্তি ও গোপন তথ্য চুরির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র স্নোডেনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছে। গত ৩০ জুন স্নোডেন ২১টি দেশের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন। এর মধ্যে কয়েকটি দেশ তাৎক্ষণিকভাবে আবেদন বাতিল করে দেয়।
গত শুক্রবার ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো স্নোডেনকে 'মানবিক বিবেচনায় আশ্রয়' দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ৫ জুলাই ভেনিজুয়েলার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, 'বলিভিয়ার রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হিসেবে আমি মানবিক বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এডওয়ার্ড স্নোডেনকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সাম্রাজ্যবাদী উত্তর আমেরিকার থাবা থেকে বাঁচতে তাঁকে সিমন বলিভার ও হুগো শাভেজের এ দেশে আসার সুযোগ দিতে চাই।'
নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট দানিয়েল ওর্তেগাও স্নোডেনকে আশ্রয় দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। মস্কোয় নিকারাগুয়ার দূতাবাস স্নোডেনের আবেদন পেয়েছে বলেও জানান তিনি। ওর্তেগা বলেন, 'আমরা আশ্রয় চাওয়ার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পরিস্থিতি যদি অনুকূলে থাকে, তাহলে স্নোডেনকে সাদরে গ্রহণ করতে রাজি আছি আমরা।'
মস্কোয় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষে দেশে ফেরার পথে গত মঙ্গলবার রাতে মোরালেসের বিমানকে আকাশপথ ব্যবহার করতে দিতে অস্বীকৃতি জানায় ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন ও পর্তুগাল। স্নোডেন মোরালেসের বিমানে আছেন- এ খবরের ভিত্তিতে তাঁকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জরুরি অবতরণ করানো হয়। বুধবার রাতে বিকল্প পথে দেশে ফেরেন মোরালেস। মস্কোয় কথা প্রসঙ্গে স্নোডেনকে আশ্রয় দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মোরালেস। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ইঙ্গিত দেওয়ার কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের ইশারায় ইউরোপের কয়েকটি দেশ মোরালেসের সঙ্গে শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করে। এর জবাব দিতেই মাদুরো ও ওর্তেগা এ অবস্থান নিয়েছেন। লাতিন নেতারা বলিভিয়ায় গত বৃহস্পতিবার বৈঠক করে 'অপমানজনক' ওই ঘটনার উচিত জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.